ইন্টার্নশিপ

ইন্টার্নশিপ কী, কেন কীভাবে

ভালো একটি প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী কাজের সুযোগ তৈরির মাধ্যম হলো ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম ছবি: সালাহউদ্দিন পলাশ

বদলের একটা হাওয়া বইছে সবখানেই। নিত্যনতুন সব প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্র। স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানে কাঙ্ক্ষিত চাকরি পেতে পুঁথিগত বিদ্যার পাশাপাশি দরকার আরো কিছু এক্সট্রা দক্ষতার। নিজেকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সময়ই যদি ভালো একটা প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ তৈরি হয়, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। আর ভালো একটা প্রতিষ্ঠানে কাজের সেই এক্সট্রা সুযোগটা তৈরির একটা ভালো মাধ্যম হলো ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম। ইন্টার্নশিপ একজন শিক্ষার্থীকে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের অংশ হিসেবে কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের অধীনে কাজ করার সুযোগ প্রদান করে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কর্মক্ষেত্রের বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করে, যা তাদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে সফল হতে সাহায্য করে। পাঠ্যক্রমের অংশ হিসেবে বাধ্যতামূলক না হলেও অনেক শিক্ষার্থীই শিক্ষাজীবনের শেষে ঐচ্ছিকভাবে ইন্টার্নশিপকে বেছে নেয় কর্মক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা অর্জনের উদ্দেশ্যে।

ইন্টার্নশিপের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে একজন শিক্ষার্থীকে তার মূল কর্মজীবন শুরু করার আগে কর্মক্ষেত্রের বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সাহায্য করা। প্রতিষ্ঠানের ধরন অনুযায়ী ইন্টার্নশিপের সময়কাল সাধারণত তিন মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই ইন্টার্নশিপ সময়কালে পারিশ্রমিক হিসেবে শিক্ষার্থীদের শিক্ষানবিশ ভাতা প্রদান করে। 

পেমেন্টের ওপর নির্ভর করে দুই ধরনের ইন্টার্নশিপ হয়। পেইড-ইন্টার্নশিপে ইন্টার্নকে মাসিক বা এককালীন একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ শিক্ষানবিশ ভাতা প্রদান করা হয়। নন-পেইড ইন্টার্নশিপের ক্ষেত্রে কোনো ভাতা প্রদান করা হয় না। আবার কাজের ধরন অনুযায়ী দুই ধরনের ইন্টার্নশিপ হয়ে থাকে। প্রথমটি প্রজেক্ট বেজড ইন্টার্নশিপ ও অন্যটি সাধারণ ইন্টার্নশিপ। কোনো নির্দিষ্ট প্রকল্পের অধীনে কাজের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব ইন্টার্নশিপ প্রদান করে  সেটি হচ্ছে “প্রজেক্ট বেজড ইন্টার্নশিপ। আর প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত ও সাধারণ কাজের জন্য হচ্ছে রেগুলার ইন্টার্নশিপ।

ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী অন্তত তিন মাস একটি প্রতিষ্ঠানের অধীনে কর্মরত থাকে, এর ফলে তারা তাদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে সহজেই মানিয়ে নিতে পারে। এটি তাদের মূল কর্মজীবনের জন্য প্রস্তুত করে এবং তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে, যা সহজেই ব্যবসা, শিক্ষা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়। এটি তাদের পেশাদার নেতৃত্ব, কৌশল ও টিমওয়ার্ক ক্ষমতা উন্নত করে; যা পরবর্তী সময়ে তাদের কর্মজীবনে সাহায্য করতে সহায়ক।

দেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য অনলাইন জব পোর্টাল, লিংকডইন ও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম এবং স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব ওয়েবসাইটে একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর ইন্টার্নশিপের সার্কুলার প্রকাশ করা হয়। আগ্রহী শিক্ষার্থীরা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপের জন্য আবেদন করার সময় সার্কুলারে উল্লেখিত শিক্ষাগত যোগ্যতা বা দক্ষতার সঙ্গে নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও দক্ষতার সামঞ্জস্য আছে কিনা তা ভালোভাবে দেখে আবেদন করা উচিত। ইন্টার্নশিপে ভালো করার জন্য নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার সার্ভিস কাউন্সেলিংগুলোয় অংশ নেওয়া উচিত। সম্ভব হলো শিক্ষক এবং ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞদেরও পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। সিভিটা এমনভাবে তৈরি করা দরকার যাতে শিক্ষাগত যোগ্যতা, ভাষা ও কম্পিউটার-সংক্রান্ত দক্ষতা, পূর্ব কাজের অভিজ্ঞতা এবং বিভিন্ন শিক্ষা কার্যক্রমের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ থাকে। বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং অ্যাপের মাধ্যমে এখন যুগোপযোগী সিভি প্রস্তুত করা যায়। 

এছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানে ইন্টারভিউর সুযোগ পেলে অবশ্যই সেই প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট ভালোভাবে দেখে এবং সেই প্রতিষ্ঠান ও সেক্টর সম্পর্কিত যেকোনো সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে ইন্টারভিউ দিতে যেতে হবে। ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার আগে অবশ্যই নিজ নিজ বিষয়ের পাশাপাশি সিভিতে উল্লেখিত অন্যান্য দক্ষতা ও পূর্ব কাজের অভিজ্ঞতাসংক্রান্ত সম্ভাব্য প্রশ্ন ও উত্তর অনুশীলন করা শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টারভিউতে অংশগ্রহণ করার সময় সঠিক পোশাক, আনুষঙ্গিক ও প্রসাধনী নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই যত্নশীল হতে হবে।

ইন্টার্নশিপের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান দ্বারা নির্বাচিত হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের মনে রাখতে হবে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সুযোগ। সময়ানুবর্তিতা, কাজের প্রতি আন্তরিকতা, পেশাদার আচরণ, বিশ্বস্ততা প্রদর্শন ও সঠিক যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে একজন ইন্টার্ন নিজের প্রতি প্রতিষ্ঠানের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করতে পারে এবং ভবিষ্যতে একই প্রতিষ্ঠানের কর্মী হিসেবে নির্বাচিত হতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সর্বোপরি, ইন্টার্ন হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী তার নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করে, তাই এমন কোনো আচরণ করা যাবে না যাতে তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট হয়।

ইন্টার্নশিপ বাছাই করার ক্ষেত্রে প্রথমেই লক্ষ রাখতে হবে নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতার সঙ্গে ইন্টার্নশিপটি মানানসই কিনা। এছাড়া যেকোনো প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ শুরু করার আগে জেনে নেয়া ভালো যে ইন্টার্নশিপ থেকে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু। যেসব প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যৎ নিয়োগের ক্ষেত্রে ইন্টার্নদের অগ্রাধিকার দেয় অবশ্যই এমন প্রতিষ্ঠানকে বেছে নেয়া উচিত। আজকাল মোটামুটি সব সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক, মোবাইল ফোন অপারেটর, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসসহ বহু 

দেশীয় ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানই নিয়মিত ইন্টার্ন নিয়োগ দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ারবিষয়ক আগ্রহ ও দক্ষতার ভিত্তিতে তাদের প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা উচিত। 

সানজিদা শাহাবউদ্দীন: সিনিয়র ম্যানেজার

অফিস অব ক্যারিয়ার সার্ভিসেস অ্যান্ড অ্যালামনাই রিলেশনস, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন