যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিয়েরা লিয়ন,
সুদান, ইথিওপিয়া, ইয়েমেন, উগান্ডা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশসহ ২৬টি দেশের শিক্ষার্থীদের
বর্তমান গন্তব্য ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। পড়াশোনা করছেন দেড় শতাধিক বিদেশী শিক্ষার্থী।
এখন পর্যন্ত এখানকার মাস্টার অব পাবলিক। হেলথ (এমপিএইচ) ডিগ্রি নিয়েছেন বিশ্বের ৩৫টি
দেশের শিক্ষার্থীরা। আফগানিস্তান, নাইজেরিয়া ও পাকিস্তান থেকে আসা তিন স্নাতক শিক্ষার্থীর
বাংলাদেশ অভিজ্ঞতা কেমন ছিল শুনিয়েছেন তারা-
আফগানিস্তানে
আমার বয়সী অনেক মেয়েই বাংলাদেশের মতো শিক্ষার সুযোগ পায় না
মুজগান পাজওয়াক, আফগানিস্তান
শিক্ষার্থী, বিবিএ
আমার জন্ম আফগানিস্তানের গজনি প্রদেশে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুযোগ গ্রহণ করতেই আমার বাংলাদেশ যাত্রা। যা আমার
কাছে একেবারেই অলৌকিক ছিল। বর্তমানে আমি ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে
চতুর্থ সেমিস্টারে পড়ছি। আফগানিস্তানে আমার বয়সী অনেক মেয়েই আছে যারা বাংলাদেশের মতো
এমন শিক্ষার সুযোগ পায় না। তারা হতাশ ও আশাহত হয়ে জীবনযাপন করছে এবং লাখ লাখ এমন আছে
যারা তাদের স্বপ্ন ত্যাগ করে কষ্টের সঙ্গেই জীবনযাপন করছে। এমন পরিস্থিতিতে আমি যে
জীবন হারিয়েছি বলে মনে হয়েছিল তা পুনরুদ্ধার করতে আমার দেশ ও পরিবারকে ছেড়ে আমি ব্র্যাক
বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি।
আমি জানতাম ব্র্যাক তার একাডেমিক উচ্চ
অবস্থান, আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা এবং বহু সাংস্কৃতিক পরিবেশের জন্য পরিচিত এবং আন্তর্জাতিকভাবে
প্রশংসিত। আমি যখন ব্র্যাকে আমার একাডেমিক যাত্রা শুরু করি তখন লক্ষ করলাম আমার দেশের
শিক্ষার পরিবেশ ও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ সম্পূর্ণ আলাদা। কয়েক দশকের নিরাপত্তাহীনতার দ্বারা প্রভাবিত শিক্ষা
ব্যবস্থা প্রায়ই অকার্যকর এবং এ শিক্ষা ব্যবসায় রয়েছে আধুনিকতার অভাব। যা ছাত্রদের
আধুনিক একাডেমিক মান ও শিক্ষা থেকে বিচ্ছিন্ন করছে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা
ব্যবস্থা এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেন আমরা কোনো রকম ভয় ও উদ্বেগ ছাড়াই ভালো ফলাফল করতে
পারি।
বাংলাদেশে
পড়াশোনা আমার জন্য একটি বিস্ময়কর ও ইতিবাচক অভিজ্ঞতা
ইমানুয়েল চিনদেরা, নাইজেরিয়া
শিক্ষার্থী, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ
আমি নিজেকে বিজ্ঞানী হিসেবে কল্পনা
করি যে মানুষকে রোগ থেকে নিরাপদে রাখতে সাহায্য করবে। যেসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমি
আমার স্বপ্নকে পূরণ করতে পারি সেসব প্রতিষ্ঠানের ওপর গবেষণা করে আমি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়কে
একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পেয়েছি। যেখানে মেধাবী শিক্ষার্থী তৈরি করছে
এবং যারা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি একাডেমিকভাবে ভালো করার
জন্য আমাকে উৎসাহিত করেছে।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ও নাইজেরিয়ার
শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। যা পার্থক্য তা হলো বাংলাদেশের শিক্ষকরা
সবসময়ই শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা ও সহায়তা করতে ইচ্ছুক। যে পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমে শিক্ষকরা
ক্লাস লেকচার দিয়ে থাকেন তাতে নির্দিষ্ট টপিকের
পড়াগুলো বুঝতে সহজ হয়। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা আমার একাডেমিক অগ্রগতিতে ভূমিকা
রেখেছে। এখানকার সহযোগিতামূলক পরিবেশ আমার যোগাযোগ ও টিমওয়ার্ক দক্ষতা বৃদ্ধি করেছে।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা আমার মধ্যে একাডেমিক প্রতিশ্রুতি জাগিয়েছে। বাংলাদেশে পড়াশোনা করা আমার জন্য একটি বিস্ময়কর ও ইতিবাচক অভিজ্ঞতা। আমি সুযোগ পেয়েছি সমৃদ্ধ বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত হতে এবং সংস্কৃতির নতুন দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করতে পেরেছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে
গবেষণার সুযোগ আমাকে আকৃষ্ট করেছে
মুহাম্মদ আরিফ, পাকিস্তান
শিক্ষার্থী, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ
আমার আগ্রহের প্রথম এবং অন্যতম কারণ
ছিল ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং। এখানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বৈচিত্র্যও
আরেকটি কারণ। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার সুযোগ প্রদানের প্রতিশ্রুতিও আমাকে আকৃষ্ট করেছে।
মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি পূর্ণ বৃত্তির সম্ভাবনা একটি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ
তৈরি করেছে, যা একাডেমিক শ্রেষ্ঠত্বকে উৎসাহিত করেছে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের ও দেশের
বাইরের যোগ্য শিক্ষকদের উপস্থিতি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের আরো একটি কারণ। সবচেয়ে বড়
কারণ ছিল ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপেন সোসাইটি ইউনিভার্সিটির সদস্য হওয়া। যা শিক্ষার্থীদের
সম্পূর্ণ স্কলারশিপসহ বিদেশে পড়ার সুযোগ তৈরিতে সহায়তা করে।
বাংলাদেশে অনেক বেশিসংখ্যক ছাত্র ও
শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও স্টিম এডুকেশনকে প্রাধান্য দেয়া হয়। যার লক্ষ্য বৈশ্বিক চাহিদা
মেটাতে সক্ষম এমন পেশাদারত্ব তৈরি করা, এটি বেশ প্রশংসনীয়। আমার বাংলাদেশ যাত্রা সাংস্কৃতিকভাবে
বাংলাদেশ আমাকে একটি বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতা দিয়েছে এখানকার ঐতিহ্যবাহী সংগীত, নৃত্য এবং
ঐতিহাসিক স্থানের মাধ্যমে। এ দেশে আসা আমার
জন্য একটি জীবন বদলে দেয়া অভিজ্ঞতা। আমি কৃতজ্ঞ এই বহুমাত্রিক কমিউনিটির অংশ হতে পেরে।
সবকিছু মিলিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগের ক্রমাগত দিকনির্দেশনা এবং তাদের মাতৃস্নেহ আমাকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিতে অনুপ্রাণিত করেছে।