ইন্টেরিয়র আর্কিটেকচার

ইন্টেরিয়র আর্কিটেকচারে ক্যারিয়ার

শফিকুল ইসলাম

ছবি: মাসফিকুর সোহান

মানুষের আয় বৃদ্ধি, বিলাসী ও শৌখিন জীবনযাপন, ক্রমবর্ধমান রিয়াল এস্টেট ব্যবসার বিস্তৃতি, শিল্পায়ন ও নগরায়ণের কারণে বিশ্বে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের বাজার দ্রুতই বিকাশ লাভ করেছে। নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশে ইন্টেরিয়র ডিজাইন বা অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জায় আধুনিকতার ছোঁয়া পাওয়া যায় এবং তখন থেকেই ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে দেশে এর বাজার প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এটি দ্বিগুণ হবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ সেক্টরে কর্মরত প্রায় সাত লাখ মানুষ। সমীক্ষায় দেখা গেছে, গ্লোবাল আর্কিটেকচার ও ইন্টেরিয়র ডিজাইন মার্কেট ২০২৩-৩০ সালের মধ্যে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। 

বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সবসময় আমরা কোনো না কোনো ধরনের অভ্যন্তরীণ পরিবেশের মধ্যেই থাকি। সেটা হতে পারে আমাদের নিজেদের থাকার বাসা, অফিস, রেস্টুরেন্ট কিংবা মার্কেট। যেকোনো অভ্যন্তরীণ পরিবেশকে সর্বোচ্চ বসবাস ও ব্যবহার উপযোগী করে তোলার জন্য একজন ইন্টেরিয়র আর্কিটেক্ট প্রয়োজন। একমাত্র ইন্টেরিয়র আর্কিটেক্টই পারেন যেকোনো অভ্যন্তরীণ স্থানকে তার ব্যবহারকারীর প্রয়োজন অনুযায়ী তৈরি করে দিতে। অবকাঠামো ও নগর উন্নয়ন উভয় প্রয়োজনেই বাড়ছে স্থাপত্যের কদর। বাড়ছে ইন্টেরিয়র স্থাপত্যশিক্ষার চাহিদাও।

আর্কিটেকচার আর ইন্টেরিয়র আর্কিটেকচার বিষয়ে পড়াশোনার মধ্যে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। ইন্টেরিয়র আর্কিটেকচার মানে স্থাপত্যের শর্তাবলি অবলম্বন করে কোনো বাড়ির অভ্যন্তরের নকশা ঠিক করা এবং তার অভ্যন্তরের সৌন্দর্যবর্ধন করে সর্বোচ্চ ব্যবহারোপযোগী করে তোলা। আর্কিটেকচার বিভাগে পড়ানো হয় একটি বাড়ির নকশা ও নির্মাণের কৌশল। অন্যদিকে ইন্টেরিয়র আর্কিটেকচারে পড়ানো হয় একটি বাড়ির অভ্যন্তরের শ্রেণীবিভাগ, রঙ, আসবাবপত্র তৈরি ও অভ্যন্তরের বিভিন্ন উপকরণ সম্পর্কে। 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম ডিজাইন ইউনিভার্সিটি, যেটি চালু করে ইন্টেরিয়র আর্কিটেকচার বিভাগ, যা বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। এ বিশ্ববিদ্যালয়েই ইন্টেরিয়র আর্কিটেকচারে স্নাতক ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনে স্নাতকোত্তর গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। 

এ বিভাগে ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং সম্পর্কিত সব ধরনের কম্পিউটার সফটওয়্যার, টেকনিক্যাল ড্রয়িং অ্যান্ড ড্রাফটিং, মডেল মেকিং, কনস্ট্রাকশন ড্রয়িং, ফার্নিচার ডিজাইন অ্যান্ড ওয়ার্কিং ড্রয়িং, ম্যাটেরিয়ালস, সফট ল্যান্ডস্কেপ, সাউন্ড ডিজাইন, লাইটিং ডিজাইন ও স্টুডিও ডিজাইন ইত্যাদি সম্পর্কে পড়ানো হয়। বাংলাদেশের প্রায় সব আর্কিটেকচার, ইন্টেরিয়র আর্কিটেকচার ও ম্যাটেরিয়াল কোম্পানির সঙ্গে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে সমঝোতা স্মারক। ফলে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত হাতে-কলমে শিক্ষা ও চাকরির সুযোগ পাচ্ছে। 

শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি ইন্টেরিয়র আর্কিটেকচার বিভাগের প্রধান স্থপতি রুবানা সাদিয়া আলম বলেন, ‘‌একটি ভবন তৈরি হয় ৩৫-৫০ বছরের জন্য। কিন্তু সে ভবনের ইন্টেরিয়র ডিজাইন ৫-১০ বছর পর পরিবর্তন করা হয়। বাজারে এখন এ সাবজেক্টের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ফার্ম ও ইন্টেরিয়র ডিজাইন আছে- এমন জায়গায় সার্ভে করতে পাঠানো হয়। ফলে প্রথম বর্ষেই মার্কেটের সঙ্গে সংযোগ হয়ে যায় তাদের। বিভিন্ন জায়গায় সার্ভে করে রিপোর্ট তৈরির পর নিজেরা একটি ডিজাইন তৈরি করে। এভাবে ব্যবহারিক জ্ঞানে দক্ষ হয়ে উঠছে আমাদের শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা দেশী-বিদেশী বিভিন্ন স্বনামধন্য কোম্পানিগুলোয় সফলতার সঙ্গে চাকরিরত। আমাদের গ্র্যাজুয়েটদের রয়েছে শতভাগ চাকরি প্রাপ্তির রেকর্ড।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন