ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা

ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার হালচাল

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা অনেকেই যুক্ত হয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে। কেউ বিতর্ক সংগঠন, কেউ বিজ্ঞান ক্লাব, নাট্যদল, আবৃত্তি, চলচ্চিত্র সংসদ কেউবা বিএনসিসি, স্কাউট, আবার কেউ ক্যারিয়ার ক্লাব, ফটোগ্রাফিসহ নানা ক্লাবের সদস্য হন। নেতৃত্ব দেন একটি দলের। তবে এসব সংগঠনের মধ্যে ব্যতিক্রমী এক কাজ ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা। তারা নানা অসংগতি তুলে ধরে যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সংকট সমাধানে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করেন, তেমনি ইতিবাচকভাবেও বিশ্ববিদ্যালয়কে উপস্থাপন করেন দেশ ও দশের সামনে। ক্যাম্পাসের অঘোষিত এ গোয়েন্দাদের না বলা কথা জানাচ্ছেন শফিকুল ইসলাম

সাংবাদিকরা শিক্ষার্থীদের অঘোষিত প্রতিনিধি

আল-সাদী ভূঁইয়া, সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি

পড়াশোনার পাশাপাশি সাংবাদিকতা করা চ্যালেঞ্জ। প্রশাসনের বিভিন্ন হুমকি-ধমকি চ্যালেঞ্জ আরো বাড়িয়ে দেয়। সামনের দিনে পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হোক না কেন ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের বর্তমান বস্তুনিষ্ঠতা, সত্য প্রকাশের সাহস ও পেশাদারত্ব বজায় রাখার যে ধারা তা বজায় রাখলে দেশের সাংবাদিকতার এক ইতিহাস তৈরি করতে পারবে। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নানা সংকটে সাংবাদিকরা তাদের অঘোষিত প্রতিনিধির ভূমিকা পালন করছে। বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সাংবাদিকরা শিক্ষার্থীদের বাইরেও শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে। যার মাধ্যমে সাংবাদিকরা সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে, যা আমাদের জন্য একটি বড় অর্জন। এছাড়া ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা পেশায় নবীন হলেও প্রবীণদের ভূমিকা রাখতে হচ্ছে। পাশাপাশি একাডেমিক ভালো ফল ও ক্যারিয়ারের প্রস্তুতি তো আছেই।

বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি

আরিফুজ্জামান উজ্জল, সভাপতি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি 

পড়াশোনার পাশাপাশি সাংবাদিকতা করায় ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। অন্য শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষার বাইরে বিশ্রামের সুযোগ থাকলেও ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের ছুটতে হয় খবরের পেছনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র হিসেবেও কাজ করেন তারা। ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা তাদের লেখনীর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সংকট, সম্ভাবনা তুলে ধরছেন। পাশাপাশি দুর্নীতি, অন্যায় ও অনিয়মের খবর প্রকাশ করে সমালোচনা ও জবাবদিহিতার পরিবেশও তৈরি করেছেন। বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনের পরও তারা একদিকে দুর্নীতিবাজদের কাছে চক্ষুশূল হয়ে উঠছেন। ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের ওপর আঘাত হানা হচ্ছে। সংবাদ প্রকাশের জেরে তারা ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনদের হাতে লাঞ্ছিত হচ্ছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের রোষানলেও পড়ছেন। এসব বাধা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কলমযুদ্ধে সম্মুখ পানে এগিয়ে যাচ্ছে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা।

সাংবাদিকতা চর্চার জায়গা সংকীর্ণ হয়ে আসছে

আব্দুস সবুর লোটাস, সাধারণ সম্পাদক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি।

ক্যাম্পাসে একই সঙ্গে শিক্ষার্থী এবং সাংবাদিক হিসেবে দুদিকের দায়িত্ব পালনের মতো কঠিন কাজ সামলে নিতে হয়। এ চর্চার ফলে ব্যক্তিগত যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন কঠিন ও জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যবস্থাপনায় ভালো দক্ষতা তৈরি হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক সবকিছু ক্লাসরুম ও বিভাগকেন্দ্রিক হওয়ায় সাংবাদিকতা চর্চার জায়গা অনেকাংশেই সংকীর্ণ হয়ে আসছে। সত্য তুলে ধরার ফলে ক্ষমতাসীন দলের এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের রোষানলে পড়তে হয়। সব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সত্য প্রকাশে তরুণ সাংবাদিকরা পিছপা হয় না। রাবি সাংবাদিকরা বিভিন্ন সময় তাদের দক্ষতা, যোগ্যতা ও সাহসিকতার প্রমাণ রেখেছে। নানামুখী চাপ বাড়ার সঙ্গে তাদের দক্ষতা ও সাহস বেড়েছে। প্রাক্তনদের সাফল্য তাদের জন্য প্রেরণা জোগাচ্ছে। এসব মিলিয়েই আগামীর সম্ভাবনা।

সাংবাদিকতার পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি 

মুছা মল্লিক, সভাপতি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সাংবাদিক সমিতি

দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার চর্চা বেশ ইতিবাচক।  তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার সঠিক পরিবেশ এখনো নিশ্চিত করা যায়নি৷। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে সংবাদের হাজারও উৎস৷। সংবাদের জন্য প্রয়োজন অনুসন্ধানী চোখ। সকল বেসরকারি ইউনিভার্সিটিতে সাংবাদিকতা চর্চায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একটি স্পষ্ট নির্দেশনা জারি করা প্রয়োজন। এখানে সাংবাদিকতার চর্চা থাকলে ইউজিসির তদারকিতেও সহায়ক হবে৷। নানা অসংগতি নিয়ে কথা বলতে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।৷ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর না বলা গল্প উঠে আসতে পারে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার মাধ্যমে। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন