তৃতীয় ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের কাজ পাচ্ছে সামিট

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের তৃতীয় ভাসমান এলএনজি (লিকুইফায়েড ন্যাচারাল গ্যাস) টার্মিনাল স্থাপনের কাজ পাচ্ছে সামিট গ্রুপের প্রতিষ্ঠান সামিট অয়েল অ্যান্ড শিপিং কোম্পানি লিমিটেড। কক্সবাজারের মহেশখালীতে দৈনিক ৬০ কোটি ঘনফুট সক্ষমতার এ টার্মিনাল স্থাপনে সামিটের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। গতকাল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। 

সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীন পেট্রোবাংলা কর্তৃক কক্সবাজারের মহেশখালীতে দৈনিক ৬০ কোটি ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন তৃতীয় ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের জন্য সামিট অয়েল অ্যান্ড শিপিং কোম্পানির প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সামিট এবং জাপানের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান জেরা এ টার্মিনাল স্থাপনে যৌথভাবে বিনিয়োগ করবে। এটি স্থাপনে ৫০ কোটি ডলার ব্যয় হবে। জেরা ও সামিট কী অনুপাতে এ প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে সেটি এখনো নির্ধারণ করা না হলেও সামিটের অন্যান্য প্রকল্পের মতো এক্ষেত্রেও কোম্পানিটির বিনিয়োগ ও অংশীদারত্ব বেশি থাকবে। মন্ত্রিসভা কমিটিতে নীতিগত অনুমোদনের পর সামিটের অনুকূলে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) ইস্যু করা হবে। পরবর্তী সময়ে এটি চূড়ান্ত করে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে টার্মিনাল ব্যবহার ও বাস্তবায়নসংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে দুই বছরের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা।

এছাড়া গতকাল অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের তিনটি ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের একটি প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) কর্তৃক ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিটুজি চুক্তির আওতায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফার্টিগ্লোব ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের কাছ থেকে ৩ লাখ ৯০ হাজার টন ইউরিয়া সার আমদানির নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। একইভাবে কাতারের মুনতাজাতের কাছ থেকে ৪ লাখ ৮০ হাজার টন এবং সৌদি আরবের সাবিক এগ্রো-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানির কাছ থেকে ইউরিয়ার সার কেনার নীতিগত প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার কর্তৃপক্ষ (সিবিএইচসি) কর্তৃক ১৪ হাজার ২০০টি কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ২৭ ধরনের ওষুধ কেনায় নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে সভায়। 

গতকাল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় মোট ১২টি প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার কর্তৃপক্ষ (সিবিএইচসি) কর্তৃক ১৪ হাজার ২০০টি কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ২৭ ধরনের ওষুধ এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের কাছ থেকে কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতি কার্টন ওষুধ ২২ হাজার ১৬৪ টাকা করে মোট ১ লাখ ১২ হাজার ৭৯০ কার্টন ওষুধ কিনতে ব্যয় হবে ২৪৯ কোটি ৯৯ লাখ ৮৫ হাজার ৯৫১ টাকা।

সেতু বিভাগের অধীন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পের সেফটি কনসালট্যান্ট হিসেবে আইসিটি ও ডিডিসির জয়েন্ট ভেঞ্চারকে ভ্যারিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৫ কোটি ১৭ লাখ ৭৫ হাজার ৫৭৯ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীন সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর কর্তৃক শরীয়তপুর-জাজিরা-নাওডোবা (পদ্মা ব্রিজ অ্যাপ্রোচ) সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের ডব্লিউপি-০৩ প্যাকেজের নির্মাণকাজ মির হাবিব আলম ও মাহাবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেডের জয়েন্ট ভেঞ্চারের কাছ থেকে ১২৯ কোটি ৬৩ লাখ ৯৫ হাজার ৭০০ টাকায় কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীন পেট্রোবাংলা কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি এলপির কাছ থেকে ৩৩ লাখ ৫০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি ৫৭৪ কোটি ৬৫ লাখ ৭৪ হাজার ৩০২ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বিসিআইসি কর্তৃক কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের (কাফকো) কাছ থেকে ১৯তম লটে ৩০ হাজার টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ১০৪ কোটি ৪৩ লাখ ৫৯ হাজার ৮৮৭ টাকায় কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। একইভাবে রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফার্টিগ্লোব ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের কাছ থেকে ১২তম লটে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ৯৪ কোটি ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ৬১৭ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে সভায়। কাতারের মুনতাজাতের কাছ থেকে রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় ১৭তম লটে ৩০ হাজার টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ৯৮ কোটি ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৪১৭ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন গণপূর্ত অধিদপ্তর কর্তৃক চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ সিজিএ কলোনিতে ৬৫০ বর্গফুটের দুটি ২০তলা আবাসিক ভবন ও ৮৬০ বর্গফুটের একটি ২০তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্পের ভ্যারিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৮ কোটি ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮৭ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। 

এছাড়া গতকালের ক্রয় কমিটির সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিনি ও সয়াবিন তেল কেনাসংক্রান্ত দুটি প্রস্তাব টেবিলে উপস্থাপন ও অনুমোদন করা হয়। টিসিবির জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে সিঙ্গাপুরের প্রিন্সিপাল মেট্রিস প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে ১২ হাজার ৫০০ টন চিনি কেনার অনুমোদন দেয়া হয়। সেই সঙ্গে টিসিবির জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে সিটি এডিবল অয়েল লিমিটেডের কাছ থেকে ৮০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার প্রস্তাব অনুমোদনও করা হয় সভায়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন