সময়ের ভাবনা

এ মূল্যস্ফীতি কি বিনিয়োগ বাড়াতে সক্ষম?

আহমেদ জাভেদ

‘আয় খেয়ে ফেলছে উচ্চমূল্যস্ফীতি’—এটি ছিল গত সপ্তাহের একটি জাতীয় দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠার শিরোনাম (প্রথম আলো, ২২ মে)। আমার আজকের আলোচনা এ শিরোনাম কেন্দ্র করে, যেখানে আমি দেখাতে চেষ্টা করব অর্থনীতির সাধারণ সূত্র মেনে পত্রিকার প্রতিবেদনটির দৃষ্টিভঙ্গির সীমাবদ্ধতাগুলো এবং আমাদের দেশে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্ব কতখানি। শুরুতেই আমি বলব প্রতিবেদনটি শুধু ভোক্তার আংশিক দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা। একটি দেশে কেবল ভোক্তা পক্ষই বাস করে না, মোটাদাগে একদিকে যেমন থাকে ভোক্তা শ্রেণী, অন্যদিকে রয়েছে উদ্যোক্তা বা উৎপাদক কিংবা সরবরাহ শ্রেণী। মোটাদাগে বলছি এ কারণে, ভোক্তা ও উদ্যোক্তা উভয় শ্রেণী বৃহৎ দুটি ক্লাস্টার যার ভেতরে বহু ধরনের ধারা ও উপধারা রয়েছে। অর্থনীতির ফিলিপ্স রেখা অনুযায়ী বেকারত্ব কমার সঙ্গে মজুরি বৃদ্ধির সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। পরবর্তী সময়ে পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ আমাদের স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে যে মূল্যস্ফীতির এ স্বল্পমেয়াদি বৃদ্ধিটি উদ্যোক্তা শ্রেণীকে অধিক মুনাফা লাভের প্রেরণা জোগায়। ফলে সে বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করে। এ ফিলিপ্স রেখাটি অনেকটা চাহিদা রেখার মতো যা বাম হতে ডান দিকে নিম্নগামী। অর্থাৎ এটি মূল্যস্ফীতির হার ও বেকারত্বের হারের মধ্যে বিপরীতমুখী সম্পর্ক নির্দেশ করে স্বল্পমেয়াদে।

এখন প্রশ্ন হলো দুটি। প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশে এ সূত্র কাজ করছে কিনা এবং দ্বিতীয়টি হলো, এ মূল্যস্ফীতির পেটের ভেতর কী আছে তার বিশ্লেষণ। অর্থনীতি হলো সামাজিক বিজ্ঞানের একটি শাখা। অর্থনীতিবিজ্ঞান অবশ্যই কাজ করে কোনো না কোনো মাত্রায়, তা না হলে এতগুলো বছর ধরে এ দেশে অর্থশাস্ত্রচর্চার পরিসর তরুণদের ভেতর বাড়ছে কীভাবে? যদিও আমাদের সামাজিক অনেকগুলো পরিসরে বিজ্ঞানের প্রতি আস্থার অভাব রয়েছে। বিজ্ঞান যে আশার আলো দেখায় তার জন্য বেশি দূরে যাওয়ার দরকার নেই। এ করোনা অতিমারীর প্রতিরোধে ভ্যাকসিনের সাফল্য ইতিহাসের (অতীতের দীর্ঘ মহামারীগুলোর কথা স্মরণযোগ্য) যেকোনো সময়ের চেয়ে অতিদ্রুত হতে পেরেছে বিজ্ঞানের কারণেই। আর কে না জানে, ঐতিহাসিকভাবে ছয় দফার দাবিতে বঙ্গবন্ধুর যে আপসহীন নেতৃত্ব, তাতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বঞ্চনার বিশ্লেষণ (দুই অর্থনীতির তত্ত্ব ও অন্যান্য) আমাদের অর্থনীতিবিদরাই করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু এটিকে রাজনৈতিক দাবি হিসেবে সৃজনশীল রূপান্তর করে তা আদায়ের জোরালো দাবি দেশের প্রান্তিক মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছিলেন। এর ফলেই মানুষের মুখে মুখে ফিরছিল ‘সোনার বাংলা শ্মশান কেন?’ এর ধারাবাহিকতায় পেয়েছি আমাদের স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ বাংলাদেশ। 

তা সত্ত্বেও স্কটিশ দার্শনিক টমাস কার্লাইল অর্থশাস্ত্রকে ‘নৈরাশ্যের বিজ্ঞান’ বলেছিলেন। তবে তিনি এটি বলেছিলেন, অর্থশাস্ত্রী ম্যালথাসের জনসংখ্যার আধিক্যের তুলনায় খাদ্যের অপ্রতুলতার কারণে পৃথিবীতে যে দুর্বিষহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল তার প্রেক্ষাপটে। এটি ছিল অষ্টাদশ শতকের কথা, যখন অর্থশাস্ত্রীরা পৃথিবীব্যপী বিপুল দারিদ্র্যের কারণগুলোর ওপর জোর দিতেন এবং যা স্বভাবতই নেতিবাচক চিত্রটিকে প্রধানভাবে হাজির করত। এর প্রমাণ পাওয়া যায় জগৎখ্যাত নাট্যকার উইলিয়াম শেকসপিয়ারের লেখায়। তার সময়ের উৎপাদন পদ্ধতি ও বণ্টন অন্যায্যতা মানুষের জীবনকে কীভাবে বিপন্ন করেছিল সে মর্মস্পর্শী গাথা এঁকেছিলেন তিনি তার বিখ্যাত নাটকগুলোয়। এরপর ২৫০ বছরের বেশি অতিবাহিত হয়েছে। এ সময় ধরে মানবজাতির ব্যাপকমাত্রার অনুসন্ধান ও জ্ঞান বৃদ্ধি ঘটেছে বহু মানুষের শ্রম, আত্মত্যাগ এবং নবতর আবিষ্কার ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে। মানবজাতির চিন্তার এ অগ্রসরতার মোহনায় দাঁড়িয়ে দার্শনিক কার্লাইলের অর্থশাস্ত্রবিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গিকে আমরা কীভাবে মূল্যায়ন করব?

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ তার ‘মার্কেটস, মরালস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট: রিথিংকিং ইকোনমিক্স ফ্রম আ ডেভেলপিং কান্ট্রি পারসপেক্টিভ’ গ্রন্থে এ ফিরে দেখার কাজটি করেছেন উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে। তিনি বলছেন, আজকের দিনে ‘নৈরাশ্যের বিজ্ঞান’ কথাটিকে পুনর্পাঠ করলে [উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির প্রেক্ষাপটকে মাথায় রেখে] দেখতে পাব যে ভিন্ন অর্থের দ্যোতনা সৃষ্টি করছে। কারণ এটি বর্তমান অর্থশাস্ত্রীয় চিন্তার সীমিত পরিধির দিকে ইঙ্গিত করে, বিশেষ করে বর্তমান বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামোর মূলে রয়েছে অতিমাত্রায় বাজারকেন্দ্রিকতা যেখানে পশ্চিমা শিল্পায়িত অর্থনীতি নেতৃত্বের আসনে রয়েছে। এ আর্থিক ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে অস্থিরতা এবং বিপুল প্রাচুর্যের মধ্যেও অকল্পনীয় ধরনের উচ্চমাত্রার বৈষম্য। (২০২২, রাউটলেজ)। এগুলো অবশ্যই অধ্যাপক মাহমুদের গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি। অধ্যাপক অমর্ত্য সেন তার ‘ডেভেলপমেন্ট অ্যাজ ফ্রিডম’ গ্রন্থে মুখবন্ধে বর্তমান বিশ্বের অকল্পনীয় প্রাচুর্য যা মাত্র এক শতাব্দী আগেও কল্পনাতীত ছিল তার সঙ্গে মাত্রাতিরিক্ত বঞ্চনা ও বৈষম্যের চিত্র পাশাপাশি তুলে ধরেছেন।

এটি সত্যি যে আমাদের সমাজে বাজারের আধিপত্য সবচেয়ে নির্ধারক হয়ে উঠেছে। ফলে মানুষে মানুষে সম্পর্কের অবনতি ঘটছে যা সামাজিক চুক্তিকে দুর্বল থেকে দুর্বলতর করছে। মানুষের রাজনৈতিক স্বাধীনতা ক্রমাগত কমছে, মৌলিক মানবাধিকার অনবরত বাধা-বিপত্তির মুখে পড়ছে। এখনো মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে একটি বড় জনগোষ্ঠী। সম্প্রতি ড. বিনায়ক সেনের গবেষণায় বেরিয়েছে যে ‘ঢাকার গরিব মানুষের অর্ধেকই “‍নতুন দরিদ্র”।’ (প্রথম আলো, ১৮ মে)। মূল্যস্ফীতির ফলে অর্থনীতির তেমন ক্ষতি-বৃদ্ধি না হলেও সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে স্থির-আয়ের মানুষের ওপর। ফলে নিম্নবিত্ত মানুষরা ক্ষতিগ্রস্ত হন পুষ্টি ও শিক্ষার দিক দিয়ে। (দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী ২৬ শতাংশ (৩৮ লাখ ৭৮ হাজার) শিশু [অপুষ্টির শিকার] খর্বাকায়, প্রথম আলো, ২৭ মে; এবং বিআইডিএস গবেষণা (জুলফিকার আলী): মহামারীর দুই বছরে দেশের ৬৩ জেলার শিক্ষার্থীদের মৌলিক শিক্ষায় ঘাটতি: তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের ৭০ শতাংশ বাংলা অক্ষর চিনতে পারে না)। করোনার অভিঘাতে দরিদ্র মানুষের সঞ্চয় নিঃশেষিত হয়ে যাওয়ার ফলে অনিরাপদ ও হতাশাবোধ বেড়েছে। নারীর নিরাপত্তা, অধিকার ও সিদ্ধান্তের ক্ষমতাকে খর্ব করা হচ্ছে, অথচ সামাজিক পুনরুৎপাদন প্রক্রিয়ায় তাদেরই অবদান বেশি। অতি উষ্ণতা, চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া, মারাত্মক বায়ু ও পানির দূষণ, সুপেয় পানির অভাব ইত্যাদি অর্থনীতি ও সমাজ জীবনের বজায়যোগ্যতার জন্য প্রচণ্ড হুমকিরূপে দেখা দিয়েছে। এসবের সম্মিলিত প্রভাব মানুষের ভেতর দিয়ে প্রকাশ হয় তার আচরণের মাধ্যমে। সে আচরণে থাকে অবিশ্বাস, যেখানে থাকে ক্ষোভ ও ঘৃণার এক ধরনের মিশ্রণ যা সমাজের অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এক ধরনের নিয়তিবাদের পরিবেশ সৃষ্টি করে। ফলে বিজ্ঞানের শক্তিসামর্থ্য সম্পর্কে জানা থাকলেও তার সংবেদনায় অতিমাত্রার হতাশার কুয়াশা ভেদ করে কর্মসম্পাদনে সেই বিজ্ঞানের আলো আর তার ব্যবহার করা হয়ে ওঠে না। অনেক সময় অভাবগ্রস্ত মানুষ আর্থিক সচ্ছলতা এলে সে কি করবে তার তালিকা করে রাখলেও প্রকৃতপক্ষে যখন তার সামর্থ্য আসে তখন সে তার নিজের করা পরিকল্পনাগুলো নিজেই বাস্তবায়ন করতে পারে না।

ফিরে আসি মূল্যস্ফীতির আলোচনায়। একমাত্র শ্রীলংকার কথা বাদ দিয়ে সমপর্যায়ের অর্থনীতির ও আঞ্চলিক দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার সবসময়ই বেশি। উদাহরণস্বরূপ ২০১৭ সালে ভিয়েতনামে (৩ দশমিক ৫ শতাংশ), কম্বোডিয়ায় (২ দশমিক ৯ শতাংশ), সিঙ্গাপুরে (শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ), মালয়েশিয়ায় (৩ দশমিক ৮ শতাংশ), দক্ষিণ কোরিয়ায় (১ দশমিক ৯ শতাংশ), ইন্দোনেশিয়ায় (৩ দশমিক ৮ শতাংশ), ভারতে (৩ দশমিক ৬ শতাংশ), চীনে (১ দশমিক ৬ শতাংশ) ও বাংলাদেশে (৫ দশমিক ৪ শতাংশ) মূল্যস্ফীতি ছিল। পাঁচ বছর পর বর্তমানে বাংলাদেশে ২০২৩-এর মার্চে মূল্যস্ফীতি গড়ে ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং ২০২২-এর মার্চের তুলনায় (পয়েন্ট টু পয়েন্ট) তা বর্তমানে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। অর্থাৎ সরকারি হিসাব অনুযায়ী মূল্যস্ফীতি বর্তমানে প্রায় ডাবল ডিজিট ছুঁই ছুঁই। আগের দেশগুলোয় যথাক্রমে ২০২৩ সালের প্রথমদিকের হিসাব অনুযায়ী ভিয়েতনামে (৫ দশমিক ২১ শতাংশ), কম্বোডিয়ায় (২ দশমিক ৯৯ শতাংশ), সিঙ্গাপুরে (৫ দশমিক ৫ শতাংশ), মালয়েশিয়ায় (৩ দশমিক ৮ শতাংশ), দক্ষিণ কোরিয়ায় (৩ দশমিক ৭ শতাংশ), ইন্দোনেশিয়ায় (৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ), ভারতে (৪ দশমিক ৭ শতাংশ), চীনে (শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ) মূল্যস্ফীতি হয়েছে। অন্যান্য দেশেও মূল্যস্ফীতির হার ২০১৭ থেকে ২০২৩—এ প্রায় ছয় বছরে তাদের নিজ নিজ দেশের তুলনায় বেড়েছে, একমাত্র ব্যতিক্রম চীনের কথা বাদ দিলে। কারণ নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণে, বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অন্যান্য দেশের তুলনায় চীনের রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতার (সস্তায় বিপুল জ্বালানি) প্রেক্ষাপট তাদের বাড়তি সুবিধা দিয়েছে। (সূত্র: এডিবি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক)

বিনিয়োগের দিকে তাকালে ভিয়েতনামে স্বল্পমেয়াদে বিনিয়োগ ক্রমে বাড়ছে যদিও ২০২২-এর তুলনায় চলতি বছরের গোড়ার দিকে তা বিরাট ধাক্কা খেয়েছিল। কম্বোডিয়ায় মূল্যস্ফীতি একই থাকলেও তাদের বিনিয়োগ ২০২২-এর তুলনায় এ বছর বেড়েছে। সিঙ্গাপুরে বিনিয়োগ কেবল অনেক উঁচুতেই পৌঁছায়নি, তা ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়ামের মতো দেশকেও ছাড়িয়ে গেছে। মালয়েশিয়ায় মূল্যস্ফীতি না বাড়লেও বিনিয়োগ বাড়ছে এবং এরই মধ্যে সে থাইল্যান্ড, তুরস্ক ও রোমানিয়ার মতো দেশকে টপকে সমানে এগিয়ে গেছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় কয়েক বছর ধরে বিনিয়োগ দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ছে। ইন্দোনেশিয়া বিনিয়োগের দিক থেকে ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, ইউক্রেন ও মিসরকে ছাড়িয়ে গেছে। ভারত বিনিয়োগের দিক থেকে ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, ইউক্রেন ও মিসরকেও অতিক্রম করেছে। চীনের কথা আর না-ই বা বললাম। বাংলাদেশের বিনিয়োগের দিকে তাকালে তা ক্রমাগত নিম্নগামী, এমনকি আমাদের চেয়ে বিনিয়োগে মিয়ানমার ও উজবেকিস্তানের মতো দেশ উপরে আছে। (সূত্র: এডিবি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক)। উল্লেখ্য, সময়স্বল্পতার কারণে এখানে কেবল এফডিআই বা সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের তথ্যের ভিত্তিতেই আলোচনা করেছি। সময় পেলে রফতানি পণ্য ও সেবার তথ্যগুলো দেখতে পেলে ভালো হতো। তবে ফিলিপস রেখা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে বেকারত্বের হার দেখা প্রয়োজন। তবে বিনিয়োগ যেহেতু বাড়ছে ধরে নেয়া যায়, এসব দেশে কর্মসংস্থানও বাড়ছে। এ বিনিয়োগের উৎসাহ কিছুটা হয়তো মূল্যস্ফীতি থেকে আসতে পারে যদিও দুটি ক্ষেত্রে (কম্বোডিয়া ও মালয়েশিয়া) মূল্যস্ফীতি একই থাকলেও বিনিয়োগ সেখানে বেড়েছে। তবে বিনিয়োগ বাড়ার বিষয়টির মূলে রয়েছে অধিক মুনাফা লাভের প্রণোদনা। সরবরাহকারী বা উদ্যোক্তা তখনই বিনিয়োগে যাবেন ও ঝুঁকি নেবেন যখন দাম আগের তুলনায় বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। তবুও এত সীমিত পরিসরে এ বৃহৎ বর্গটি দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণ করা যাবে না। বিনিয়োগের জন্য ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচকও দেখা জরুরি। 

সাধারণভাবে মূল্যস্ফীতির উৎস তিনটি: কস্ট পুশ ইনফ্লেশন, ডিমান্ড পুল ইনফ্লেশন ও আমদানি-রফতানিজনিত মূল্যস্ফীতি। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী উন্নয়নশীল দেশগুলোর মূল্যস্ফীতির মাত্রা মাঝারি ধরনের থাকার কথা। কিন্তু বিগত বছরগুলোর তুলনায় আমাদের দেশে তা দ্বিগুণ হলো কেন? এ মূল্যস্ফীতির ব্যবচ্ছেদ করলে আমরা কী পাই? এডিবির মতে, সারা দুনিয়াতেই পণ্য ও সেবার চাহিদা দুর্বল হয়েছে। ফলে ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদন কমে গেছে। কাজেই এ মূল্যস্ফীতিতে চাহিদার বাড়তি প্রভাব রয়েছে। অন্যদিকে সরবরাহ চেইনে সমস্যা সৃষ্টি করেছে ইউক্রেন যুদ্ধসংক্রান্ত উদ্ভূত পরিস্থিতি। তবে আমাদের দেশে বিপুল পরিমাণ পণ্য ও তার কাঁচামাল আমদানিনির্ভর হওয়ায় উল্লিখিত তিনটির মিলিত প্রভাবে মূল্যস্ফীতির উল্লম্ফন ঘটে থাকতে পারে। তবে মূল্যস্ফীতির ভেতর এ তিন উৎসে কার কতখানি হিস্যা তার পরিমাপগত বিষয় আরো স্পষ্ট করে দেখাতে হলে আরো তথ্য লাগবে যা এ মুহূর্তে আমি উপস্থাপন করতে পারছি না। তবে এটি বলা যায় যে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির ভেতর খরচের পরিমাণ যেহেতু এতটা বেশি, তাই এটি বিনিয়োগকারী বা উদ্যোক্তাকে অধিক মুনাফার প্রেরণা জোগাচ্ছে না। ফলে বিনিয়োগও সে রকম বাড়েনি।

আহমেদ জাভেদ: অর্থনীতির শিক্ষক, ‘বাঙলার পাঠশালা ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন