সাক্ষাৎকার

উন্নত যন্ত্রপাতি ব্যবহারে আরো ট্রেনিং দরকার

ডা. অধ্যাপক সামছাদ জাহান শেলী। বারডেম অ্যান্ড ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গাইনিকোলজি বিভাগের প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান। বাংলাদেশে ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি পদ্ধতির পথিকৃৎ তিনি। এ সার্জারির সুবিধা-অসুবিধা, সীমাবদ্ধতা ও আরো নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শর্মিলা সিনড্রেলা

ল্যাপারোস্কপিক সার্জারির সুবিধা-অসুবিধাগুলো বলুন।

সার্জারির অসুবিধার তুলনায় সুবিধা অনেক বেশি। সাধারণত সব সার্জারিতেই কিছু না কিছু জটিলতা থাকে। ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারির সুবিধা হলো, ছোট ছিদ্র করে করা হয় ফলে পেট কাটতে হয় না। বড় কাটা দাগ থাকে না। রক্তক্ষরণও তেমন হয় না। অপারেশনের পর তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। পেট কাটা হলে অনেক রোগী পঁাচ থেকে সাত দিন ব্যথার কথা বলে। এক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে করা হয় বলে ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কাও কম থাকে, বিশেষ করে হাইরিস্ক পেশেন্ট বা যাদের ডায়াবেটিস থাকে তাদের ক্ষেত্রে। আবার যেহেতু পরের দিনই রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দিচ্ছি তাই খরচও কমে আসে। আর অসুবিধার কথা যদি বলি, আধুনিক সব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করায় চিকিৎসা ব্যয় বাড়লেও তা তেমন বেশি হয়ে যায় না। যেহেতু রোগীকে বেশিদিন হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে না, কেবিন চার্জ লাগছে না, রোগী পরের দিনই হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে কাজে যোগদান করতে পারে। সেসব দিক থেকে এটা বেশ সাশ্রয়ী। এখন তো সবার জনবল কমে যাচ্ছে। সুতরাং সার্জারি করা হলে রোগীর সঙ্গে হাসপাতালে থাকার মতো মানুষের দরকার কম পড়ে। গাইনিতে হিস্টেরেকটমি, মায়োমিকটমি, টিউবাল লাইগেশন অ্যান্ড রিক্যানালাইজেশন, লার্জ ওভারিয়ান সিস্ট ইত্যাদি অপারেশন এখন ল্যাপারোস্কোপির মাধ্যমে করা যায়। আর জটিলতা বলতে হাইরিস্ক পেশেন্টের ক্ষেত্রে সাধারণ অপারেশনে যেসব ঝুঁকি থাকে এতেও সেসব ঝুঁকি থাকে।

বাংলাদেশে এখন কত মানুষ সার্জারির সুবিধা পেয়েছেন?

২০০৪ সালে কেরালা থেকে শিখে আসার পরে অপারেটিভ ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি শুরু করেছিলাম। তার আগে ডায়াগনস্টিকগুলো করতাম। তখন আমরা কয়েকজন মিলে করতাম। ল্যাপারোস্কোপিক সোসাইটিতে এখন প্রতি বছরই তিন-চারটা করে ব্যাচ আসে। তাদের বিষয়ে ট্রেনিং দেয়া হয়। তারপর তারা গিয়ে অল্প অল্প করে শুরু করে। এর শিখন প্রক্রিয়াটা একটু দীর্ঘ। শিখতে অনেক সময় লাগে। কারণ এটা প্র্যাকটিসের ব্যাপার, ইন্টেলিজেন্সের ব্যাপার। সেজন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে ট্রেনিং দিয়ে আসছি। সেই সঙ্গে আমরা বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে যাচ্ছি। সেখানেও পদ্ধতি শেখানো হয়। এভাবে সারা বাংলাদেশে করা হচ্ছে। এখন ঢাকা শহরে প্রায় সবগুলোতেই সার্জারির সুবিধা রয়েছে।

সার্জারির ক্ষেত্রে বাইরের দেশ আর আমাদের দেশের তুলনামূলক চিত্রটা কেমন?

বাইরের দেশগুলোতে চিকিৎসা আরো বেশি ব্যয়বহুল। আমাদের এখানে হয়তো যে চিকিৎসাটা ৫০ হাজার টাকায় দেয়া সম্ভব হবে, বাইরের দেশে সেটার খরচ - গুণ বেশি পড়ে যায়।

ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি নিয়ে যখন কাজ শুরু করেছিলেন তখন থেকে বর্তমানে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে?

যখন কাজ শুরু করেছিলাম তখনকার তুলনায় বর্তমানে অনেক পার্থক্য এসেছে। আগে আমাদের রোগীকে পুরো বিষয়টা বোঝাতে হতো। এখন রোগীরাও সচেতন হয়েছে। একজন চিকিৎসা নেয়ার পরে বা অন্য কোনোভাবে জেনে আরেকজনকে জানাচ্ছে, এমনও দেখা যাচ্ছে। আবার গণমাধ্যমেও জানানো হচ্ছে। যারা ট্রেনিং নিতে আসছে তারা গিয়েও অনেক রোগীকে রেফার্ড করছে। আগে রোগীকে বুঝিয়ে সার্জারির জন্য রাজি করাতে হতো, আর এখন অনেকে নিজে এসে পদ্ধতিতে সার্জারি করতে চায়।

দেশে সার্জারির ক্ষেত্রে কী কী সীমাবদ্ধতা রয়েছে? সেগুলো দূর করার জন্য কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে?

আমরা ওয়ার্কশপ করছি, সরকারও এখন ভালো ভালো যন্ত্রপাতি নিয়ে আসছে। যখন আমরা শুরু করেছিলাম তখন কিছু যন্ত্রপাতি আমরা নিজেরা কিনতাম, এখনো কিনি। আশার বিষয় হলো প্রতিটা মেডিকেল কলেজে আমরা যখন ট্রেনিং করি তখন বুঝি ওদের ওখানে ইনস্ট্রুমেন্ট আছে। সরকার থেকে সাপ্লাই দেয়া হয়েছে। লাখ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি তো আর ব্যক্তিগতভাবে কেনা সম্ভব না। সরকার থেকে যে যন্ত্রপাতি দেয়া হয়েছে সেগুলো ঠিকঠাকমতো ব্যবহার করার জন্যই কিন্তু আরো বেশি বেশি ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা উচিত। কিন্তু আমাদের চিকিৎসকরা ছুটি পান না। বিশেষ করে সরকারি চিকিৎসকরা সাতদিনের ছুটি নিয়ে ট্রেনিংয়ে যান। কিন্তু সাতদিনে এর কিছুই শেখা যায় না। বছরের পর বছর লাগে শিখতে। যদি একটু সময় নিয়ে শেখানো যায় তাহলে আরো বেশি কাজে লাগবে। ল্যাপারোস্কোপিক সোসাইটির মাধ্যমে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে একটা ইনস্টিটিউশন করার। যা ট্রেইনিদের আরো বেশি সুবিধা দেবে। ল্যাপারোস্কোপিক সোসাইটির গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে বাংলাদেশে সুবিধা আরো প্রসারিত করার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশের নারীরা অনেক বেশি ওয়ার্কিং মাদার। ফলে পেট কেটে অপারেশন খুবই ভোগায় তাদের। সঙ্গে হার্নিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সার্জারিতে তা থাকে না। অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল না কিন্তু ভারী কাজ করা মায়েদের জন্য যদি মেডিকেল কলেজগুলোতে ব্যবস্থা করা যায় তাহলে ভালো হবে। আর ট্রেনিং দিয়ে আমরা আরো ম্যানপাওয়ার তৈরি করতে পারি। চিকিৎসকরা যদি প্রশিক্ষিত হন তাহলে দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে, স্বল্পমূল্যে অপারেশন করে দিতে পারবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন