দুই বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পাঠায়নি রিং শাইন টেক্সটাইল

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুঁজিবাবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি রিং শাইন টেক্সটাইল লিমিটেড ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কাছে জমা দেয়নি। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে কোম্পানিটির কাছে চিঠি পাঠিয়েছে ডিএসই। স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

এর আগে কোম্পানিটির ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীতে সঠিক ও প্রকৃত তথ্য প্রতিফলিত হয়নি বলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে। এর মধ্যে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদনের আগে কোম্পানিটি প্রাইভেট অফারের মাধ্যমে বিদ্যমান উদ্যোক্তা পরিচালক ও ৭৩ জন স্থানীয় শেয়ারহোল্ডারদের অনুকূলে ২৭৫ কোটি ১০ লাখ টাকার সাধারণ শেয়ার ইস্যু করে পরিশোধিত মূলধন ৯ কোটি ৯৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে ২৮৫ কোটি ৫ লাখ টাকায় উন্নীত করে। তবে বিএসইসির প্রতিবেদন অনুসারে, এ সময়ে ৩৩ জন দেশীয় শেয়ারহোল্ডার শেয়ারের বিপরীতে কোনো অর্থ জমা দেননি। আর ৪০ জন দেশীয় শেয়ারহোল্ডার শেয়ারের বিপরীতে টাকা পরিশোধ করার দাবি করলেও তা করপোরেট হিসাবে আসেনি। বিএসইসি চেয়ারম্যান অধাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ২০২১ সালের ২৩ জুনের ৭৭৯তম কমিশন সভায় কোম্পানিটির তদন্ত প্রতিবেদনের উপাত্ত পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের জন্য উপস্থাপন করা হয়। এ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। 

বিএসইসির তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, কোম্পানিটি আইপিও অনুমোদন পাওয়ার জন্য প্রসপেক্টাসে জাল ব্যাংক বিবরণীর ভিত্তিতে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। এছাড়া প্রাক-আইপিও মূলধনের ব্যবহার বিষয়েও প্রসপেক্টাসে মিথ্যা ঘোষণা দিয়েছে। কোম্পানিটি তালিকাভুক্তির আগে ও পরে বছরের পর বছর ধরে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।  

ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে আইপিওর মাধ্যমে ২০১৯ সালে খায়রুল কমিশনের আমলে দেশের পুঁজিবাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ করে রিং শাইন টেক্সটাইলস। কোম্পানিটির তালিকাভুক্তির সময় এর বিভিন্ন ধরনের আর্থিক তথ্যের বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। বিশেষ করে ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে এত বড় অংকের অর্থ উত্তোলনের বিষয়টি নিয়ে সে সময় বাজারে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছিল। সাধারণত বড় অংকের অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে অভিহিত মূল্যের সঙ্গে প্রিমিয়ামসহ বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে তালিকাভুক্ত করা হয়। তবে এক্ষেত্রে রিং শাইন ছিল ব্যতিক্রম। আইপিওতে আসার আগে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ছিল ২৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৭ কোটি ৫১ লাখেরও বেশি শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ২০১৮ সালে ২৭৫ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করে কোম্পানিটি। আইপিওর মাধ্যমে ১৫০ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহের পর কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৪৩৫ কোটিতে উন্নীত হয়। আইপিওতে আসার পরেই ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এতে পরিশোধিত মূলধন বেড়ে ৫০০ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। সে হিসাবে প্রাইভেট অফার, আইপিও ও বোনাস লভ্যাংশ মিলিয়ে ২০১৮-২০ সালের মধ্যেই প্রায় ৫০০ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করে কোম্পানিটি। এমন পরিস্থিতিতে দেশে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে বিদেশী ক্রয়াদেশ কমে যাওয়া, কাঁচামালস্বল্পতা ও তহবিল সংকটের কারণে ২০২০ সলের সেপ্টেম্বরে কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয় রিং শাইন টেক্সটাইলস। এরপর দফায় দফায় কারখানা বন্ধের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় শেষ পর্যন্ত কোম্পানির অবস্থা পরিবর্তনে হস্তক্ষেপ করে শিবলী কমিশন। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে  কোম্পানিটিকে পুনরায় উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে সাতজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের মাধ্যমে এর পর্ষদ পুনর্গঠন করে বিএসইসি। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে সর্বশেষ ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন ডিএসইতে জমা দেয়নি কোম্পানিটি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন