সমাবর্তন

জেদ থেকে দুই স্বর্ণপদক জয়

মেহেদী মামুন

স্নাতকে সমাজবিজ্ঞান অনুষদে প্রথম হওয়ায় পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক, স্নাতকোত্তরে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম হওয়ায় শরফুদ্দিন স্বর্ণপদক লাভের সঙ্গে জাবির অর্থনীতি বিভাগে প্রভাষক হিসেবেও কর্মরত ইসতিয়াক রায়হান শুভ ছবি: পিআইডি

স্কুলে প্রথম ছাত্র হিসেবে গোল্ডেন -প্লাস পেয়ে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন ইসতিয়াক রায়হান শুভ। হঠাৎ করে পরিবার ছেড়ে ঢাকায় এসে বিষণ্নতা দেখা দিল। অর্থনৈতিক সংকট সেই বিষণ্নতাকে আরো বাড়িয়ে তুলল। ক্লাস সেভেন থেকেই লিখতেন কবিতা, কিন্তু কলেজের বিষণ্নতা সেটাকে আরো বাড়িয়ে দিল। ঠিক করে ফেললেন কবি হবেন। ঘুরতেন আজিজ সুপার মার্কেটে, চারুকলার বিপরীত পাশে ছবির হাটে আড্ডা দিতেন, কিন্তু কলেজে আর যেতেন না। দেখতে দেখতে এইচএসসি পরীক্ষা আসায় টনক নড়ল। কবি হওয়ার ব্যর্থ চেষ্টায় এইচএসসির ফলাফল খুব খারাপ হলো। এসএসসির পর শুভকে নিয়ে যাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল তারা সবাই হতাশ হলেন। শুনতে হলো নানা কথা। শুনে কষ্টে বুক ভারী হয়ে আসত, কিন্তু শুভ দমে যাননি। সেদিনই মনের মধ্যে প্রচণ্ড জেদ তৈরি হয়েছিল। জীবনে ভালো কিছু করতে হবে।

সেদিনের এই ইসতিয়াক রায়হান শুভ আর আজকের শুভ এক নয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক পাসের পর সর্বোচ্চ ফলাফল করে পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক। স্নাতকোত্তর শেষে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন নিজ বিভাগেই। স্নাতকোত্তরে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ ফলাফল করার জন্য গত ২৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সমাবর্তনে শরফুদ্দিন স্বর্ণপদক পেয়েছেন তিনি।

তবে অর্জনের পথটা সহজ ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে গিয়েও বিপত্তিতে পড়তে হয়েছে তাকে। ভর্তি পরীক্ষায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধা তালিকায় নাম থাকার পরও ভাইভা দিতে যাননি এই ভেবে ঢাবিতে বাংলা বিভাগে হয়তো চান্স পেয়ে যাবেন। কিন্তু তা না হওয়ায় পরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাইন্যান্সে ভর্তি হন। কিন্তু কিছুদিন পর জগন্নাথ ভালো লাগেনি, তাই ক্লাস করা বন্ধ করে দেন। সময়ে অমর্ত্য সেনের বই পড়ে অর্থনীতির ওপর কিছুটা ভালো লাগা তৈরি হয়। সঙ্গে বইমেলায় অমর্ত্য সেনের দেখা পেয়ে তা আরো পোক্ত হলো। তাই জাবিতে ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজিতে দ্বিতীয় হলেও ভর্তি হয়েছেন জাবির অর্থনীতি বিভাগে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেই নিয়মিত পড়ালেখা করার ইচ্ছে থাকলেও বাধা হলো গণরুমের পরিবেশ আর বিষণ্নতা। তাই প্রথম বর্ষে ভার্সিটির পাশেই ডেইরি ফার্মের কোয়ার্টারে এক বন্ধুর সঙ্গে থাকতেন ভাড়া বাসায়। অনেকেই বলত, সাহিত্যিক হতে গিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। উপহাস শুনে জেদ হয় নিয়মিত পড়ালেখা করার। প্রথম বর্ষে খুব বেশি না পড়লেও ক্লাসে নিয়মিত থাকায় প্রথম হন বলে জানান শুভ। এর মধ্যে দ্বিতীয় বর্ষের শুরুতে খালেদা নূর নামে এক সহপাঠীর সঙ্গে ভালো বন্ধুত্ব প্রেমে বিষণ্নতা কেটে গেল। দুজনের পণ আর পড়াশোনায় স্নাতকে সমাজবিজ্ঞান অনুষদে প্রথম হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক, স্নাতকোত্তরে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম হওয়ায় শরফুদ্দিন স্বর্ণপদক লাভের সঙ্গে জাবির অর্থনীতি বিভাগে প্রভাষক হিসেবেও কর্মরত তিনি।

শুভ শিক্ষক হিসেবে শিক্ষা গবেষণায় নিজেকে আরো এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ভালো ফলাফলের জন্য শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা, শুভ্র দে দাদা এবং আদনান আল নাহিয়ান ভাইয়ের অনুপ্রেরণা কাজ করেছিল। শিক্ষক হতে চাওয়ার পেছনে একটা কারণ ছিল। আমার মনে হয়েছিল পেশায় থাকতে পারলেই কেবল আমি লেখালেখি করার সময় সুযোগ পাব, সাহিত্যচর্চা করতে পারব। যদিও সেই চর্চা তেমন করে আর করা হয়ে ওঠেনি। কলেজে ফলাফল খারাপ করার পর সবাই বলতে শুরু করেছিল যে আমি ঝরে গিয়েছি, কিন্তু আমি ঘুরে দাঁড়িয়েছি। নিজের মেধা শ্রমকে কাজে লাগিয়েছি আমি বিশ্বাস করি, কেউ যদি মন থেকে চায় এবং পরিশ্রম করে তাহলে তার লক্ষ্যে পৌঁছার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন