পাকিস্তানের বিদ্যুৎ খাতের সব সংকটই বাংলাদেশে দৃশ্যমান

সাইফুল ইসলাম বাপ্পী ও আবু তাহের

উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে বিদ্যুৎ খাতের ঋণ দায়ের বোঝা। যদিও কাঙ্ক্ষিত সুফল মেলেনি। বরং চাপে পড়েছে অর্থনীতি। দেশের বিদ্যুৎ খাতের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন শেষ পর্ব 

পাকিস্তানে ২০১৩ সালেও বিদ্যুৎ খাতের সার্কুলার ডেবট বা চক্রাকার ঋণ ছিল ৪৫ হাজার কোটি রুপি। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যেই তা কয়েক গুণ বেড়ে দাঁড়ায় লাখ ৩০ হাজার কোটি রুপিতে। বর্তমানে দেশটির সার্কুলার ডেবট দাঁড়িয়েছে মোট জিডিপির প্রায় শতাংশে। বিদ্যুৎ খাতের সার্কুলার ডেবটকেই এখন দেশটির সবচেয়ে বড় সংকটগুলোর অন্যতম হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সার্কুলার ডেবট মূলত এক ধরনের সরকারি ঋণ। কোনো দেশের বিদ্যুতের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বা বিতরণ কোম্পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর পাওনা অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ঋণচক্র শুরু হয়। পাওনা অর্থ না পেয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোও এক পর্যায়ে জ্বালানি সরবরাহকারীদের বিল দেশী-বিদেশী ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হতে থাকে। এর সঙ্গে সঙ্গে সার্বিক খাতের লোকসান বাড়ার পাশাপাশি সরকারেরও দায় বড় হতে থাকে।

পাকিস্তানে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে দেশী-বিদেশী ঋণের ওপর নির্ভর করে একের পর এক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু চাহিদা তৈরি করতে না পারায় উচ্চ সুদহারে নেয়া বাণিজ্যিক ঋণে নির্মিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর অর্থনৈতিক কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। আবার বিদ্যুৎ খাতের জ্বালানি পরিকল্পনাও ছিল পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। সংগতিপূর্ণ সঞ্চালন ব্যবস্থা না থাকায় বিপুল সক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়ে রেখে গুনতে হয়েছে ক্যাপাসিটি চার্জ। আবার বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) সম্পাদনের সময় ট্যারিফ নির্ধারণ হয়েছে ডলার ইনডেক্সেশন (ডলারে মূল্য নির্ধারণ করে স্থানীয় মুদ্রায় পরিশোধ) পদ্ধতিতে। এতে প্রতিবার পাকিস্তানি রুপির অবমূল্যায়নের সঙ্গে সঙ্গে ব্যয়ও বেড়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের। দিন দিন ব্যয়ের মাত্রা দেশটির ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বা বিতরণ কোম্পানিগুলোর সক্ষমতাকে ছাড়িয়ে বড় হয়েছে। এতে যে দায় তৈরি হয়েছে, এক পর্যায়ে তা বিদ্যুৎ খাতের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেশটির সক্ষমতা অনুযায়ী সর্বোচ্চ পরিমাণ ভর্তুকি দিয়েও নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এর ধারাবাহিকতায় খাতটিতে সৃষ্ট ঋণের দুষ্টচক্রের ভার এখন পাকিস্তানের সরকার তথা গোটা অর্থনীতিকেই বহন করতে হচ্ছে।

পরিস্থিতি সঙ্গিন হয়ে পড়ায় পাকিস্তানে এখন বিদ্যমান বিদ্যুৎ নীতি পর্যালোচনার দাবি উঠেছে। যদিও এরই মধ্যে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পতিত হয়েছে ঋণের বোঝায় জর্জরিত পাকিস্তান। আপাতত সংকট মোকাবেলার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের অর্থছাড়ের অপেক্ষায় আছে দেশটি। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আইএমএফ এখন পর্যন্ত পাকিস্তানকে ঋণের অর্থছাড় না করার বড় একটি কারণ সার্কুলার ডেবট নিয়ন্ত্রণের শর্ত পালনে ব্যর্থতা। সংস্থাটির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের সর্বশেষ আলোচনায় উঠে আসে, বিদ্যুতের মূল্য ব্যাপক হারে বাড়ানোর পরও খাতটিতে সার্কুলার ডেবটের পরিমাণ লাখ ৪০ হাজার কোটি (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ৯৩১ কোটি ডলার) রুপির নিচে আটকে রাখা সম্ভব হবে না। বর্তমানে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে; দেশটির নীতিনির্ধারকরাও বলছেন, পাকিস্তান এরই মধ্যে দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া বাকি।

বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যমতে, পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশেও বিদ্যুৎ খাতে বেসরকারি উৎপাদন কেন্দ্রের (আইপিপিআধিপত্য বেশি। আবার দুই দেশে বিদ্যুতের ট্যারিফ নির্ধারণের ক্ষেত্রে শর্ত কাঠামোও অনেকটাই সমজাতীয়। ক্যাপাসিটি চার্জ, জ্বালানি ক্রয় মূল্য পরিশোধের শর্ত, ডলার ইনডেক্সেশন (ডলারে ট্যারিফ নির্ধারণ, স্থানীয় মুদ্রা পরিশোধ), সভরেন গ্যারান্টি এবং কর সুবিধার নীতিগুলোও প্রায় একই রকম। দুই দেশেই বছরের পর বছর ধরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো লাভজনকভাবে ব্যবসা করলেও দায় আর্থিক চাপে পড়েছে রাষ্ট্র জনসাধারণ। বিষয়টিকে এখনই নিয়ন্ত্রণে না আনলে পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশেও খাতটিতে ঋণের ভয়াবহ এক দুষ্টচক্র তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। পাকিস্তানে পরিস্থিতি এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এখনই সতর্ক না হলেও ভবিষ্যতে বাংলাদেশের পক্ষেও সংকট সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে ডলার সংকটের বর্তমান পরিস্থিতিতে ঝুঁকি দিনে দিনে আরো প্রকট হয়ে দেখা দিতে পারে।

একক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) লোকসান ঋণের বোঝা এখন মারাত্মক আকার নিয়েছে। এরই মধ্যে সংস্থাটির ক্রমপুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ ৬৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বিপুল লোকসানের পুরোটাই ভর্তুকি বা ঋণ আকারে দিয়েছে সরকার। গত অর্থবছরেও সরকারের কাছ থেকে সংস্থাটিকে ভর্তুকি নিতে হয়েছে ২৪ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা।

আবার সংস্থাটির কাছে সরকারের পাওনাও বকেয়া রয়েছে বিপুল পরিমাণ। শুধু ২০১৬-০৭ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যেই সংস্থাটিকে সরকার ঋণ দিয়েছে ৪৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। বিপিডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা এখন বিপিডিবির নেই। আবার ঋণের কারণে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে সংস্থাটির সঙ্গে কোনো ধরনের চুক্তিতে যেতে চাইছে না বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এজন্য বিপুল পরিমাণ ঋণকে ভর্তুকিতে রূপান্তরের প্রস্তাব দিয়েছে বিপিডিবি। তবে এতে সাড়া দেয়নি সরকার। লোকসান আর দায়ের ভারে বিপর্যস্ত প্রতিষ্ঠানটি এখন আইপিপিগুলোকেও পাওনা অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না। সংস্থাটির কাছে আইপিপিগুলোর পাওনা অর্থ বকেয়া রয়েছে চার মাস ধরে, যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা।

গোটা বিদ্যুৎ খাতেই গত এক দশকে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অভ্যন্তরীণ বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বিপুল মাত্রায় বেড়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকে বিদ্যুৎ খাতে একের পর এক প্রকল্প বাস্তবায়ন রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলো পরিচালনা করতে গিয়ে খাতটিতে শুধু সরকারেরই দায়-দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে লাখ ১৮ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকায়। এর মধ্যে খাতসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সরকারি বকেয়া পরিশোধ বাকি রয়েছে ৭৮ হাজার ৯১ কোটি টাকা। লাখ ৪০ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকার দায় তৈরি হয়েছে বিদেশী ঋণে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে গিয়ে।

বিদ্যুতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারার পাশাপাশি অপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত খাতটিকে এখন মারাত্মক চাপের মুখে ফেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক . রাশেদ আল মাহমুদ তীতুমীর বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কভিডকালে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঝুঁকির মধ্যে ছিল। সেই ঝুঁকি থেকে অর্থনীতি এখন চাপের মধ্যে পড়েছে। মূলত দুটি বিষয় চাপ তৈরি করেছেবিদ্যুৎ খাত পুঁজি পাচার। বিশেষ করে বিদ্যুৎ খাতে এখনকার পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার প্রধানতম কারণ হলো খাতটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি। পাশাপাশি অপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন থেকেও বেরিয়ে আসা যায়নি। চাপ যাতে সংকটে পরিণত না হয় সেজন্য চেষ্টা করাটা জরুরি। এরই মধ্যে বাংলাদেশের বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশকেও আইএমএফের দ্বারস্থ হতে হয়েছে।

এছাড়া দেশে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণ খেলাপি হওয়ারও নজির রয়েছে। জাতীয় সংসদে গত জানুয়ারিতে অর্থমন্ত্রী প্রকাশিত ঋণখেলাপিদের তালিকার শীর্ষে ছিল মাইশা গ্রুপের সিএলসি পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড নামের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির খেলাপি হওয়া ব্যাংক ঋণের পরিমাণ হাজার ৬৪০ কোটি টাকার বেশি।

বেসরকারি খাতের বিদেশী ঋণ নিয়েও রয়েছে বড় ধরনের ঝুঁকি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে বেসরকারি খাতে মোট বৈদেশিক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭৮৯ কোটি ২৪ লাখ ডলারে। এর মধ্যে ৫৩ শতাংশেরও বেশি নিয়েছে বিদ্যুৎ খাতের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো, যার পরিমাণ প্রায় ৪২৪ কোটি ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি)

বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনায় করা প্রক্ষেপণের অনেকগুলোই ঠিকমতো কাজ করেনি বলে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তাদের ভাষ্যমতে, দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো বড় হবে এমন পরিকল্পনাকে সামনে রেখে সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু এর বিপরীতে যে পরিমাণ চাহিদা হওয়ার কথা ছিল, তা তৈরি করা যায়নি। ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়লেও যথাযথ মাত্রায় এর বাণিজ্যিক ব্যবহারও নিশ্চিত হয়নি। অথচ যাচাই-বাছাই না করেই নানা প্রক্ষেপণের ওপর নির্ভর করে দেশী-বিদেশী ঋণে অনেকগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ক্রয় চুক্তি করা হয়েছে। ফলে প্রকল্পগুলো কমিশনিংয়ের পর এর অর্থনৈতিক সুফলের পরিবর্তে চাপ বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বুয়েটের অধ্যাপক . ইজাজ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘অনেকগুলো ভুল পদক্ষেপ নিয়ে সামনে এগিয়েছে বিদ্যুৎ খাত। এসব পদক্ষেপের কারণে বিপুল অংকের ঋণে জড়িয়ে পড়েছে দেশ, যা থেকে এখন আর বেরিয়ে আসার সুযোগ নেই। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের উচিত হবে আগামী -১০ বছর নতুন কোনো বিদ্যুৎ প্রকল্প না নেয়া। বরং এখন যেগুলো পাইপলাইনে আছে সেগুলো থেকে কীভাবে অর্থনৈতিক বাণিজ্যিক সাফল্য পাওয়া যায় সেই চেষ্টা করাটাই সমীচীন হবে।

তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতের অযৌক্তিক-উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে গিয়ে শ্রীলংকা, পাকিস্তান এমনকি আফ্রিকার অনেক দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। দেশগুলো কীভাবে ঋণে জর্জরিত হয়েছে, সে উদাহরণগুলোও আমাদের সামনে রয়েছে। আমরা কেন এসব দেখে সমাধানের পথে হাঁটছি না? আমাদের এখন উচিত হবে গ্যাসের ওপর জোর দেয়া, নিজস্ব কয়লা নিয়ে পরিকল্পনা করা। পাশাপাশি জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে বেরিয়ে এসে বিপিডিবির ওপর থেকে আর্থিক চাপ কমিয়ে দেয়াটাও প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরকারি-বেসরকারি বিদেশী বিনিয়োগে গড়ে ওঠা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বিদেশী ঋণে সরকারের সভরেন গ্যারান্টি দেয়া থাকে। এক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা কোনো কারণে ঋণের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে সে দায় আংশিক বা সম্পূর্ণ আকারে স্থানান্তর হয় সরকারের কাঁধে। বর্তমানে গোটা বিদ্যুৎ খাতে ধরনের ঋণের বিপরীতে সরকারের দেয়া গ্যারান্টির পরিমাণ ৪১ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা, যা দেশের মোট বৈদেশিক ঋণের ৫৬ শতাংশেরও বেশি। সরকারি গ্যারান্টির বিপরীতে বিদেশী ঋণে দেশে এখন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে ১৬টি। এর মধ্যে বৃহত্তমগুলো হচ্ছে পটুয়াখালী হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র খুলনা ৩৩০ মেগাওয়াট ডুয়াল ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো উৎপাদনক্ষম হয়ে উঠলে ঋণসহ সার্বিক অর্থনৈতিক চাপ আরো মারাত্মক আকার নেয়ার শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এরই মধ্যে ডলার সংকটে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা আমদানির বকেয়া পরিশোধ করতে গিয়ে মারাত্মক অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। আবার প্রকল্পের ঋণের কিস্তি পরিশোধ নিয়েও এরই মধ্যে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রূপপুর, রামপাল, পটুয়াখালী পায়রার নির্মীয়মাণ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো বৃহদায়তনের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে এলে চাপ আরো জোরালো হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত এক দশকে দেশের বিদ্যুৎ খাতে অবকাঠামো, উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে রাশিয়া, চীন, ভারত, জাপানের মতো দেশগুলো থেকে উচ্চসুদে বিপুল পরিমাণ বাণিজ্যিক ঋণ নিয়েছে সরকার। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে এসব প্রকল্প উৎপাদনে যাওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে ২০২৬ ২০২৭ সাল থেকেই এসব প্রকল্পের বিপরীতে বিপুল পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করতে হবে সরকারকে।

বিদ্যুতের নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আগামী কয়েক বছর অনেকগুলো জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অবসরে যাবে। এরই মধ্যে কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করা হয়েছে ঠিকই। সেগুলোকেও বিদ্যুৎ দেয়া সাপেক্ষে অর্থ পরিশোধের শর্ত দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ জ্বালানি নিয়ে সমন্বিত একটি মহাপরিকল্পনা হচ্ছে। ফলে সামনের দিনগুলোয় আমরা এক ধরনের ইতিবাচক অবস্থানে আসতে পারব বলে বিশ্বাস করি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন