ক্যারিয়ার ক্লাব

ক্যারিয়ার ক্লাব দক্ষতার বিকাশ ঘটায়

চাকরিপ্রার্থী ও চাকরিদাতার মাঝে সেতুবন্ধ রচনা করে বিভিন্ন ক্যারিয়ার ক্লাব আয়োজিত চাকরি মেলা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং এবং ইন্টারনেট অব থিংসের মতো প্রযুক্তিগত অগ্রগতি মানব জীবনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটিয়েছে। ফলস্বরূপ, দ্রুত পরিবর্তনশীল এ বিশ্বে সফল হতে হলে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই সঠিক দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আর এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ক্যারিয়ার ক্লাব। শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা, জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা বিকাশের লক্ষ্যে তৈরি হয় ক্যারিয়ার ক্লাব। এ ক্লাবগুলো বিভিন্ন সেমিনার, নেটওয়ার্কিং ইভেন্ট, কর্মশালা এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করে। এগুলো তাদের ব্যক্তিগত জীবন গঠনে সহায়তা করে। পেশাদার প্রোফাইল তৈরি করতে দিকনির্দেশনা দেয়। ব্যবসায়িক জগতে সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান, দক্ষতা অর্জন এবং আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করে। সাধারণত ক্যারিয়ার ক্লাবগুলোর কর্মপরিধি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত প্রায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই বিরাজমান।

ক্যারিয়ার ক্লাবগুলোয় যুক্ত থাকার অনেক সুবিধা আছে। শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় দক্ষতার বিকাশ ঘটায়। বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতা বা সফট স্কিলস যেমন যোগাযোগ, সমস্যা সমাধান, দলবদ্ধভাবে কাজ এবং নেতৃত্বের বিকাশে সহায়তা করে। একবিংশ শতাব্দীতে যেকোনো পেশায় সফলতা অর্জনে এ দক্ষতাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্লাবগুলো শিক্ষার্থীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রদান করে। অনেক ক্লাব বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপ এবং অন্যান্য বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ প্রদান করে। উদাহরণস্বরূপ, বিপণনে আগ্রহী একজন শিক্ষার্থী একটি মার্কেটিং ক্লাবে যোগ দিয়ে স্থানীয় ব্যবসার জন্য একটি বিপণন পরিকল্পনা তৈরিতে কাজ করতে পারে। এ ধরনের ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের জন্য মূল্যবান। এর মাধ্যমে তারা শ্রেণীকক্ষে শেখা তাত্ত্বিক জ্ঞান বাস্তব বিশ্বের পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করতে পারে। চাকরির বাজারে কী প্রয়োজন তা বুঝতে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করে ক্যারিয়ার ক্লাব। নিয়োগকর্তারা যে প্রয়োজনীয় দক্ষতাগুলো খুঁজছেন তা বিকাশে সহায়তা করে।

ক্যারিয়ার ক্লাব ব্যবসায় উদ্যোগ সম্পর্কে জানার সুযোগ সৃষ্টি করে। কীভাবে একটি ব্যবসা শুরু এবং সফলভাবে পরিচালনা করা যায় সে সম্পর্কে পরামর্শ দেয় ক্যারিয়ার ক্লাব। প্রশিক্ষণের আয়োজন করে। কর্মশালা, সেমিনার ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ স্থাপন করে। এতে শিক্ষার্থীরা অনুপ্রাণিত হয়। যারা উদ্যোক্তা  হতে চান তাদের জন্য এটি উপকারী। তারা সফল উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে শিখতে পারে। ব্যবসার জগতে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি অর্জন করতে পারে।

ক্যারিয়ার ক্লাবগুলো শিক্ষার্থীদের সামাজিক দায়বদ্ধতা পালনেও উদ্ধুদ্ধ করে। ক্লাবের সদস্যরা বিভিন্ন সামাজিক কাজে জড়িত থাকে। শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণার ক্ষেত্রেও অবদান রাখছে ক্যারিয়ার ক্লাব। তাই শিক্ষার্থীদের স্বার্থে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত ক্যারিয়ার ক্লাবগুলোয় বিনিয়োগ করা। আমি আমার বাস্তব জীবনে দেখেছি, যেসব শিক্ষার্থী ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত এবং নিয়মিত বিভিন্ন কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন, তারা অন্য শিক্ষার্থীদের থেকে বেশি দক্ষতাসম্পন্ন। ক্যারিয়ারেও তারা সফল।

ক্যারিয়ার ক্লাবের সুবিধা অনেক। তবে তা নিশ্চিত করতে সাধারণ শিক্ষার্থী এবং ক্লাব কমিটি উভয়ের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। ক্লাব পরিচালনাকারীদের অবশ্যই শিক্ষার্থীদের মানসম্মত পরামর্শ, প্রাসঙ্গিক কর্মশালা এবং নেটওয়ার্কিং সুযোগ প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। ছাত্রদের উচিত ক্লাবের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা। প্রদত্ত সুযোগের সদ্ব্যবহার করে আত্মোন্নয়নে ব্যবহার করার জন্য তাদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।


ড. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ: ডিন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন