বিএসইসি-সিএসইর মানি লন্ডারিং কর্মশালায় বক্তারা

পুঁজিবাজারের মাধ্যমে অর্থ পাচার আর্থিক অপরাধীদের কাছে জনপ্রিয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুঁজিবাজারের মাধ্যমে অর্থ পাচার আর্থিক অপরাধীদের কাছে জনপ্রিয় একটি প্রক্রিয়া। পুঁজিবাজার সবসময়ই অর্থ পাচারকারীদের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে থাকে। তাই এখানে কোনো ধরনের অস্বাভাবিক লেনদেন হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। গতকাল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) পিএলসির উদ্যোগে আয়োজিত মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থায়ন প্রতিরোধবিষয়ক এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

সিএসইর চট্টগ্রামে প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এ কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. রুমানা ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মীর মোশাররফ হোসেন চৌধুরী। অন্যদের মধ্যে সিএসইর পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম ফারুক, প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (সিআরও) মোহাম্মদ মেহেদী হাসানসহ সিএসইর বিভিন্ন বিভাগের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালায় সিএসইর সব স্টক ব্রোকার ও স্টক ডিলাররা উপস্থিত ছিলেন। 

স্বাগত বক্তব্যে সিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম ফারুক বলেন, প্রায়ই মানি লন্ডারিংকে শুধু ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করা হয়। কিন্তু বাস্তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারীসহ ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠানে অর্থ লেনেদনের ক্ষেত্রে এ সংবদেনশীল মানি লন্ডারিং প্রক্রিয়াটির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। পুঁজিবাজারের মাধ্যমে অর্থ পাচার আর্থিক অপরাধীদরে মধ্যে জনপ্রিয় একটি প্রক্রিয়া। পুঁজিবাজার সবসময়ই অর্থ পাচারকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে থাকে। এ কারণেই পুঁজিবাজারের মধ্যস্থতাকারীদের সবসময় উত্তম ব্যবসায়িক নীতি অনুশীলন করা উচিত। এক্ষেত্রে প্রথমেই নিজের গ্রাহককে জানতে হবে। গ্রাহক সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকা কার্যকর একটি পদ্ধতি। এর মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও এর কর্মকর্তারা অর্থ পাচারের প্রচেষ্টা বা কারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের চিনতে সক্ষম হবেন।

মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থায়ন প্রতিরোধ আইনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. রুমানা ইসলাম বলেন, ‘‌পুঁজিবাজারবিষয়ক মানি লন্ডারিংয়ের ব্যাপারটিকে ভালোভাবে জানতে হবে এবং সবসময় সচেতন থাকতে হবে। কোনো ধরনের অস্বাভাবিক লেনদেন হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। একজন ক্যামেলকো হিসেবে পুঁজিবাজারে মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়গুলো আপনি ভালোভাবে জানবেন এবং যে কোনো ধরনের অস্বাবাভিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে বিএসইসিকে রিপোর্ট করবেন। অনেক ধরনের নিয়ম-কানুন আমাদের রয়েছে। তবে মূল দুটি আইন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অ্যাক্ট, ১৯৯৩ অনুযায়ী পুঁজিবাজারের অপরাধগুলো হলো মার্কেট ম্যানিপুলেশন ও ইনসাইডার ট্রেডিং। এ দুটি মূল অপরাধ ছাড়াও অনেক ছোট বড় অপরাধ রয়েছে। যেকোনো সন্দেহজনক লেনদেন কিন্তু মানি লন্ডারিং নয়। মানি লন্ডারিংয়ের যে সংজ্ঞা আছে সে অনুযায়ী যদি কোনো অপরাধ বা লেনদেন সংঘটিত হয় তখনই তাকে মানি লন্ডারিং আইনের আওতাভুক্ত করা যাবে। এমন কোনো লেনদেন যা সন্দেহজনক মনে হচ্ছে, হতে পারে একটি বড় সংখ্যার শেয়ার হঠাৎ করে আস্বাভাবিক দামে হাতবদল হচ্ছে। কিংবা কয়েকজনের মধ্যে নিয়মিত লেনদেন হচ্ছে বা কোনো স্বচ্ছ উৎসবিহীন লেনদেন হচ্ছে তখন দ্রুত সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন । এছাড়া যখন কেনো নতুন গ্রাহক নিয়ে কাজ করবেন তখনো আপনারা সর্তক থাকবেন।’

বিশেষ অতিথি বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মীর মোশাররফ হোসেন চৌধুরী মানি লন্ডারিং-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রণীত বিএফআইইউ সার্কুলার ও সিএমআই সিস্টেমের ওপর তার উপস্থাপনা প্রদান করেন। এছাড়া সুবিধাভোগী ব্যবসা, মূল্যসংবেদনশীল তথ্য ও সংশ্লিষ্ট বিবিধ বিষয়ে বিএসইসির মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থায়ন প্রতিরোধ উইংয়ের অন্যান্য কর্মকর্তা আলোচনা করেন। সমাপনী বক্তব্যে সিএসইর সিআরও মোহাম্মদ মেহেদী হাসান সবাইকে কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সব নিয়মাবলি মেনে পুঁজিবাজারের ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য অনুরোধ জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন