সলিমুল্লাহ মুসলিম হল

ছাত্রাবাসের হারানো ঐতিহ্য ফেরাতে পদক্ষেপ নেয়া হবে

অধ্যাপক . মো. ইকবাল রউফ মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের নবনিযুক্ত প্রাধ্যক্ষ। সম্প্রতি ঐতিহ্যবাহী ছাত্রাবাসের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে

ব্রিটিশ শাসনামল থেকে দেশ ভাগ এবং পরবর্তী সময়ে স্বাধিকার আন্দোলন তিন সময়ে হলের শিক্ষার্থীদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক নানা ভূমিকায় দেখা গেছে। শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী ছাত্রাবাসের বর্তমানে কী অবস্থা?

স্বাধীন বাংলাদেশে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল আমাদের ঐতিহ্যগত সবদিকে ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবং পড়াশোনার ক্ষেত্রে আগের ধারাবাহিকতা এখনো অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে কেবল দুটো শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা হলে রয়েছেন, স্নাতক চতুর্থ বর্ষ স্নাতকোত্তর। কারণে অন্যান্য হলের তুলনায় আমাদের ছাত্রসংখ্যা কম। তথাপি বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, বিতর্ক ইত্যাদিতে আমাদের ছাত্রদের অংশগ্রহণের হার উল্লেখযোগ্য। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে কলা, সামাজিক বিজ্ঞান এবং ব্যবসায় অনুষদের ছাত্ররা থাকে। প্রতিটি অনুষদের ছাত্ররাই মেধাবী। সবক্ষেত্রে তারা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখছে। তারা প্রত্যেকে ভালো করছে।

শিক্ষার্থীদের জন্য এখানে কী কী সুযোগ-সুবিধা রয়েছে?

ছাত্রদের সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য হল প্রশাসন সচেতনভাবে কাজ করছে। তাদের জন্য ক্যান্টিন, ডাইনিং রুম, দুটি রিডিং রুম রয়েছে। সেগুলোয় ২৪ ঘণ্টা নির্বিঘ্নে পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে। এটি উন্মুক্ত। পত্রিকা রুম আছে। সেখানে শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকা, সাময়িকী ইত্যাদি নিয়মিত রাখা হয়। ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় যারা অংশগ্রহণ করে, তাদের সব ধরনের ক্রীড়া সামগ্রী এবং সুবিধা সরবরাহ করা হয়। শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হলে দুজন স্বাস্থ্যকর্মী তাদের নিয়মিত সেবা দিয়ে থাকেন। রুমে খাবার, ওষুধ সরবরাহ, মেডিকেলে নিয়ে যাওয়াসহ সব ধরনের প্রয়োজনীয় সেবা দেন তারা। এছাড়াও মাত্র টাকায় শিক্ষার্থীরা লন্ড্রি সেবা পেয়ে থাকেন। শিক্ষার্থীদের রুম থেকে জামা-কাপড় সংগ্রহ করে লন্ড্রি শেষে আবার রুমে দিয়ে যাওয়া হয়।

সলিমুল্লাহ মুসলিম হলকে জাদুঘরে রূপান্তর করার ব্যাপারে কথা শোনা যাচ্ছে। ব্যাপারে জানতে চাই।

আমি আপাতত কিছু বলতে পারছি না। কারণ আমার সঙ্গে এখনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো কথা হয়নি। আমাকে অফিশিয়ালি এখনো কিছু জানানো হয়নি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমিও বিষয়ে শুনেছি। এসএম হলের ভবনগুলো পুরনো হয়ে গেছে। কিছু কিছু স্থান ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এগুলো সংস্কারের ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব ব্যাপারে প্রশাসনিকভাবেই সিদ্ধান্ত হবে। আমি সদ্য হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছি। সুতরাং প্রশাসন ব্যাপারে যখন আলোচনা করবে, আমিও আশা করি সেখানে থাকব। তখন বিষয়টি আমি জানতে পারব।

হল থেকেই একসময় ম্যাগাজিন, পত্রিকা প্রকাশ হতো। সমাজসেবামূলক কার্যক্রম হতো। নাট্যচর্চা, সংগীতচর্চা, সাহিত্যচর্চাসহ সব অঙ্গনেই শিক্ষার্থীরা অগ্রভাগে ছিল, কিন্তু সে চর্চা এখন স্তিমিত, এর কারণ কী?

সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য প্রয়োজন একটি মুক্তমন। পর্যাপ্ত সময় দরকার। বর্তমানে আমাদের পড়াশোনার পদ্ধতি উন্নত হয়েছে। ছাত্ররা সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ক্লাস করে। এর মধ্যে সিংহভাগ ছাত্র নিজেদের খরচ চালানোর জন্য টিউশনি করে। পরিবার হয়তো তাদের সম্পূর্ণ খরচ বহন করতে পারে না। এখানকার বেশির ভাগ ছাত্র গ্রাম থেকে আসে। জীবনধারণের জন্য তাদের একাধিক টিউশনি করতে হয়। সারা দিন ক্লাস করে, সন্ধ্যায় টিউশনি করে হলে এসে তাকে ক্লাসের পড়া তৈরি করতে হয়। এতকিছু করার পরে একজন ছাত্রের আসলে খুব বেশি সময় থাকে না। সুতরাং এসব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হওয়ার আগ্রহ থাকলেও তাদের পক্ষে তা সম্ভব হয় না। তথাপি যতটুকু সম্ভব তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে।

ছাত্রাবাসের হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে নবনিযুক্ত প্রাধ্যক্ষ হিসেবে আপনি কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন?

ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একেবারে প্রথম দিককার হল এসএম হল। সুতরাং হলের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য আমি অবশ্যই পদক্ষেপ নেব। প্রতিটি ক্ষেত্রই আমি পরীক্ষা করে দেখব বর্তমানে কী অবস্থায় আছে। সংগীত, নাটক, সাহিত্য ইত্যাদি সাংস্কৃতিক সেবামূলক কর্মকাণ্ডের যদি কোনো কমিটি থেকে থাকে, যদি তাদের মেয়াদ থাকে, তাদের সঙ্গে আমি কথা বলব। তাদের পরিকল্পনা শুনব। তাদের কাজে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার ইচ্ছা আমার আছে। তবে একটি হলে এসব কার্যক্রম চালানোর জন্য আর্থিক সচ্ছলতা গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু হলে এখন কোনো ছাত্র ভর্তি হচ্ছে না, সেহেতু আমাদের বাজেটে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই আমাকে আমার সক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এখানেই অন্য ১৭টি হলের সঙ্গে আমার হলের পার্থক্য। ফান্ড না থাকলে সব কাজ সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব নয়। যেহেতু আমাদের হলের গত তিন বছর ধরে আয় নেই এবং আগামী দুই বছরেও হবে না, তাই আমাকে ব্যয়ের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। মৌলিক চাহিদাগুলো আগে পূরণ করতে হবে। তারপর অন্য কাজগুলো সাধ্যানুযায়ী করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন