জীববিজ্ঞানের নতুনতম একটি শাখা হলো বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং। বর্তমান সময়ে মানবকল্যাণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে করোনা মহামারীর সময় বিশ্বে কোটি মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে, দ্রুততম সময়ে ভ্যাকসিন আবিষ্কার ও আরটিপিসিআর ব্যবহার করে করোনা ভাইরাসের ইনফেকশন শনাক্তকরণে এর অবদান অনবদ্য। বাংলাদেশে একাডেমিকভাবে বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রথম যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৪-৯৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর ২০০০ সালের পর থেকে পর্যায়ক্রমে দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা শুরু হয়।
শুরুর দিকে দেশে চাকরির ক্ষেত্র সে রকম তৈরি না হলেও বিগত ২৫ বছরে দেশে অনেক চাকরি ও গবেষণার
সুযোগ তৈরি হয়েছে। বেড়েছে চাহিদা ও কর্মসংস্থান। বিশেষ করে সরকারি সব গবেষণা প্রতিষ্ঠানে বায়োটেকনোলজিস্ট পদ তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশ শিল্প ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে চাকরি করছেন এ বিভাগ থেকে পাস করা গ্র্যাজুয়েটরা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন
গ্লোব, ইনসেপ্টা, বেক্সিমকো ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালের মতো ওষুধ কোম্পানিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন
দেশের জীব প্রযুক্তিবিদরা। সাভারে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি। তবে একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশে জীব প্রযুক্তির আরো প্রসার ঘটানোর নিমিত্তে গবেষণার সুযোগ ও কর্মক্ষেত্র আরো বাড়বে।
জীববিজ্ঞানের এ বিভাগটি অন্যান্য বিভাগ থেকে বেশ আলাদা। যেমন আপনি ফিশারিজ নিয়ে পড়াশোনা করলে শুধু মাছসম্পর্কিত বিষয় নিয়ে গবেষণা ও চাকরির সুযোগ
পাবেন। কিন্তু বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে প্লান্ট, অ্যানিমেল ও মাইক্রোবস—এ তিনটি বিষয়ই সমান গুরুত্ব দিয়ে পড়ানো হয়। স্নাতক পর্যায়ে পড়তে হবে বায়োকেমিস্ট্রি,
মলিকিউলার বায়োলজি, বায়োইনফরমেটিক্স, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ফিজিওলজি, রিকম্ববিন্যান্ট ডিএনএ টেকনোলজির মতো আরো অনেক অ্যাডভান্সড বিষয়। যে কারণে স্নাতক শেষ করার পরই অনেক শিক্ষার্থী স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমান। এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো পাঠ্যক্রমে লিপিবদ্ধ উদ্ভিদ, প্রাণী ও অনুজীব বিষয়ে থিওরি ও প্র্যাকটিক্যাল জ্ঞান থাকায় মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যায়ে তারা নিউরোলজি,
ক্যান্সার বায়োলজি, ড্রাগ ডিজাইন ও ডিসকাভারি, ন্যানোবায়োমেডিসিনসহ সব ধরনের ফিল্ডে উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও চাকরির সুযোগ পান।
এ বিষয় এ স্নাতক শেষ করে বিদেশে পাড়ি জমানো অসংখ্য গ্র্যাজুয়েটের অনেকে শিক্ষকতা ও গবেষণা করছেন অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, টেনেসি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুধু কি তাই, বিশ্বসেরা গবেষকের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে চাকরি করছেন মার্ক, সার্ভিয়ার, সেরা প্রগনোসটিকসের মতো খ্যাতনামা বায়োটেক কোম্পানিতে। যারা বায়োটেক প্রডাক্ট, এনজাইম ও ভ্যাকসিন প্রস্তুত করে থাকেন।
মোদ্দা কথা হলো, জীবপ্রযুক্তি বিষয়টি এখন পছন্দের প্রথম দিকের একটি সাবজেক্ট। কিন্তু অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেতে হবে যেখানে পড়াশোনা
ও গবেষণার পর্যাপ্ত সুযোগ এবং পরিবেশ রয়েছে। হোক সে পাবলিক অথবা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। ভালো সিজিপিএসহ ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। সেই সঙ্গে দরকার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভালো মানের গবেষণা বা থিসিস। তাহলেই পৌঁছানো যাবে সেই অভীষ্ট লক্ষ্যে। এ বিভাগে যারা পড়তে ইচ্ছুক তাদের অবশ্যই মেধাবী, ধৈর্যশীল ও পরিশ্রমী হতে হবে এবং গবেষণার প্রতি থাকতে হবে প্রবল আগ্রহ।
একজন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট, রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট, জুনিয়র গবেষক, রিসার্চ ইঞ্জিনিয়ার, ল্যাব ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতে পারেন এবং গবেষকদের একটি দলের নেতৃত্ব দিতে পারেন। আমেরিকায় গড়ে একজন বায়োটেকনোলজিস্টের বেতন ৮৯ হাজার মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৯৫ লাখ টাকা। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশ এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্কলারশিপ প্রোগ্রামের আওতায় ফুল ফ্রি স্কলারশিপ দিয়ে থাকে এবং এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পড়তে এবং গবেষণা করতে পারে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি সাবজেক্টে সমৃদ্ধ এবং বিখ্যাত দেশগুলোর মধ্যে সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, স্কটল্যান্ড ও ডেনমার্ক অন্যতম। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশেও ছোট-বড় বায়োটেক কোম্পানি গড়ে উঠেছে যেখানে চাকরির সুযোগ তৈরি হয়েছে গ্র্যাজুয়েটদের। এছাড়াও বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিসহ বিভিন্ন রিসার্চ ফাউন্ডেশন এবং মেডিকেল রিসার্চ সেন্টারগুলোয় চাকরির সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য অনেক এগ্রিকালচারাল, ফারমাসিউটিক্যাল এবং মেডিকেল রিসার্চ
ইনস্টিটিউট গড়ে উঠেছে। এখানে রিসার্চার
কিংবা রিসার্চ সহকারী এবং সহযোগী পদে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। পুরো বিশ্বব্যাপী জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজির অকল্পনীয় সুযোগ এবং চাহিদা আছে। একবিংশ শতাব্দী হতে
চলেছে বায়োটেকনোলজিস্টদের।
অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল হাসান
চেয়ারম্যান, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ,
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়