সাক্ষাৎকার

বিদেশে জীবপ্রযুক্তিবিদদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি

. খোন্দকার মোয়াজ্জেম হোসেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক। সম্প্রতি  বিষয়ে পড়াশোনা গবেষণার নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে

দেশে সর্বপ্রথম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে একাডেমিক পড়াশোনা শুরু হয়। বিভাগটির প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষকদের মধ্যে আপনিও একজন।  বিভাগটির পথচলা সম্পর্কে জানতে চাই...

১৯৯৫ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োটেকনোলজি বিষয়ে চার বছরের ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন বায়োটেকনোলজি প্রোগ্রাম চালু হয়। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সরকার সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিন চালুর সিদ্ধান্ত নিলে ২০০৩ সালে ডিসিপ্লিনের নাম পরিবর্তন করে বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং নামকরণ করা হয়। পড়াশোনায় নতুন ডিসিপ্লিনটি চালুর লক্ষ্য ছিল গুণগত শিক্ষার মাধ্যমে বায়োটেকনোলজিতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা। যারা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষা, গবেষণা এবং শিল্প বাণিজ্যে অবদান রাখতে পারে।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি কী?

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি হলো বহুমুখী প্রয়োগিক বিজ্ঞান, যেখানে বিভিন্ন জীব এবং তাদের অংশবিশেষ (প্লান্ট, অ্যানিমেল, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস ইত্যাদি) ব্যবহার করে সঠিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট বাণিজ্যিক পণ্য তৈরি এবং পরিবেশ বজায় রেখে তার বিপণন এবং ব্যবহার। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সব ধরনের জেনেটিক্যালি মডিফায়েড ফসল এবং খাদ্য, উন্নত জাতের গবাদিপশু এবং পোলট্রি, কোয়েল, মাছ এবং অন্যান্য ফল, সবজি, ডেইরি, বেভারেজসামগ্রী ইত্যাদি।

এছাড়া বেকারি এবং কনফেকশনারি প্রডাক্টস, এনজাইমস, হরমোনস, দুরারোগ্য ব্যাধি উপশমে রেয়ার প্রোটিন, মানুষ এবং প্রাণীর রোগ প্রতিরোধে সব ধরনের ভ্যাকসিন। জিন থেরাপি, অ্যারোমেটিক্স প্রডাক্টস, কৃত্রিম গ্রাফটস বা চামড়া, বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি, টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উন্নত জাতের ফল এবং ফসল, ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন জাতের প্রানী তৈরি। ট্রানজেনিক অ্যানিমেলস, ট্রানজেনিক ক্রপস, ট্রানজেনিক ফিশ তৈরি এবং এর যথাযথ ব্যবহার।

ব্যবহারিক দিকগুলো কী কী?

বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবহারিক দিক অনেক। জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ার্ড ক্রপস অ্যানিমেলস, এগ্রো-কেমিক্যালস, অর্গানিক এগ্রিকালচার, মেডিসিনস, ভ্যাকসিনস, এনজাইমস, হরমোনস বিভিন্ন অ্যান্টিবডিস প্রোটিন, অর্গানস, মিট, ফিশ, ভেজিটেবলস, বেভারেজ, ডিজিজ রেজিস্ট্যান্স ক্রপস অ্যানিমেলস, স্ট্রেস রেজিস্ট্যান্স ক্রপস, সল্ট টলারেন্স ক্রপস, ড্রট বা খরা রেজিস্ট্যান্স ক্রপস, গোল্ডেন রাইস, বিটি-বেগুন, বিটি-টমেটো  তৈরি এবং পরিবেশ দূষণ নিরাময়ে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার ইত্যাদি।

দেশে গবেষণার সুযোগ কেমন এবং পর্যাপ্ত ল্যাব সুবিধা রয়েছি কি?

বাংলাদেশে বর্তমানে বিভিন্ন পাবলিক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি স্বায়ত্তশাসিত গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষা গবেষণার পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট, প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট, মত্স্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, বন গবেষণা ইনস্টিটিউট, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটসহ বেশকিছু প্রাইভেট ফুড ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিতে গবেষণাকাজ চলছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সরকারি-বেসরকারি দেশী-বিদেশী দাতা সংস্থার আর্থিক সহায়তায় গবেষণাকাজ পরিচালিত হচ্ছে।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজিতে শিক্ষার্থীরা কেন পড়বেন, চাকরির বাজারে চাহিদা কেমন?

এটি অত্যাধুনিক এবং যুগোপযোগী একটি বিষয়। বলা হয়ে থাকে দিস সেঞ্চুরি ইজ দ্য সেঞ্চুরি অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড আইসিটি। দেশে বায়োটেকভিত্তিক ইন্ডাস্ট্রি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। বর্তমানে ফার্মাসিউটিক্যাল ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ, সরকারি স্বায়ত্তশাসিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং বেশকিছু আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ প্রাইভেট, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি এবং এনজিওতে গ্র্যাজুয়েটদের কর্মসংস্থান হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠানে বায়োটেকনোলজি ডিভিশন রয়েছে। সেসব প্রতিষ্ঠানে বায়োটেকনোলজি গ্র্যাজুয়েটদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করলে তাদের কর্মসংস্থান আরো বাড়বে।

এছাড়া ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজিতেও গ্র্যাজুয়েটদের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। বিদেশে উচ্চশিক্ষা চাকরির ক্ষেত্রে আমাদের গ্র্যাজুয়েটদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন