জীব প্রযুক্তি ও জিন প্রকৌশল

এনএসইউতে দেশের প্রথম জিনোম রিসার্চ ইনস্টিটিউট

শফিকুল ইসলাম

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম রিসার্চ ইনস্টিটিউটে গবেষকরা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

জিনোমিক গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচনের স্বপ্ন বুনেছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় (এনএসইউ) ২০১৭ সালে বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে চালু করে জিনোম রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এনজিআরআই) উদ্দেশ্য জিনোমিক মেডিসিনে অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশসহ বিশ্বের মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা এবং উদীয়মান নতুন প্রতিভাকে প্রশিক্ষণ দেয়া। এনএসইউর জিনোম রিসার্চ ইনস্টিটিউট সফলভাবে বেশ কয়েকটি প্যাথোজেনিক ব্যাকটেরিয়ার পুরো জিনোমকে সিকোয়েন্স করতে সক্ষম হয়েছে। এনজিআরআই বিভিন্ন ক্যান্সার চিহ্নিত করার জন্য অনেক প্রটোকলকে অপ্টিমাইজ করছে। জনস হপকিন্স, ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড, ইউনিভার্সিটি অব নটিংহাম, আইসিডিডিআরবি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্বের খ্যাতনামা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। গবেষকরা প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার (গর্ভাবস্থার একটি ব্যাধি) প্রাথমিক কারণ নির্ণয়ে অন্য মার্কারগুলো শনাক্ত করছে। এনজিআরআই চিকুনগুনিয়া এবং ডেঙ্গু ভাইরাসসহ পুনরুত্থিত আদি ভাইরাল প্যাথোজেনগুলোর সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্সিং প্রক্রিয়া শুরু করছে।

প্রথম বাংলাদেশী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এনএসইউ কভিড ভাইরাসের ৫২টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং সম্পন্ন করে। এছাড়া প্রথমবারের মতো দেশে পয়োনিষ্কাশিত পানিতে সার্স-কভ- (SARS-CoV-2)- এর জেনেটিক মেটারিয়ালের উপস্থিতি তারাই চিহ্নিত করেছে। এর মাধ্যমে কোনো এলাকার জনগোষ্ঠীর মাঝে কভিড-১৯ মহামারী রয়েছে কিনা সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

সম্প্রতি ক্লিনিক্যাল নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ার সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ করে অন্তত একটি ব্যাকটেরিয়া পরীক্ষিত সব অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে অকার্যকর দেখিয়েছে। এখানকার গবেষণার ফল সায়েন্স, সায়েন্টিফিক রিপোর্টস, সায়েন্স অব টোটাল এনভায়রনমেন্টের মতো বিশ্বের প্রথম সারির বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। ইনস্টিটিউট কভিড-১৯ প্রতিরোধে মাস্কের কার্যকারিতা প্রমাণে সবচেয়ে বড় ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন করেছে। এতে এনএসইউর গবেষকদের সঙ্গে কাজ করেছেন আমেরিকার ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়, স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।

এনজিআরআইয়ের আরো একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকল্পে বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কভিড-১৯-এর প্রভাব নিয়ে কাজ করেছে। অতিসম্প্রতি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে, এমন নতুন ড্রাগ উদ্ভাবনের গবেষণা শুরু করেছে। এমআরসি-ইউকের গবেষণা অনুদানে এনএসইউ, আইইডিসিআর, যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় একত্রে গবেষণাটি শুরু করেছে। এনএসইউর পক্ষে গবেষণাটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন এনজিআরআইরের মুখ্য গবেষক সহযোগী অধ্যাপক . মাকসুদ হোসেন অধ্যাপক . হাসান মাহমুদ রেজা।

বিভিন্ন মৌলিক গবেষণা পরিচালনার জন্য ২০২০-২২ সালে এনএসইউর এনজিআরআই এবং অন্যান্য সহযোগী গবেষণা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা প্রায় ২০ কোটি টাকা অর্থায়ন করে। এনজিআরআই বর্তমানে নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং, হাই-থ্রুপুট বায়োলজি, মেটাজেনমিক্স, জিনোটাইপিং এবং সিঙ্গেল সেল জিনোমিক্স বিষয়ে বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। ২০২২ সালের জুন মাসে এনএসইউর উদ্যোগে জিনোমিক্স, ন্যানোটেক এবং বায়োইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে বিশ্বের ১৮টি দেশ থেকে শতাধিক গবেষণাপত্র উপস্থাপিত হয়। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন গবেষণার মাধ্যমে এশিয়ার শীর্ষ ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্থান করে নিতে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি জিনোম রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং স্কুল অব লাইফ সায়েন্স দৃঢ়প্রত্যয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।

এনএসইউর স্কুল অব হেলথ অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সের ডিন অধ্যাপক . হাসান মাহমুদ রেজা বলেন, জটিল রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এখন উন্নত বিশ্বে পার্সোনালাইজড মেডিসিনের প্রচলন হয়েছে। আমাদের দেশেও ইনস্টিটিউট থেকে রোগীর ডিএনএ নমুনা জিনোম সিকোয়েন্স করে জটিল রোগ নির্ণয় এবং যথাযথ কার্যকর ওষুধের ব্যবস্থাপত্র দেয়া সম্ভব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন