সুমন কল্যাণপুর

কণ্ঠ শুনে শ্রোতারা ভাবতেন লতা মঙ্গেশকর গাইছেন

ফিচার ডেস্ক

সুমন কল্যাণপুর ছবি: দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

দেব আনন্দ-ওয়াহিদা রহমান জুটির ১৯৬২ সালের সিনেমা ‘‌বাত এক রাত কি’। এ সিনেমার জন্য গান লিখেছিলেন মজরুহ সুলতানপুরী। ‘‌না তুম হামে জানো’ গানটিতে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের প্লেব্যাক নিশ্চিত ছিল। সংগীত পরিচালক শচীন দেব বর্মণ তখন খুঁজছিলেন নতুন এক নারীকণ্ঠ। গানটি পরবর্তী সময়ে তুমুল জনপ্রিয় হয়। রেডিওতে নানা সময়ই অনুরোধ আসত এর প্রচারের জন্য। তখন পর্যন্ত সবার ধারণা ছিল হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে এ গানে কণ্ঠ দিয়েছেন লতা মঙ্গেশকর। কিন্তু আদতে এ গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন সুমন কল্যাণপুর। পরবর্তী সময়ে বলিউডের বহু সিনেমায় প্লেব্যাক করেছেন তিনি। কিন্তু নানা কারণেই তার গানগুলো শোনে শ্রোতারা মনে করত লতা মঙ্গেশকর গাইছেন।

সুমন কল্যাণপুরের কণ্ঠ সম্পর্কে প্রবীণ সংগীত সমালোচক রাজু ভারতন বলেন, তার গান শোনে অনেক লতাভক্তও ধরতে পারেনি, এটি লতার গান নয়। একবার দূরদর্শনে ‘‌না না কারতে পেয়াল কার ব্যায়ঠে’ গানটির কণ্ঠদাতা হিসেবে লতা মঙ্গেশকরের নাম বলা হয়েছিল। কেউ তার প্রতিবাদ করেনি। ২০ বছর বয়সী চারুল হেমান্ডি নামের একটি মেয়ে ‘‌পরাশর ভারতী’ অফিসে ফোন করে জানান, গানটি তার মা সুমন কল্যাণপুরের গাওয়া। এক সাক্ষাৎকারে চারুল সে স্মৃতি স্মরণ করে বলেন, ‘‌কেউ আমার কথা বিশ্বাস করেনি। সবাই ভেবেছে গানটি লতাজিরই গাওয়া। ১৯৬৯ সালে ব্রহ্মচারী সিনেমার বিখ্যাত গান ‘‌আজ কাল তেরে মেরে পেয়ার কে’-এর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল।’

সুমন কল্যাণপুরের ক্ষেত্রে এমন হওয়ার বেশকিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, তার কণ্ঠ লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠের অনুরূপ। অন্যদিকে তিনি নিজে প্রচারবিমুখ। লতা মঙ্গেশকর বলে তার কণ্ঠকে ভুল করা প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে তিনি খুব সতর্ক উত্তর দিয়েছিলেন। সুমন বলেন, আমি লতাজির গুণগ্রাহী। কলেজে পড়ার সময় থেকেই তার গান শুনি। তার গান গাইতাম। আমার কণ্ঠ কোমল আর চিকন। আবার রেডিও সিলনে গান প্রচার হতো, কিন্তু কখনো নাম বলা হতো না। রেকর্ডেও সবসময় নাম থাকত না। সে কারণেই এমন হয়ে থাকবে।’ সুমন কল্যাণপুরের গানগুলো জনপ্রিয়, বিশেষত লতা মঙ্গেশকরের শিডিউল পাওয়া না গেলে কিংবা লতাকে পারিশ্রমিক দিতে না পারলে সুমন কল্যাণপুরের ডাক পড়ত। এরপর নিজের পরিচিতি তৈরি হয়। কিন্তু তিনি বলেছেন, তার সময়ে শিল্পীদের নাম নিয়ে তেমন আলোচনা না হওয়ায় তিনি পরিচিতি পাননি। এছাড়া অন্তর্মুখী চরিত্রের কারণেও আলোচনায় ছিলেন কম। রেডিও আর্টিস্ট আমিন সায়ানি প্রায় ৪৫ বছরের চেষ্টার পর ২০০৫ সালে সুমন কল্যাণপুরের একটি সাক্ষাৎকার নিতে সক্ষম হন। সায়ানি জানিয়েছেন, সুমন খুবই কম কথা বলেন। কিন্তু গুণী সুরকার, গীতিকার ও সংগীত পরিচালকরা তাকে খুঁজে নিয়েছিলেন। সম্প্রতি ভারত সরকার সুমন কল্যাণপুরকে পদ্মভূষণ দিয়েছে। শিল্পে তার অবদানের জন্য এ পদক দেয়া হয়। এখনো গণমাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করতে চান না এ গায়িকা। সাক্ষাৎকারের জন্য গেলে প্রথমেই জানিয়ে দেন ফটোশুট সম্ভব নয়। গান ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। এখন সুমন কল্যাণপুরের সময় কাটে নানা ধরনের ছবি এঁকে।


সূত্র: দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন