ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স

চাকরিপ্রার্থীদের অন্যতম বিকল্প হতে পারে ব্যাংক-বীমা খাত

অধ্যাপক . হাসিনা শেখ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের চেয়ারম্যান জীবন বীমা করপোরেশনের পরিচালক। সম্প্রতি দেশের ব্যাংকিং বীমা বিষয়ে পড়াশোনা, বিদেশে উচ্চশিক্ষা, চাকরির বাজার এবং  খাতের সমসাময়িক প্রেক্ষাপট নিয়ে মুখোমুখি হয়েছেন বণিক বার্তার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শফিকুল ইসলাম

বিসিএসের পর পছন্দের চাকরির মধ্যে ব্যাংকিং সেক্টর শীর্ষে অবস্থান করছে। কর্মক্ষেত্রে এমন কী কী সুযোগ-সুবিধা রয়েছে যে কারণে চাকরিপ্রত্যাশীদের এত আগ্রহ?

বর্তমানে দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৬১টি ব্যাংকের প্রায় ১১ হাজার শাখার মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং ইত্যাদি স্পেশালাইজড সার্ভিসে সবসময় দক্ষ জনবলের চাহিদা আছে। তাই অন্যান্য খাতের তুলনায় এক্ষেত্রে কর্মসংস্থান বেশি। বর্তমানে সরকারি ব্যাংকগুলো ছাড়াও বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় আকর্ষণীয় বেতন, অন্যান্য ভাতা, লভ্যাংশ বোনাস, বিভিন্ন ঋণ সুবিধা, দ্রুত পদোন্নতি, সামাজিক মর্যাদা ইত্যাদির কারণে ব্যাংকিং খাত চাকরিপ্রার্থীদের কাছে অন্যতম বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্সে গ্র্যাজুয়েটদের জন্য ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় চাকরি পাওয়া কি সহজ? বা তারা কোনো অগ্রাধিকার পান কিনা?

ব্যাংক খাতে গ্র্যাজুয়েশন বা পোস্ট-গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি এবং প্রফেশনাল ডিগ্রিগুলো যেমন এমপিবি, এমবিএম, ব্যাংকিং ডিপ্লোমা ইত্যাদি বিষয়জ্ঞান বৃদ্ধি করে। যেকোনো খাতেই বিশেষায়িত জ্ঞান কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে। বর্তমানে প্রায় প্রতিটি ব্যাংকই বিষয়জ্ঞানে দক্ষ কর্মী খুঁজে থাকে। ব্যাংক ইন্স্যুরেন্সসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমাদের শিক্ষার্থীরা এক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে।

ব্যাংকিং পেশায় কোন স্কিল বা গুণগুলো থাকা জরুরি?

প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিংয়ে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান, সঙ্গে বিভিন্ন সফট স্কিল, যেমন কমিউনিকেশন দক্ষতা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া কম্পিউটারে বিশেষ দক্ষতা, ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা, টিম ওয়ার্ক, লিডারশিপ ইত্যাদি অতিরিক্ত দক্ষতা যোগ্যতার মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হয়।

বিভাগে পড়াশোনা করে শিক্ষার্থীরা কী কী প্রায়োগিক দক্ষতা অর্জন করতে পারছে?

বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি আমাদের বিভাগে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্টে গ্রুপে কাজ করার অভিজ্ঞতার মাধ্যমে নেতৃত্বদানের ক্ষমতা অর্জন এবং ইন্টারপার্সোনাল কমিউনিকেশন দক্ষতাগুলো বৃদ্ধির সুযোগ পেয়ে থাকে। তাছাড়া সেমিনার, ওয়ার্কশপ, ইন্টার্নশিপে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাস্তবসম্মত জ্ঞান অর্জন করে থাকে। এছাড়া কোর্স ওয়ার্কের অংশ হিসেবে বিভিন্ন সফটওয়্যার পরিচালনায় দক্ষতা অর্জন করতে পারছে। পাশাপাশি ব্যাংকিং ক্লাবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে আমাদের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সহশিক্ষামূলক কাজ করছে।

গত এক দশকে ব্যাংক খাতের মতো দেশের ইন্স্যুরেন্স খাত সেভাবে বিকশিত হয়নি। খাতের বর্তমান অবস্থা কী এবং সুযোগ-সুবিধা কেমন?

বাংলাদেশে বর্তমানে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সংখ্যা ৮১টি, যা ব্যাংকের চেয়েও বেশি। দেশের জিডিপিতে বীমা খাতের অবদানও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বীমা খাতের অগ্রগতিতে দক্ষ জনবল, প্রযুক্তিনির্ভর কার্যক্রম ব্যাপক ভূমিকা রাখে। লক্ষ্যে বীমা কোম্পানিগুলো বীমা খাতে বিষয়জ্ঞান রয়েছে এমন কর্মীদের বর্তমানে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। ফলে আর্থিক বাজারে ব্যাংক অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বীমা কোম্পানি দক্ষ কর্মী নিয়োগ বাড়ছে। সম্প্রতি গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো ব্যাংকের মতো ইন্স্যুরেন্সেও এমটিও বা ইয়াং লিডার্স নিয়োগ দিয়েছে, যেখানে আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছে। অন্য ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোও ধারা বজায় রাখলে বাংলাদেশের বীমা খাতের উন্নতি টেকসই হয়ে উঠবে। বীমা খাতের উন্নতির ব্যাপারে সরকারও বদ্ধপরিকর। সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় দেশের বীমা খাত শিগগিরই আরো উন্নতির পথে এগোবে। বাড়বে কর্মসংস্থানও।

বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ কেমন? এবং সেখানে দেশীয় গ্র্যাজুয়েটরা চাকরির সুযোগ পাচ্ছে কিনা?

উন্নত উন্নয়নশীল দেশগুলোয় আর্থিক বাজার (অর্থ মূলধন বাজার) টিকিয়ে রাখতে ব্যাংকিং ইন্স্যুরেন্স সেক্টর সবসময়ই মুখ্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা অস্ট্রেলিয়ার মতো পাশ্চাত্য ইউরোপের অনেক দেশে ব্যাংকিং, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইন ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর ইত্যাদি, আর অতিসম্প্রতি ফিনটেক (ফাইন্যান্সিয়াল টেকনোলজি, মেশিন লার্নিং, ডাটা সায়েন্স, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইন দ্য ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর) বিষয়গুলোয় ডিপ্লোমা, সার্টিফিকেট, মাস্টার্স, পিএইচডি, পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ রয়েছে। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক মঞ্চে আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা দেশীয় ক্যারিয়ারের পাশাপাশি বিদেশের বিভিন্ন ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানেও নিজেদের যোগ্যতায় জায়গা করে নিয়েছে।

যারা ব্যাংকিং ইন্স্যুরেন্সের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চায়, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

যেকোনো ক্যারিয়ারেই সাফল্যের মূলকথা হলো কাজের প্রতি আন্তরিকতা। একাডেমিক পড়ালেখা আর বাস্তব জীবনে ব্যাংকিং-ইন্স্যুরেন্সে কাজ করার মাঝে পার্থক্য থাকতেই পারে। তবে কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, শৃঙ্খলা সময়ানুবর্তী হলে শিক্ষার্থীরা কর্মজীবনে সেরাদের সেরা হবে, এটা আমি নিশ্চিত করেই বলছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন