ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স

প্রাসঙ্গিক দক্ষতা বাড়ায় চাকরির সুযোগ

যেকোনো পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা সবসময়ই একজন চাকরিপ্রার্থীর প্রয়োজনীয় যোগ্যতা, দক্ষতা অভিজ্ঞতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। এছাড়া কমিউনিকেশন স্কিল, ইতিবাচক মনোভাব, ন্যায়পরায়ণতা, দায়িত্ববোধ শেখার ইচ্ছা যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে। আমাদের ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টরে সাধারণত এমন সব প্রার্থী অগ্রাধিকার পায়, যাদের চমৎকার অ্যানালাইটিক্যাল প্রবলেম সলভিং স্কিলস এবং চাপ সামলানোর সক্ষমতা রয়েছে। পাশাপাশি ক্রমপরিবর্তনশীল পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেয়া এবং টিমওয়ার্কে নিপুণ হওয়াটাও খাতে চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে প্রকৃতপক্ষের উৎসাহী এবং কোম্পানি কালচারের সঙ্গে অত্যন্ত মানানসই প্রার্থীরা আমাদের পছন্দের তালিকায় খানিকটা এগিয়ে থাকে।

ইন্টারভিউ বোর্ডে আমরা সবসময়ই একজন প্রার্থীর মাঝে তার যোগ্যতা, দক্ষতা ব্যক্তিত্বের একটি যথাযথ সমন্বয় খোঁজার চেষ্টা করি। আমরা চাকরিপ্রত্যাশীর টিম স্পিরিট, অ্যাডাপ্টিবিলিটি মনমানসিকতা সূক্ষ্মভাবে মূল্যায়ন করি। স্বাভাবিকভাবেই আমরা এমন একজন প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি, যে আমাদের প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠানের কালচার এবং তার প্রত্যাশিত পদটি সম্পর্কে খুব ভালোভাবে অবগত। এছাড়া উপযুক্ত ফরমাল পোশাক, সময়ানুবর্তিতা, ইতিবাচক আচার-আচরণ এবং আত্মবিশ্বাস অনেক সময় একজন প্রার্থীকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে।

বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ইন্স্যুরেন্স একটি দ্রুত বর্ধনশীল অপার সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র, যদিও এখন পর্যন্ত এর মার্কেট পেনিট্রেশন দেশের জনসংখ্যার শতাংশেরও নিচে। সত্যি বলতে, খাতে নেতৃস্থানীয়রা তাদের স্বীয় প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের ধারাকে অক্ষুণ্ন রাখতে যোগ্য মানবসম্পদ নিয়োগের ক্ষেত্রে বরাবরই চেষ্টা করেছেন।

তাই আমি প্রথমেই বলে নিতে চাই, ইন্স্যুরেন্স সেক্টরে ব্যাংকিং ইন্স্যুরেন্স ব্যাকগ্রাউন্ড নিঃসন্দেহে উপকারী, তবে এটি অপরিহার্য নয়।

ব্যাংকিং ইন্স্যুরেন্স আন্ডারগ্র্যাজুয়েটরা এই ইন্ডাস্ট্রিতে স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে। কারণ তাদের ইন্স্যুরেন্স রিস্ক ম্যানেজমেন্টে শক্তিশালী ভিত্তি ইন্স্যুরেন্সের নীতিমালা নিয়ে সুস্পষ্ট ধারণা রয়েছে, যা খাতের অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি প্রয়োগ করা যেতে পারে, যেমন আন্ডাররাইটিং, অ্যাকচুয়ারি সেলস। এছাড়া ব্যাংকিং ইন্স্যুরেন্স প্রোগ্রামের মধ্যে ইন্টার্নশিপের অভিজ্ঞতা এন্ট্রি-লেভেল পদে অত্যন্ত উপকারী হতে পারে।

তবে বাস্তবে আমাদের ইন্স্যুরেন্স ইন্ডাস্ট্রির প্রায় সব ক্ষেত্র সঠিক দক্ষতা, জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতাসম্পন্ন যেকোনো ব্যাকগ্রাউন্ডের প্রার্থীদের জন্য সবসময়ই উন্মুক্ত ছিল থাকবে।

গার্ডিয়ান লাইফ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আমরা বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের (যেমন ফাইন্যান্স, অর্থনীতি, ব্যবসায় শিক্ষা, আইটি, গণিত, পরিসংখ্যান, এমনকি চিকিৎসাশাস্ত্র) সম্ভাবনাময় প্রফেশনালদের স্বাগত জানিয়েছি, যাদের মেধা নিষ্ঠা বছরের পর বছর ধরে আমাদের বিকশিত হতে সহায়তা করেছে।

এরই ধারাবাহিকতায় আমরা সম্প্রতি চালু করেছি গার্ডিয়ান ইয়াং লিডারশিপ প্রোগ্রাম, যার মাধ্যমে আমরা একঝাঁক মেধাবী তরুণকে ইন্স্যুরেন্স খাতে নতুন যুগের সূচনা করার একটি প্লাটফর্ম দিতে চলেছি।

বাংলাদেশী ইন্স্যুরেন্স সেক্টর শুরুর দিক থেকেই বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের (যেমন ব্যাংকিং ইন্স্যুরেন্স, ফাইন্যান্স, অর্থনীতি, ব্যবসায় শিক্ষা, আইটি, গণিত পরিসংখ্যান) পেশাদারদের মাধ্যমে সমৃদ্ধ হয়েছে, যারা তাদের দক্ষতা, জ্ঞান অভিজ্ঞতার মাধ্যমে খাতে সফল ক্যারিয়ার গড়েছেন।

ব্যাংকিং ইন্স্যুরেন্স স্নাতকরা সন্দেহাতীতভাবে তাদের তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রসঙ্গোচিত ভিত্তির কারণে বেশির ভাগ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোয় একটি হেড স্টার্ট এবং ত্বরিত কর্মজীবন পেতে পারেন।

তবে দিন শেষে, খাতে একটি উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গড়তে ব্যাকগ্রাউন্ড নয়, বরং বিশেষভাবে প্রয়োজন দক্ষতা, কঠোর পরিশ্রম, ইন্স্যুরেন্স সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান, শক্তিশালী পেশাদার নেটওয়ার্ক এবং ক্রমপরিবর্তনশীল খাতের ট্রেন্ড নীতিমালা নিয়ে সুস্পষ্ট ধারণা।

ইন্স্যুরেন্স সেক্টরে যারা একটি উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গড়তে উত্সুক তাদের প্রতি আমার পরামর্শ হলো, বাংলাদেশের ইন্স্যুরেন্স ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে একটি শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তুলুন এবং প্রতিনিয়তই নতুন কিছু শেখার চেষ্টা চালিয়ে যান, ইন্স্যুরেন্স খাতের বিভিন্ন ক্ষেত্র, যেমন আন্ডাররাইটিং, ক্লেইমস এবং সেলস সম্পর্কে জানুন এবং আপনার জন্য কোনটি সবচেয়ে উপযুক্ত তা নির্ধারণ করুন। এছাড়া খাতের নীতিমালা এবং ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্পর্কে আপ টু ডেট থাকুন।

প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা অর্জন করুন। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর এন্ট্রি-লেভেল পদগুলো অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য আদর্শ। এছাড়া সমসাময়িকদের থেকে একধাপ এগিয়ে থাকতে ইন্টার্নশিপ খণ্ডকালীন কাজে যোগ দিন।

একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করুন। ইন্স্যুরেন্স ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন অংশীদারের সঙ্গে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক আপনাকে চাকরির সুযোগ সম্পর্কে জানতে, দেশের ইন্স্যুরেন্স প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সচেতন থাকতে এবং প্রতিযোগিতামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে আপনার প্রতিষ্ঠানের সাফল্যে অবদান রাখতে সহায়তা করবে।

উচ্চতর প্রফেশনাল সার্টিফিকেশন নিন। সার্টিফায়েড ইন্স্যুরেন্স প্রফেশনাল (সিআইপি) বা চার্টার্ড ইন্স্যুরেন্স প্রফেশনালের (চার্টার্ড ইন্স্যুরেন্স ইনস্টিটিউট-ইউকে) মতো সার্টিফিকেশনগুলো আপনাকে দীর্ঘমেয়াদে একটি ভালো অবস্থানে যেতে সহায়তা করবে।

বাংলাদেশের ইন্স্যুরেন্স সেক্টর দেশের মেধাবী তরুণদের জন্য একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। সঠিক মানসিকতা, যোগ্যতা অভিজ্ঞতা থাকলে আপনি অবশ্যই ক্রমবর্ধনশীল ইন্ডাস্ট্রিতে একটি উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।

 

শেখ রকিবুল করিম, এফসিএ

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা

গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন