ফ্যাশন ডিজাইন

ফ্যাশন ডিজাইনে স্মার্ট ক্যারিয়ার

বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির ড্রাপিং ল্যাবে শিক্ষার্থীরা ছবি: মাশফিকুর সোহান

ফ্যাশন ডিজাইন হলো শৈল্পিক সৃজনশীলতা নান্দনিকতার প্রয়োগ। এর সঙ্গে সম্পর্কিত পোশাকের বিকাশ, নকশা উৎপাদন। সৃজনশীল মন এবং দুঃসাহসিক মনোভাবসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য হতে পারে উজ্জ্বল ক্যারিয়ার। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের কয়েকটি উেসর মধ্যে পোশাক শিল্প অন্যতম। শুধু যে পোশাক বিদেশে রফতানি হয় তা নয়, দেশেও এর বিশাল বাজার রয়েছে। ফ্যাশন ডিজাইনাররা প্রতিনিয়ত আমাদের দেশের আবহাওয়া, সংস্কৃতি রুচির সঙ্গে মানানসই নতুন পোশাক তৈরি করছেন। আর যারা এসব বিষয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করছেন তারা হলেন ফ্যাশন ডিজাইনার। ক্যারিয়ার হিসেবে বাংলাদেশে এর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে।

ফ্যাশন সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রবণতা এবং মনোভাবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত, যা প্রতিফলিত হয় কীভাবে মানুষ পোশাকের মাধ্যমে নিজেকে উপস্থাপনে পছন্দ করে। ফ্যাশন ডিজাইনারদের ভোক্তা মনোভাব এবং সমাজের বৃহত্তর নান্দনিক মূল্যবোধের বিচারে বিচক্ষণ হতে হয়। গবেষণা ট্রেন্ড সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করার সক্ষমতা পোশাক ডিজাইনারদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ফ্যাশন ডিজাইন উৎপাদনে জড়িত পরিবেশগত দিকগুলোও বিবেচনায় নিতে হয়।

কিছুদিন আগেও ফ্যাশন ডিজাইন সম্পর্কে মানুষের তেমন ধারণা ছিল না। কিন্তু এখন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সৌন্দর্যসচেতন। আর ফ্যাশন ডিজাইনাররা এসব সৌন্দর্যসচেতন মানুষের স্টাইলিশ পোশাকের চাহিদা মেটান। ফ্যাশন ডিজাইন হলো একটি আর্ট ফর্ম। একজন ডিজাইনার তার নিপুণ হাতের স্পর্শে একটি পোশাককে আকর্ষণীয় করে তুলে মননশীলতার পরিচয় দেন। বর্তমানে ফ্যাশন ডিজাইনা একটি জনপ্রিয় পেশা।

বাংলাদেশ যেহেতু বিশাল গার্মেন্ট শিল্পের সঙ্গে যুক্ত তাই এখানে কাজের পরিধি অনেক বেড়েছে। দেশেই ফ্যাশন ডিজাইনারদের রয়েছে চাকরির বিশাল বাজার। এর মধ্যে টেক্সটাইল শিল্প, গার্মেন্ট শিল্প, বায়িং হাউজ, বুটিক হাউজ বা দেশী বিদেশী পোশাক ব্র্যান্ড হাউজে আপনার কাজের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া এখন দেশে অনেক ফ্যাশন স্কুল আছে যেখানে আপনি প্রভাষক হিসেবেও কাজ করতে পারেন। আর নিজের উদ্যোগে কিছু শুরু করতে চাইলে তারও সুযোগ রয়েছে দেশে। চাকরির অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিদেশেও আপনি ফ্যাশন কোম্পানিতে চাকরি পেতে পারেন। ক্যারিয়ার গড়তে পারেন ফ্যাশন ডিজাইনার, ফ্যাশন স্টাইলিস্ট, জুয়েলারি ডিজাইনার, ফুটওয়্যার ডিজাইনার, ফ্যাশন মডেল, নিটওয়্যার ডিজাইনার, টেক্সটাইল ডিজাইনার, ফ্যাশন জার্নালিস্ট, ক্রিটিক, ফ্যাশন ফটোগ্রাফার, কস্টিউম ডিজাইনার, ডিজাইন ডিরেক্টর, আর্ট অ্যান্ড ডিজাইন টিচার, ফ্যাশন বা অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজার, ভিজ্যুয়াল মার্চেন্ডাইজার, কমপ্লায়েন্স ম্যানেজার, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজার প্রভৃতি পদে। চাকরির যেমন সুযোগ রয়েছে তেমনি উদ্যোক্তা হিসেবেও স্বাধীন ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ রয়েছে।

একজন ভালো ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়ার জন্য সৃজনশীলতা অপরিহার্য। বাস্তব অভিজ্ঞতা এক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করে। ফ্যাশন ডিজাইন প্রযুক্তি বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা দেশের স্বনামধন্য ফ্যাশন হাউজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সফলতার সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। অনেকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে ফ্যাশন হাউজ প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসা পরিচালনা এবং অন্যদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন। এছাড়া সরকারি বিভিন্ন সংস্থায় সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন অনেকেই।

বর্তমানে দেশে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয়ে পড়ানো হয় সেখানে দেশী-বিদেশী ফ্যাশন এবং অ্যাপারেল বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সেমিনার, কর্মশালা গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এর মাধ্যমে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা সময়োপযোগী শিক্ষা এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারেন। এসব কর্মশালায় বিভাগের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী যারা ফ্যাশন অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রিতে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন তাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়। ফলে শিল্প একাডেমির এক মেলবন্ধন হয় এখানে, যা ক্যারিয়ার গঠনে ভূমিকা রাখে। উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি ফ্যাশন টেকনোলজিতে ছয় মাস বা এক বছরের ডিপ্লোমা কোর্স করারও সুযোগ রয়েছে। এটা সম্পন্ন করেও ডিজাইনার হিসেবে কাজ করা যায়। কেউ বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে চাইলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।

 

এমএনআই চৌধুরী, প্রভাষক, ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন