উন্নত জাতি গঠনে পড়ার অভ্যাস গড়তে হবে

ওসমান গণি আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী। ১৯৮৬ সাল থেকে বিভিন্ন বিষয়ে সৃজনশীল, মননশীল গবেষণাধর্মী বই প্রকাশ করে আসছেন। সম্প্রতি বই, পাঠাভ্যাস পাঠক সম্পর্কে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন শফিকুল ইসলাম

পাঠ্যপুস্তকের বাইরে বিভিন্ন বই পড়ার অভ্যাস একজন শিক্ষার্থীর জীবনে কেমন ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে?

আমরা সবাই একাডেমিক লেখাপড়া করি, পাঠ্যপুস্তক পড়ে ডিগ্রি লাভ করি, কিন্তু ডিগ্রি লাভ করলেই জ্ঞান আহরণ হয় না। একাডেমিক ডিগ্রি নিলেই পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে ওঠা যায় না। অনেকেরই দেশ, সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি সম্পর্কে কোনো ধারণা থাকে না। এতে শিক্ষার সার্থকতা নেই। আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং অন্যান্য দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এক নয়। দেশে শুধু পাঠ্যপুস্তকে যা আছে সেটাই পড়ানো হয়। আমি ইতালিতে গিয়েছিলাম। অষ্টম শ্রেণী স্ট্যান্ডার্ডের এক মেয়ে আমাকে শহর দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল। সে আমাকে বিভিন্ন স্থাপনা দেখিয়ে তার পেছনের ইতিহাস বলতে থাকল। তখন আমি জানতে চেয়েছিলাম, তুমি এগুলো কীভাবে জানো? এর ওপরে কোন বই রয়েছে? সে বলল, না। তবে আমাদেরকে মাঝে মাঝে স্কুল থেকে শহর দেখতে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের বক্তব্য হলো, আগে নিজের মা-বাবা, নিজ শহর, নিজ দেশ, তার পরে বিভিন্ন দেশ সম্পর্কে জানো। এগুলো জানার জন্য আমাদের ক্লাসে তেমন কিছু পড়ানো হয় না। তাই আমাদের একাডেমিক বইয়ের বাইরেও বই পড়া দরকার। যে যত বই পড়বে, তত সমৃদ্ধ হবে। আরো অভিজ্ঞ হবে। বইগুলো পাঠ্যপুস্তকের বাইরে অনেক কিছু জানতে সহায়তা করে, একজন শিক্ষার্থীকে উজ্জীবিত করে, আরো সাহসী হতে শেখায়, যা অন্য কোনো উপায়ে সম্ভব নয়।

বই পড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে করণীয় কী? কী পদক্ষেপ নিলে শিক্ষার্থীদের বই পড়ার অভ্যাস বাড়বে?

স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের বই পড়ায় উদ্বুদ্ধ করতে আগে সক্রিয় গ্রন্থাগার ছিল। প্রতি মাসে একটি বই পড়ে কে কী জানতে পেরেছি সেসব নিয়ে পাঠচক্র হতো। বর্তমানে গ্রন্থাগার পদ আছে, কিন্তু কোনো কর্মযজ্ঞ নেই। বই কেনার জন্য বাজেট থাকলেও সেখানে পর্যাপ্ত বই নেই। খোঁজ নিলে জানা যাবে স্কুল-কলেজের গ্রন্থাগারে ধুলার আস্তরণ জমেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় কলেজ পর্যায়ে বই পড়ার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। উন্নত দেশ বা উন্নত জাতি গঠনে পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মুখের কথায় উন্নত জাতি হবে না। জ্ঞান অর্জনের বিকল্প নেই। প্রত্যেক গ্রাম, প্রত্যেক উপজেলায় গ্রন্থাগার গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। সে প্রচেষ্টায় আমরা যদি সফল হই, তাহলে ইন্টারনেট বা ভার্চুয়াল জীবনের বাইরেও মানুষ বই পড়তে আগ্রহী হবে। প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার তৈরি করে নিয়মিত বই পড়ার আয়োজনসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করলে স্কুলজীবন থেকেই পড়ার সংস্কৃতি তৈরি হবে। অন্যথায় শিক্ষার্থীরা বড় হয়ে বই পড়ায় আগ্রহী হবে না।

বণিক বার্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের আয়োজনে ষষ্ঠবারের মতো নন-ফিকশন বইমেলা হচ্ছে। শুরু থেকে পর্যন্ত পাঠকদের কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

বণিক বার্তা কয়েক বছর ধরে নন-ফিকশন বইমেলা আয়োজন করছে। এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। বইমেলা একসময় আরো বড় পরিসরে আয়োজিত হবে। বাংলা একাডেমিও ছোট পরিসরে শুরু করেছিল। আমরা কলকাতায় বাংলাদেশ বইমেলা আয়োজন শুরু করেছিলাম ছোট পরিসরে, বছর অনেক বড় পরিসরে শুরু হয়েছে। ভালো সাড়া পাচ্ছি। বণিক বার্তার বইমেলার আয়োজনে লেখক-প্রকাশক সবাই আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বছর নামকরা ৪১টি প্রকাশনী মেলায় অংশ নিয়েছে। যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রয়েছে তারাও হয়তো ধরনের আয়োজনের জন্য আরো নতুন নতুন উদ্যোগ নেবে।

তরুণ পাঠক লেখকদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

সব বই বই না। অনেক ক্ষেত্রে বই ছাপানো মানে কাগজ নষ্ট হওয়া। পাঠককেই যাচাই বাছাই করে বই কিনতে হবে। তারা যেন ভালো বই সংগ্রহ করতে পারে। এক্ষেত্রে কোন প্রকাশনী বইটি প্রকাশ করছে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। নতুন যারা লেখালেখি করছে, তাদের আরো বেশি পড়ালেখা করতে হবে। অনেকে ১০টি কবিতা লিখেই বই বের করতে চায়, ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বেশি বই পড়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারলেই লেখার গুণগত মান ঠিক থাকবে। তখন একটি বই প্রকাশযোগ্য হবে।

কোন ধরনের বইয়ের প্রতি পাঠকের আগ্রহ বেশি?

পাঠকরা সবচেয়ে বেশি আগ্রহী ইতিহাস-ঐতিহ্য, আত্মজীবনী, অর্থনীতি, স্মৃতিকথা, ভ্রমণ, শিল্পকলা, গবেষণা, বাণিজ্য, ব্যাংকিং, স্মারকগ্রন্থ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং শিশু-কিশোর সাহিত্যে। কবিতার বই কম পড়ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন