বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধ্যয়নের অভ্যাস গড়ে আলোকিত জাতি গঠনে তরুণ জ্ঞানপিপাসুদের নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি ক্লাব—রিডিং ক্লাব ট্রাস্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল পড়ুয়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীর হাতে গড়া ক্লাবটি বছরব্যাপী পরিচালনা করছে নানা কার্যক্রম। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করে তরুণদের এ মঞ্চ।
জ্ঞানানুরাগীদের আসর
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিদিন রাত ৯টায় নীলক্ষেত মোড়ে প্রাত্যহিক সেশন নলেজ কালচার। চা খেতে খেতে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা নিয়ে হয় উন্মুক্ত আলোচনা। রিডিং ক্লাবের সবচেয়ে জমজমাট সেশন হলো সাপ্তাহিক পাবলিক লেকচার। প্রতি শুক্রবার জাতীয় জাদুঘরে আয়োজিত এ সভার উপস্থিত প্রত্যেকেরই কথা বলা বাধ্যতামূলক। ২০১৬ সাল থেকে নিয়মিত আয়োজন হচ্ছে মাসিক পাবলিক লেকচার। নবীন-প্রবীণ বিদ্যোৎসাহীদের মিলনমেলা হিসেবে খ্যাত এ বিশেষ সভায় তরুণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও প্রবীণ জ্ঞানানুরাগী ব্যক্তিরা উপস্থিত হন। এ আয়োজনে অতিথি হয়েছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সংবিধানপ্রণেতা ড. কামাল হোসেন, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহানসহ বরেণ্য ব্যক্তিরা।
যত আয়োজন
ক্লাবে এ পর্যন্ত মাসিক
পাবলিক লেকচার আয়োজিত হয়েছে ৩১টি এবং সাপ্তাহিক আসর বসেছে ৪৮৪টি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু রয়েছে এমন বিভাগ সম্পর্কে ধারণা দিতে আয়োজন করা হয় ফাইভ মিনিটস স্কলার প্রোগ্রাম। পাঠকদের বক্তৃতায় পারদর্শী করতে প্রতি মাসে আয়োজন করা হয় পাবলিক স্পিকিং ট্রেনিং প্রোগ্রাম। পড়াশোনা
কীভাবে করতে হয় এ বিষয়ে ধারণা দিতে রয়েছে রিডিং ইন্টার্নি। প্রতিদিন টানা ১০ ঘণ্টা করে সম্পন্ন করতে হয় তিনদিনে ৩০ ঘণ্টার একটি কোর্স। এছাড়া রিডিং ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে পাঠককে তিন মাসে শেষ করতে হয় ইতিহাসবিষয়ক ছয়টি বই, লিখতে হয় বই পর্যালোচনা। এ কর্মসূচিতে রয়েছে তিনটি প্রশিক্ষণ কর্মশালাও। শেখানো হয় গভীর পাঠের কৌশল, বই পর্যালোচনা লেখা এবং পাবলিক স্পিকিংয়ে দক্ষতা বাড়ানোর উপায়। রয়েছে নিয়মিত মাসিক কর্মশালা বাংলাদেশের সংবিধান পরিচিতি, বার্ষিক প্রোগ্রাম ন্যাশনাল ইয়ং ইন্টেলেকচুয়ালস কনফারেন্স। এছাড়া বই পড়ায় উৎসাহিত করতে ২০১৩ সাল থেকে দেয়া হয় রিডিং অ্যাওয়ার্ড।
শুধুই ভ্রমণ নয়
প্রচলিত শিক্ষা সফরের নামে শুধুই ঘোরাঘুরির সংস্কৃতি ভেঙে আয়োজিত নলেজওয়াকে নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন এবং ওই স্থানের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, ভৌগোলিক তাত্পর্য তুলে ধরা হয়। বই পড়ায় ম্যারাথন বলা যেতে পারে রিডিং ক্যাম্পকে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করতে প্রতি বছর আয়োজিত এ ক্যাম্পে রিডিংয়ে অংশ নেয়া অ্যাসোসিয়েটরা ৮ থেকে ২০ দিনব্যাপী গবেষণা করেন।
নেই কোনো সদস্য
রিডিং ক্লাবে কোনো সদস্য নেয়া হয় না। তবে যারা দৈনিক ৩ থেকে ১৩ ঘণ্টা পড়ালেখা করে এবং ক্লাবের কার্যাবলির সঙ্গে জড়িত তাদের বলা হয় রিডিং অ্যাসোসিয়েট। একজন রিডিং অ্যাসোসিয়েটকে প্রতিদিন পত্রিকার বাইরে প্রাথমিক পর্যায়ে কমপক্ষে ২০০ পৃষ্ঠা পড়াশোনা করতে হয়। ধীরে ধীরে বাড়াতে হয় এ সংখ্যা। গ্রন্থাগারে পড়াকে উৎসাহিত করেন তারা। ঢাকার বিভিন্ন গ্রন্থাগারের ঠিকানাসহ পরিচিতিমূলক ‘নলেজ কালচার রেডিয়াস’
নামে প্রকাশ করেছেন একটি পুস্তিকা। এটি সংগ্রহ করে যে কেউ সহজেই ঢাকা শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থাগার ব্যবহার করতে পারবেন।
উদ্যোক্তাদের কথা
রিডিং ক্লাব ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জুলফিকার ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি উন্নত ও প্রভাবশালী রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে। এ রাষ্ট্রের উন্নয়নে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব দেবে দেশের তরুণরাই। আর এ তরুণদের সেই নেতৃত্বদানের যোগ্য করে তোলার নানামুখী প্রচেষ্টার সহযোগী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে রিডিং ক্লাব।