পাঠাভ্যাস

অন্য রকম পাঠশালা

জাহিদ শিকদার

পাঠশালার কার্যক্রম এখন ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

করোনাকালে যখন দুনিয়া স্তব্ধ, তখন নিস্তব্ধতা ভেঙে গুনগুন করে অনলাইন জগতে জেগে উঠেছিল এক পাঠশালার কার্যক্রম। নানা প্রান্তের শিক্ষার্থীরা যুক্ত হয়েছেন পাঠশালায়। সঙ্গী নিত্যনতুন বই, সমসাময়িক আলোচিত ঘটনা। শুরুটা যদিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকভিত্তিক একটি গ্রুপে, কিন্তু অতি দ্রুতই রূপ নেয় সংগঠনে। পাঠশালা, সেন্টার ফর বেসিক স্টাডিজ পাঠশালা নামেই সবার কাছে পরিচিত। বর্তমানে পাঠশালার সঙ্গে ফেসবুক গ্রুপে রয়েছে ৩৭ হাজার পাঠক। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে কার্যক্রম। যাত্রার শুরুটা রাজশাহীর যুগ্ম জেলা দায়রা জজ শাহাদাত হোসেনের উদ্যোগে। তিনি তরুণদের প্রতিনিয়তই অনুপ্রেরণা দিতে সাহিত্য, ব্যক্তি, সমাজ নানা বিষয় নিয়ে পাঠচক্রের আয়োজন করেন, যেখানে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীরাও ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকতেন।

পাঠশালার কার্যক্রম এখন ছড়িয়ে পড়েছে দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং স্কুল পর্যায়ে। কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিটি শাখায় প্রতিনিয়তই সাপ্তাহিক, মাসিক পাঠচক্র পরিচালনা করেন, যেখানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অনেক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে প্রাণবন্ত করে তুলেছেন পাঠশালার কার্যক্রমকে। পাঠচক্রগুলোয় আলোচনা করা হয় সাহিত্য, ইতিহাস, আন্তর্জাতিক সমসাময়িক নানা বই নিয়ে। সবাই মেতে ওঠেন কবিতা, গানে, গল্পে আর আড্ডায়।

পাঠশালার সক্রিয় সদস্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী বীথি আক্তার বলেন, যেকোনো বিষয়ে গভীরভাবে জানা এবং নিজেকে জানাশোনা দক্ষ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমার কাছে মনে হয় পাঠশালা যথার্থ একটি প্লাটফর্ম।

সশরীরে যেমন পাঠচক্র অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সেই সঙ্গে অনলাইনেও এর ধারাবাহিক কার্যক্রম চলমান। সপ্তাহের কোনো না কোনো দিন এর কার্যক্রম থাকেই। প্রতি শনিবার অনুষ্ঠিত হয় বই নিয়ে অনুষ্ঠানকী পড়ছি, কী লিখছি, রোববারে ইংরেজি ভাষা সাহিত্যবিষয়ক পাঠচক্র আর শুক্রবার সকালে শিশুদের নিয়ে আড্ডা পাঠশালা শিশু-কিশোর আসর। যেখানে কোমলমতি শিশুদের নিয়ে প্রাণবন্ত শিক্ষণীয় আড্ডা জমে। আর শুক্রবার রাতে হয় সপ্তাহের আন্তর্জাতিক পাঠচক্র যেখানে এক সপ্তাহে ঘটে যাওয়া নানা বিষয় নিয়ে হয় আলোচনা। অন্যান্য দিন থাকে ভিন্ন রকম পাঠচক্র, কখনো বিতর্ক প্রতিযোগিতা, কখনো বিখ্যাত ব্যক্তি বা ঘটনা নিয়ে পর্যালোচনা। পাঠশালায় যুক্ত সদস্যদের লেখালেখির বুক রিভিউ, গল্প, অনুগল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, ভ্রমণ, মুভি রিভিউসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রতি মাসে নানা ক্যাটাগরিতে দেয়া হয় পুরস্কার। পাঠশালার পরিধি যত বাড়ছে, তত এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক থেকে সমাজের নানা স্তরের সচেতন মানুষ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহজাবিন মম বলেন, পাঠশালার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে গোটা বাংলাদেশের সব স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে বই পড়ার আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়া। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জিএ সাব্বির বলেন, আমার পরিবার, আমার জন্ম এবং বেড়ে ওঠার পেছনে ভূমিকা রেখেছে আর আমাকে আদর্শ, জ্ঞানী এবং স্বপ্নচারী হওয়ার পাথেয় জুগিয়েছে পাঠশালা। আমি প্রতি মুহূর্তে জ্ঞানের প্রতি তৃষ্ণা অনুভব করছি পাঠশালার কারণে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন