সংক্রমণ শব্দটি শুনলে মনে আসে বিভিন্ন রোগের কথা। তাই কেউ বই পড়ার অভ্যাস সংক্রমিত করতে চায়—কথাটি শুনলে স্বাভাবিকভাবে অদ্ভুত লাগতে পারে। তবে অদ্ভুত লাগলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কিছু শিক্ষার্থী বই পড়ার অভ্যাস সবার মাঝে ‘সংক্রমিত’
করতে চান। তাদের কেউ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সহযোগী সংগঠন ইয়েস গ্রুপ, জাবি শাখার সদস্য, কেউবা শহীদ আজাদ রুমি গ্রন্থাগারের সদস্য। এদের মধ্যে শহীদ আজাদ রুমি গণগ্রন্থাগার বর্তমানে বেশি সক্রিয়। এর প্রতিষ্ঠাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী নুরুজ্জামান শুভ।
শুভ জানান, ছোটবেলা থেকেই একাডেমিক পড়াশোনার বাইরে গল্পের বই পড়তে ভালো লাগত তার। ক্যাম্পাসে আসার পর সেভাবে বই পড়ার সুযোগ হতো না। একদিকে গ্রন্থাগারে পছন্দের বইয়ের অপ্রতুলতা, অন্যদিকে সব বই কিনে পড়াও সম্ভব ছিল না। তাই পিডিএফ পড়ে দুধের সাধ ঘোলে মেটাতেন তিনি। জানান, তার মতো আরো অসংখ্য জাবিয়ান পাঠক আছেন যাদের বই পড়ার তীব্র ইচ্ছা রয়েছে। কিন্তু হাতের নাগালে কাঙ্ক্ষিত বইয়ের অভাবে বই পড়ার অভ্যাসটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমন বাস্তবতায় শুভ সিদ্ধান্ত নেন, যাদের বই পড়ার ইচ্ছা আছে, তাদের ইচ্ছা বাঁচিয়ে রাখতে হবে। পাশাপাশি যাদের ইচ্ছা নেই, তাদেরও সংক্রমিত করতে হবে বই পড়ার অভ্যাসে।
একদিন ফেসবুকে জাবির সাবেক শিক্ষার্থী মনদীপ ঘরাইকে দেখেন রাস্তার পাশে দেয়াল গ্রন্থাগার করতে। সামাজিক সংগঠন ‘ইচ্ছা’র সদস্যদের উৎসাহ পেয়ে জাবির প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক শাহনেওয়াজ ও পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক আলমগীর কবিরের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। নিজ ক্যাম্পাসে গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠায় শুরুর দিকে চ্যালেঞ্জ ছিল ঠিকঠাক বই সংগ্রহ করতে পারা। শুরুতে শুভর নিজের অর্থ দিয়ে ছয়টি বই ও একটি কাঠের আলমারি বানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলার দেয়ালে স্থাপন করা হলেও গ্রন্থাগারটি মূলত যাত্রা শুরু করে এ বছরের ২০ জানুয়ারি। গ্রন্থাগার উদ্বোধনের সময়ে সম্বল ছিল অধ্যাপক শাহনেওয়াজের দেয়া ২৬টি বই, অনলাইন পেজ ‘জাবিবই’-এর দেয়া ১০টি বইসহ অন্যদের দেয়া উপহার মিলিয়ে ৫০টি বই।
শুরু থেকেই গ্রন্থাগারটির বিষয়ে বিভিন্ন ফেসবুক প্লাটফর্মে পোস্ট করলে উৎসাহ দিয়েছেন সবাই। পরবর্তী সময়ে অনেকেই বই উপহার দিতে থাকেন। শিক্ষক, সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীসহ ক্যাম্পাসের বাইরে থেকেও বই উপহার এসেছে গ্রন্থাগারটিতে। বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় অধ্যাপক শাহনেওয়াজের উপহার দেয়া একটি আলমারি স্থাপন করা হয়েছে টিএসসির কমনরুমে। সেখান থেকেই চলছে গ্রন্থাগারটির কাজ।
গ্রন্থাগারের উদ্যোক্তা শুভ বলেন, ‘আমাদের আরো বই প্রয়োজন। বই সংগ্রহের চেষ্টা করছি। ভালো মানের বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে পাঠকের সংখ্যাও বাড়বে।’