আন্তর্জাতিক সম্পর্ক

বিশ্লেষণী মনোবৃত্তিসম্পন্ন ব্যক্তিসত্তায় পরিণত হয় শিক্ষার্থী

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (আইআর) এমন একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি বিষয় যা রাষ্ট্রগুলোর মধ্যকার সম্পর্কের বহুমাত্রিক জটিলতা নিয়ে অধ্যয়ন করে এবং এর মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপনের উপায় নির্দেশ করে। বিষয়ে অধ্যয়ন শিক্ষার্থীকে যুক্তিভিত্তিক বাস্তবতার নিরিখে কোনো সমস্যা বিশ্লেষণ করতে সক্ষম করে তোলে, যা শিক্ষার্থীকে যেকোনো পেশায় কাজ করার সময় অন্যদের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে রাখে। কেননা বিষয়ে অধ্যয়নের সময় এমন সব তত্ত্ব শেখানো হয়, যা শিক্ষার্থীকে বাস্তববাদী করে তোলে। যেকোনো বিষয় বিশ্লেষণ করার ক্ষেত্রে ক্রিটিক্যাল থিংকিংকে প্রাধান্য দেয়ায় বিষয়ের শিক্ষার্থীরা দ্রুত সমস্যার গভীরে প্রবেশ করতে পারে। পাঠ্যক্রমের অংশ হিসেবেই তারা আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে। সমাজ রাষ্ট্রের বিভিন্ন সমস্যার উত্পত্তি, যুগে যুগে তার সমাধান প্রক্রিয়া এবং এগুলোর ইতিবাচক নেতিবাচক ফলাফল থেকে উদ্ভূত তত্ত্ব সম্পর্কে তাদের সম্যক ধারণাও গড়ে ওঠে।

ঝুঁকির বিষয়টি বাদ দিলে বলা যায়, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে অধ্যয়ন শেষে একজন শিক্ষার্থী এমন ধরনের বিশ্লেষণী মনোবৃত্তিসম্পন্ন ব্যক্তিসত্তায় পরিণত হয় যাকে কোনো বিষয়ে ফাঁকি দেয়া কিংবা ভুল বুঝিয়ে বোকা বানানো সম্ভব নয়। ধরনের ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে কারিগরি বিষয় ব্যতীত অন্য যে পেশাতেই যোগদান করবেন তাতেই দক্ষতার পরিচয় দেবেন। বাংলাদেশের বাস্তবতায় তাই বলা যায়, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে অধ্যয়নকারী শিক্ষার্থীদের জন্য বিজ্ঞান কারিগরি বিষয় ছাড়া যেকোনো ধরনের পেশায় প্রবেশের সুযোগ উন্মুক্ত।

তবে বাংলাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যক্রমে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত না থাকায় বিষয়ের শিক্ষার্থীদের কলেজ পর্যায়ে শিক্ষকতার সুযোগ নেই। এটি খুবই অবাক করার বিষয় যে বাংলাদেশে কলেজ পর্যায়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, ভূগোল, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস সংস্কৃতি, দর্শন প্রভৃতি বিষয় অধ্যয়নের সুযোগ থাকলেও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মতো একটি প্রয়োজনীয় বিষয় পড়ানো হয় না। অথচ শিক্ষার্থীদের চিন্তন সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কলেজ পর্যায়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

সাধারণ একটি ধারণা রয়েছে যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়টি পররাষ্ট্র সম্পর্কিত পেশার সঙ্গেই শুধু সংশ্লিষ্ট। এটি সত্য যে বিদেশনীতি সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলোয় বিষয়ের গ্র্যাজুয়েটরা দক্ষতার পরিচয় দিতে সক্ষম; তবে অন্য অনেক পেশাও বিষয়ের গ্র্যাজুয়েটদের জন্য উন্মুক্ত।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে গ্র্যাজুয়েট সম্পন্নকারীদের সঙ্গে যেসব পেশা সরাসরি সম্পর্কিত সেগুলোর মধ্যে রয়েছেসিভিল সার্ভিস; কূটনীতিক; সমাজ গবেষণা কর্মকর্তা; গোয়েন্দা বিষয়ক বা নিরাপত্তা বিশ্লেষণ সংক্রান্ত পদ; আন্তর্জাতিক সহায়তা, ত্রাণ ঋণসংক্রান্ত কাজের পদ; উন্নয়নকর্ম বিষয়ক পদ; পলিসি কর্মকর্তা; রাজনৈতিক ঝুঁকি বিশ্লেষণ সংক্রান্ত পদ; সরকারি স্বার্থ সংরক্ষণ সংক্রান্ত পরামর্শক (পাবলিক অ্যাফেয়ার) ইত্যাদি।

এছাড়া বিষয়ে অধ্যয়ন শেষে গ্র্যাজুয়েটরা আরো কিছু পেশায় কাজ করতে সক্ষম। এগুলো হলো আর্মড ফোর্সেস অপারেশনাল অফিসার, সীমান্তসংক্রান্ত কর্মকর্তার পদ, সংবাদ বিশ্লেষক, উচ্চতর শিক্ষার নীতি-কৌশল প্রণয়ন বাস্তবায়ন সংক্রান্ত পদ, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, আইনগত পরামর্শক ইত্যাদি। অর্থাৎ যেকোনো ধরনের নিরাপত্তাসংক্রান্ত, পলিসি বা কৌশল নির্ধারণসংক্রান্ত পেশাতা হোক সামরিক কিংবা বেসামরিক, সরকারি কিংবা বেসরকারি, স্বরাষ্ট্র কিংবা পররাষ্ট্রতা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয় অধ্যয়নকারী গ্র্যাজুয়েটদের জন্য উন্মুক্ত।

 

. সৈয়দ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী

সভাপতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন