বিতর্ক

সহপাঠ কার্যক্রমে প্রথম পছন্দ হোক বিতর্ক

ফিচার প্রতিবেদক

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি আয়োজিত ‘কুয়েট আইভি-২০২২’ বিতর্ক প্রতিযোগিতা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

একজন সাধারণ মানুষ যে কথা কোনো প্রশ্ন না করেই মেনে নেয়, না বুঝেই বিশ্বাস করে, সেখানে একজন বিতার্কিক খোঁজ করেন কথাটির যৌক্তিকতা, যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করেন তারপর মেনে নেয়ার কথা ভাবেন। মূলত এখানেই একজন সাধারণ মানুষ আর একজন বিতার্কিকের মধ্যে পার্থক্য। বিতর্ক মানুষকে যৌক্তিক হতে শেখায়। সব কিছুকে যুক্তির ছাঁচে ফেলে বিচার করতে শেখায়। কারোর কোনো মন্তব্য, বক্তব্য অথবা বিশ্লেষণ কতটা যৌক্তিক, সে বিষয়ে ভাবতে শেখায়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি নন-একাডেমিক বা সহপাঠক্রমিক কার্যক্রমও গুরুত্বের সঙ্গে চর্চা করা হয়ে থাকে। তরুণ বয়সীদের মেধার বিকাশে যেসব সহপাঠক্রমিক কার্যক্রম রয়েছে সেগুলোর মধ্যে বিতর্ক নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিতর্কের মঞ্চে তাত্ক্ষণিক নির্ধারিত কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য যে সামান্য সময় পাওয়া যায়, তা প্রস্তুতি নিয়ে অডিটোরিয়াম ভর্তি দর্শক-শ্রোতার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার থেকে কিছুটা ভিন্ন। তাছাড়া মুহুর্মুহু যুক্তিবাণে প্রতিপক্ষকে জর্জরিত করার দক্ষতা কেবল নিয়মিত বিতর্কচর্চার মধ্য দিয়েই তৈরি করা সম্ভব। যেকোনো বিষয় নিয়ে যুক্তিযুক্ত কথা বলার কৌশল রপ্ত করার জন্য প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি সমসাময়িক বিশ্বব্যবস্থা নিয়ে ধারণা রাখতে হয়। পাশাপাশি যেকোনো বিষয়ের এপিঠ-ওপিঠ, ভালো-মন্দ দেখতে পারার অসাধারণ দক্ষতার মতো সৃজনশীল মেধারও চর্চা করতে হয় নিয়মিত।

শিক্ষার্থীদের সামাজিক বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতা, সাংস্কৃতিক এবং নৈতিক মূল্যবোধ, ব্যক্তিত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে বেশ বড় ভূমিকা রাখে বিতর্ক। একজন বিতার্কিকই পরবর্তী সময়ে চর্চার মাধ্যমে আত্মবিশ্বাসী মানুষ হিসেবে সমাজের সব ধরনের পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়ে ওঠেন।

ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির (ডিইউডিএস) মডারেটর মেহেদী হাসান বলেন, বিতর্ক করার বা বিতার্কিক হওয়ার সবচেয়ে বড় পাঁচটি সুবিধা হলোবিতর্ক আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করে, যেকোনো বিষয় নিয়ে যৌক্তিক গঠনমূলক আলোচনা-সমালোচনা করতে শেখায়, প্রতিটি বিষয়ের ভালো-মন্দ বিশ্লেষণের ক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করে এবং খুব কঠিন বিষয়কেও খুব সহজ করে সবার সামনে উপস্থাপনের এক অসাধারণ কৌশল রপ্ত করতে শেখায়।

রাজনীতির মাঠে মার্কিন নির্বাচনের রাষ্ট্রপতি বিতর্ক থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আজকাল বিতর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। বিতর্কই পারে শিক্ষার্থীদের আরো আত্মবিশ্বাসী সাহসী মানুষে রূপান্তর করতে। যেহেতু বিতার্কিক শিক্ষার্থীরা বৈশ্বিক ঘরোয়া সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর যৌক্তিক বিশ্লেষণ করে তাই কোনো অনিশ্চয়তা ছাড়াই যেকোনো অবস্থানে নেতৃত্ব দেয়ার গুণাবলিও তাদের তৈরি হয়।

ঢাবির আরবি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত মেহেদী হাসান। শিক্ষার্থীদের মনে স্বপ্ন তৈরি করতে পছন্দ শিক্ষকের। তার মতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি প্লাটফর্ম, যেখানে একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি নিজের মেধাকে শানিত করার অনেক মাধ্যম আছে। এমন সুযোগ কমবেশি দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই আছে। দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় শুরু হওয়া বিতর্ক জীবন আমাকে নানা কিছু অর্জনে সাহায্য করেছে। এরপর দেশে-বিদেশে বেশকিছু প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পেয়েছি। বিতর্কে সময় ব্যয় করাকে ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ মনে করি আমি। তাছাড়া শিক্ষক হিসেবে শ্রেণীকক্ষে পড়ানোর পাশাপাশি ক্যারিয়ার ভাবনা, বিদেশে উচ্চশিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা জোগানোটাও বেশ বড় ভূমিকা পালন করে। বিতর্কের মাধ্যমে অর্জন করা দক্ষতা শুধু কোনো বিতর্ক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রেই নয়, একাডেমিক ভাইবা থেকে শুরু করে চাকরির ভাইবার ক্ষেত্রেও বেশ সহায়তা করে।

একজন শিক্ষার্থীর সমালোচনামূলক চিন্তার দক্ষতা বাড়াতে পারে বিতর্ক। পর্যাপ্ত প্রস্তুতি প্রশিক্ষণ না থাকলে সাধারণত অনেক মানুষের সামনে কথা বলতে ভীতসন্ত্রস্ত বোধ করে অনেকেই। একজন বিতার্কিক যেকোনো পরিস্থিতিতে হাজার হাজার মানুষের সামনে কথা বলার যোগ্যতা রাখেন। নিজস্ব মতামত নিয়ে প্রশ্ন তুলতে এবং কেন তারা একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে পছন্দ-অপছন্দ করবেন, বিশ্বাস করবেন বা মেনে নেবেন তা ব্যাখ্যা করতেও সাহায্য করেন। বাড়ে সুন্দরভাবে গুছিয়ে কথা বলার দক্ষতাও। প্রচলিত শিক্ষার বিপরীতে গিয়ে বিতর্ক জানাশোনা বিষয়গুলো সম্পর্কে থাকা ধারণাকে আরো শাণিত করে। শিক্ষার্থীরা যা পড়েছেন তা আরো বেশি সময়ের জন্য মনে রাখতে সহায়তা করে। কারণ শ্রেণীকক্ষে যা শেখানো হয় শিক্ষার্থীরা তার বাস্তব প্রয়োগ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেন বিতর্কের মঞ্চে। বিতার্কিক শিক্ষার্থীরাই যৌক্তিক পৃথিবী বিনির্মাণে ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন