সারা বিশ্বে সাধারণ একটি সমস্যার নাম বিষণ্নতা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সারা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৩ দশমিক ৮ শতাংশ বিষণ্নতায় ভুগছে। তার মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ৫ শতাংশ আর ৫ দশমিক ৭ শতাংশের বয়স ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে।
সংস্থাটির তথ্যমতে, সারা বিশ্বে ২৮ কোটি মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছে। বিষণ্নতা যদি তীব্র আকার ধারণ করে তাহলে তা প্রবল শারীরিক সমস্যা তৈরি করতে পারে। বিশ্বে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে প্রাণ হারানোর ক্ষেত্রে আত্মহত্যাই সবচেয়ে বড় কারণ এবং প্রতি বছর ৭ লাখের বেশি মানুষ বিষণ্নতার কারণে প্রাণ হারায়।
রোগটির খুবই কার্যকর কিছু চিকিৎসা চালু রয়েছে। কিন্তু নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশের জনগণ সেসব সেবা পায় খুব কম। যথাযথ যত্ন না পাওয়া, প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী এবং সামাজিক কিছু কুসংস্কার থাকার কারণে বড় ধরনের সমস্যায় পড়ে ভুক্তভোগীরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার তুলনায় বাংলাদেশে বিষণ্নতার আনুমানিক ব্যাপকতা অনেক বেশি। এখানে সংখ্যাটা ২ দশমিক ৮ শতাংশ, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ায় আক্রান্ত ২ দশমিক ২ শতাংশ। দেশে পুরুষের তুলনায় নারীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। এর পেছনেও কাজ করে বিষণ্নতা। তাছাড়া পারিবারিক সহিংসতা, কম শিক্ষা, দারিদ্র্য, সন্তানের অসুস্থতা বিষণ্নতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে বেশ ভূমিকা পালন করছে।
করোনাভাইরাস মহামারীর প্রকোপ চলার সময়ও বাংলাদেশে মানসিক বিষণ্নতায় ভোগা তরুণ-তরুণীদের সংখ্যা বেড়েছে। এই সময় প্রায় ৬১ শতাংশ তরুণ বয়সী মানসিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে গেছে, যা তাদের আত্মহত্যার দিকে পরিচালিত করে। ২০২১ সালে তরুণদের সামাজিক সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের এক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।
২০১৯ সালে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে ঢাকায় পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, শিশু-কিশোরদের ১৮ শতাংশের বেশি বিষণ্নতায় আক্রান্ত।
তাছাড়া ২০২২ সালের মার্চে বাংলাদেশ জার্নাল অব মেডিকেল সায়েন্সে বলা হয়েছে, সারা বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশের চিত্রটা খুব বেশি একটা ব্যতিক্রম নয়। গ্রামীণ সম্প্রদায়ে বিষণ্নতার ব্যাপকতা ২ দশমিক ৯ শতাংশ। এবং সাধারণ হাসপাতালগুলোর সাইকিয়াট্রিক বহির্বিভাগের রোগীদের মধ্যে ৩০ থেকে ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ এ সমস্যায় ভোগে। এমনকি শিশুদের মধ্যেও বিষণ্নতার প্রবণতা দেখা যায়।