পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন সিইও ফোরামের সঙ্গে গতকাল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। পাশাপাশি পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা ও রাজস্ব নীতিসংক্রান্ত কিছু বিষয়ে সংস্কারের দাবি জানান সিইওরা।
বিএসইসির পক্ষ থেকে সংস্থাটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে সিইও ফোরামের পক্ষে ইবিএল সিকিউরিটিজ, সিটি ব্রোকারেজ, এআইবিএল ক্যাপিটাল মার্কেট সার্ভিসেস, এমটিবি সিকিউরিটিজ, উত্তরা ব্যাংক সিকিউরিটিজ, ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজসহ আরো বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে সার্বিক পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা সংক্রান্ত বেশকিছু অসংগতি এবং বিনিয়োগকারীদের করসংক্রান্ত কিছু অসামঞ্জস্যতা বিষয়ে কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ বিষয়গুলো সমাধানের জন্য উদ্যোগ নেয়ার জন্য সিইওদের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাবসিডিয়ারি কোম্পানিকে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে তুলনামূলক বেশি সঞ্চিতি সংরক্ষণ রাখতে হয়। এতে মূল প্রতিষ্ঠানগুলো সাবসিডিয়ারিগুলোকে তহবিল সরবরাহের ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত হয় এবং এতে সাবসিডিয়ারিগুলোর তারল্য সক্ষমতা কমে যায়। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের জন্য সিইওরা কমিশনকে অনুরোধ জানান। অন্যদিকে ব্যক্তি শ্রেণীর বড় বিনিয়োগকারীদের অনেকেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিপরীতে লাখ লাখ টাকা লভ্যাংশ আয় করেন। কিন্তু বাজেটে মাত্র ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ আয়কে করমুক্ত রাখা হয়েছে। এর বেশি লভ্যাংশ আয় হলে তাদের অনেক বেশি হারে কর প্রদান করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে উৎসেকর্তন করা করকেই চূড়ান্ত হিসেবে বিবেচনা করার উদ্যোগ নেয়ার জন্য কমিশনকে অনুরোধ জানানো হয়। কমিশনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সিইওদের কাছে লিখিত প্রস্তাব জমা দিতে বলা হয়েছে। লিখিত প্রস্তাব পাওয়ার পর এ বিষয়ে বিএসইসির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে। এছাড়া সভায় পুঁজিবাজারের বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে এ মুহূর্তে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করার সুযোগ নেই বলে একমত পোষণ করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, সার্বিকভাবে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নিয়ে সিইওদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা রাজস্বসংক্রান্ত কিছু বিষয় যাতে আগামী বাজেটে বিবেচনা করা হয় সেজন্য উদ্যোগ নিতে আমাদের অনুরোধ জানিয়েছেন। আমরা তাদের কাছে লিখিত প্রস্তাব চেয়েছি। প্রস্তাব পেলে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি।
পুঁজিবাজার পরিস্থিতি: গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৪ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ১৯১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এর আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৬ হাজার ২১৫ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইর ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ গতকাল ৩ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৭৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এর আগের কার্যদিবসে যা ছিল ২ হাজার ১৮০ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল দিন শেষে ৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৪৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এর আগের কার্যদিবসে যা ছিল ১ হাজার ৩৪৯ পয়েন্টে। গতকাল সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল জেনেক্স ইনফোসিস, ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস, সোনালী পেপার, বসুন্ধরা পেপার ও ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের শেয়ারের।
ডিএসইতে গতকাল ৩৫১ কোটি ৯০ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের কার্যদিবসে লেনদেন ছিল ৪২২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। গতকাল এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ৩০৪টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ১৩টির, কমেছে ৭২টির, আর অপরিবর্তিত ছিল ২১৯টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।
খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের ২৩ দশমিক ৩০ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে তথ্যপ্রযুক্তি খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০ দশমিক ৭০ শতাংশ দখলে নিয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে জীবন বীমা খাত। গতকাল পুঁজিবাজারে চামড়া খাতে সবচেয়ে বেশি দশমিক শূন্য ৪০ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। অন্যদিকে ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্নের ভিত্তিতে শীর্ষে ছিল কাগজ ও মুদ্রণ খাত।