বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও ১০-১৯ বছর বয়সী কিশোরীদের গর্ভধারণ বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ফলে সন্তান জন্মদানের সময় এসব কিশোরী প্রসূতির মৃত্যুর হার বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে রয়েছে মায়ের আজীবনের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও অপুষ্ট শিশুর জন্মদানের আশঙ্কা। অশিক্ষা, অর্থনৈতিক সংকট, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত ও অপ্রাপ্তির কারণেই বাড়ছে কিশোরীদের গর্ভধারণ।
বাংলাদেশের গাইনি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৮ বছরের আগে বিয়ে হলে কিশোরীরা অপুষ্টিতে ভোগে। পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে দরিদ্র এবং অশিক্ষিত মেয়েদের গর্ভধারণের হার বেশি। এতে পুষ্টির অভাবে ভোগে গর্ভের সন্তান। ২০ বছর বয়সের আগে সন্তান জন্ম দেয়া মায়েদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি।
ইউনিসেফ বলছে, বাংলাদেশে বয়ঃসন্ধিকালেই অনেক মেয়ে গর্ভধারণ, সহিংসতা ও অপুষ্টির ঝুঁকিতে থাকে। এ বয়সের মেয়েদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি, মানসিক ও সামাজিক বিষয়ে সচেতনতার ঘাটতি থাকে। ফলে এ অবস্থার কারণে অনেক নবজাতকের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে সন্তান প্রসবের পর মা ও শিশু রোগাক্রান্ত হন। বাংলাদেশে বয়ঃসন্ধিকালের কিশোরীদের প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন রুগ্ণ। জিংক, আয়োডিন ও আয়রনের মতো অনুপুষ্টির ঘাটতি থাকায় শতকরা ১১ জন কিশোরী রোগা পাতলা।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু তাহের মো. সানাউল্লাহ নূরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘১৫-২৫ বছর বয়সী কিশোরীদের ক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় সন্তান জন্মদানের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। পারিবারিক ও সামাজিক চাপের কারণে বিয়ের পরপরই কিশোরীরা সন্তান জন্মদানে বাধ্য হয়। ২০ বছর বয়সের আগে গর্ভধারণে কিশোরীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়।’
কিশোরী শারীরিক ও মানসিকভাবে বিয়ে ও সন্তান জন্মদানের জন্য কোনোভাবেই প্রস্তুত থাকে না—
উল্লেখ করে বারডেম জেনারেল হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতিরোগ বিদ্যা বিভাগের চিকিৎসক ডা. মাহমুদা আক্তার বলেন, ‘২০ বছর বয়সের আগে কিশোরীর পেলভিস (নিতম্বের মধ্যকার অস্থিকাঠামো) ছোট থাকে। রক্তস্বল্পতা, প্রসবপূর্ব খিঁচুনি, বাধাগ্রস্ত প্রসব, প্রসবের সময় আঘাতে প্রজনন অঙ্গ ক্ষতবিক্ষত হয়। রক্তপাত বেশি হয় জন্ম দেয়া সন্তানের ওজন কম থাকে।’
কিশোরী প্রসূতির ক্ষেত্রে প্রসবটা অনেক ক্ষেত্রে সময়ের আগে হয় উল্লেখ করে ডা. মাহমুদা আক্তার বলেন, ‘এ সময় কিশোরী প্রসূতির অন্যান্য প্রসূতির চেয়ে ব্যথা বেশি হয়। তাদের প্রায় সবাই সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিয়ে থাকেন।’ অল্প বয়সে সন্তান জন্ম দেয়ায় জীবনভর বেশকিছু স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকতে হয় এবং সিজারের কারণে আরো কিছু সমস্যাও যুক্ত হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।