সৌরবিদ্যুতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির আধিপত্য বাড়ছে

আবু তাহের

জ্বালানি সংকটের কারণে দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে। অবস্থায় জ্বালানির বিকল্প উৎস অনুসন্ধানের পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দেয়া হচ্ছে। গত এক বছরে দেশে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ বেড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। সময়ে জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়েছে ১৩০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ। সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আধিপত্য বাড়ছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্যানুসারে, বছরের ২৫ আগস্ট উৎপাদনে এসেছে লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ উপজেলার শৌলমারীতে নির্মিত ৩০ মেগাওয়াট সক্ষমতার ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৮০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা রয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল পিএলসির কাছে। এছাড়া প্যারামাউন্ট বিট্র্যাক এনার্জি লিমিটেড নামে ২০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৪৯ শতাংশ মালিকানা রয়েছে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের কাছে।

সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিনিয়োগ করেছে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বেক্সিমকো গ্রুপ। তাদের অধীনে রয়েছে ২৩০ মেগাওয়াট সক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এর মধ্যে আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিকের মধ্যে বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসতে যাচ্ছে গাইবান্ধায় নির্মাণাধীন ২০০ মেগাওয়াটের তিস্তা সোলার লিমিটেড পঞ্চগড়ে নির্মাণাধীন ৩০ মেগাওয়াটের করতোয়া সোলার লিমিটেড। উৎপাদনে আসার পর এটিই হবে দেশের সবচেয়ে বড় সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র। পুঁজিবাজারে শরিয়াহভিত্তিক সুকুক বন্ড ছেড়ে বছর হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করে বেক্সিমকো লিমিটেড। সুকুকের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থের উল্লেখযোগ্য অংশ দুই কেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় করা হচ্ছে। তিস্তা সোলার করতোয়া সোলারের ৮০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা রয়েছে বেক্সিমকো পাওয়ার লিমিটেডের (বেক্সপাওয়ার) কাছে। বেক্স পাওয়ারের ৭৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা রয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো লিমিটেডের হাতে। সোলার কোম্পানি দুটির বাকি ২০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে চীনা কারিগরি অংশীদারের কাছে।

বিষয়ে জানতে চাইলে বেক্সিমকোর নির্বাহী পরিচালক (গ্রুপ ফাইন্যান্স করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) মোস্তফা জামান বণিক বার্তাকে বলেন, বছরের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ করার প্রস্তুতি চলছে। আর সামনের বছরের প্রথম প্রান্তিকের মধ্যে বাকি ১৩০ মেগাওয়াট উৎপাদনে চলে আসবে।

এর আগে গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদনে আসে ওরিয়ন গ্রুপের এনার্গন রিনিউয়েবলস (বিডি) লিমিটেডের ১০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। আগামী বছরে বেক্সিমকো সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে গেলে সব মিলিয়ে তখন সৌরবিদ্যুৎ থেকে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়াবে প্রায় হাজার মেগাওয়াটে। যেখানে ২০২০ সাল শেষে দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৬৫০ মেগাওয়াট ছিল।

টেকসই নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) তথ্য বলছে, দেশে বর্তমানে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৯৪৮ মেগাওয়াট। এর মধ্যে সিংহভাগ সৌরবিদ্যুৎ। খাত থেকে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ৭১৪ মেগাওয়াট। সরাসরি ৩৫৮ মেগাওয়াট গ্রিড কানেকটেড। বাকি ৩৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অফ গ্রিড এলাকায় সরবরাহ করছে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানি।

বিপিডিবির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে আটটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। এসব কেন্দ্রের মধ্যে উল্লেখ্য মানিকগঞ্জে ৩৫ মেগাওয়াট, রাঙ্গামাটির কাপ্তাই লেকে নির্মাণাধীন মেগাওয়াট, জামালপুরের সরিষাবাড়ীর মেগাওয়াট, ময়মনসিংহের সুতিয়াখালীতে ৫০ মেগাওয়াট, মোংলায় ওরিয়ন গ্রুপের ১০০ মেগাওয়াট, সিরাজগঞ্জে সাড়ে মেগাওয়াট, ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ারের ৩০ মেগাওয়াট পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় মেগাওয়াট।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন