দেশে গ্রন্থাগারে উচ্চশিক্ষার পরিধি বাড়ানো প্রয়োজন

ড. এসএম জাবেদ আহমদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশে গ্রন্থাগারসংশ্লিষ্ট পেশায় নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। সে কারণে স্বাভাবিকভাবেই গ্রন্থাগার ডিগ্রিধারীদের কর্মবাজারে চাহিদা বাড়ার কথা। ক্রমসম্প্রসারিত খাতের জনবলের জোগান দিতে শিক্ষা ব্যবস্থায় গ্রন্থাগার শিক্ষার সুযোগ পরিধি বেড়েছে কি?

উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে মাত্র তিনটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রন্থাগারবিষয়ক বিভাগ চালু রয়েছে। শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র একটিতে স্নাতক ডিগ্রি দেয়া হয়। গ্রন্থাগার খাতের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যে সংখ্যক মানবসম্পদ তৈরি হচ্ছে, চাহিদার তুলনায় তা খুবই কম। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আরো বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগটি চালু করা উচিত। যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে ৭৫টি আসন ছিল কিন্তু চলতি বছর ১০টি আসন সংখ্যা কমানো হয়েছে। ক্লাসের গুণগত মান নিশ্চিত করতে ঢাবির সব বিভাগেই বছর আসন সংখ্যা কমিয়েছে। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনেক প্রতিষ্ঠান গ্রন্থাগার বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স অফার করে। গ্রন্থাগার খাতে কর্মরতদের একটা বড় অংশই এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি নেয়া।

আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রন্থাগার সেবা নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ জানতে চাই।

সময়ের পরিক্রমায় গ্রন্থাগার ব্যবহারের অনেক দিকই পরিবর্তিত হয়েছে। একসময় ছোটখাটো অনেক তথ্য জানার জন্যও আমাদের গ্রন্থাগারে যেতে হতো। এখন তথ্যের জন্য লাইব্রেরিতে যেতে হয় না। আগে আমরা একটি শব্দের অর্থ খুঁজতে ডিকশনারি খুঁজতাম এখন আর হার্ড কপি ডিকশনারি না খুঁজে গুগলে অনুসন্ধান করি। -রিসোর্স গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এখানে আমাদের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আগে আমরা ৪০০ থেকে ৫০০ প্রিন্ট জার্নাল নিয়ে কাজ করতাম এখন অনলাইনে ২১ হাজার জার্নাল সাবস্ক্রিপশন করি। এগুলোর অ্যাকসেস নিশ্চিত করাও অনেক বড় দায়িত্ব। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকাকালীন সব জার্নালে প্রবেশ করা যায় কিন্তু বাইরে গেলে তখন রিমোট অ্যাকসেস সিস্টেম চালু করতে হয়। আমাদের যেসব রিসোর্স আছে সেগুলোর প্রিন্ট ভার্সন অনলাইনে নিয়ে আসা হচ্ছে। লাইব্রেরি ডিজিটালাইজেশনে প্রচুর কাজ চলছে। লাইব্রেরিয়ান পেশায় কাজ কমেনি বরং আগের থেকে আরো বেড়েছে। এখন তথ্যগুলো ব্যবহারকারীদের কম্পিউটার বা ল্যাপটপে পৌঁছে দেয়ার পর্যায়ে কাজ করতে হয়। একজন শিক্ষার্থীর গবেষণার জন্য যা কিছু দরকার প্রায় সবই এখন লাইব্রেরিতে পাওয়া যায়।

গ্রন্থাগার পেশায় কর্মরত জনবলের একটি বড় অংশ ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী। মানসম্মত গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনার জন্য যে দক্ষতা দরকার তার জন্য ডিপ্লোমা ডিগ্রি যথেষ্ট কি?

গুণগত মানের ডিপ্লোমা ডিগ্রি সম্পন্ন করে গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনার অনেক মৌলিক বিষয়ে জানা সম্ভব। যদিও দেশে গ্রন্থাগার বিষয়ে যেসব প্রতিষ্ঠান ডিপ্লোমা ডিগ্রি দিচ্ছে, তার একটি বড় অংশেরই শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এজন্য সেখানকার ডিগ্রিধারীদের মান নিয়ে সংশয় থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই আমার মতে, বর্তমানে যারা ডিপ্লোমা করে পেশায় আসছে তাদের দক্ষতার মান যথেষ্ট নয়।

বৈশ্বিক উচ্চশিক্ষায় গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনার ধরন, পরিধি এবং বিষয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বিষয়ে জানতে চাই।

যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নয়ন বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় তথ্যবিজ্ঞান গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনেক ডিগ্রি গবেষণা প্রদান করা হয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণমূলক অনেক কোর্স রয়েছে। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী এখান থেকে শেষ করে বিদেশে উচ্চতর শিক্ষা গবেষণার জন্য যাচ্ছে। বিদেশে উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি কাজেরও সুযোগ রয়েছে। অন্যান্য বিভাগের তুলনায় কোনো অংশে কম নয়। আমাদের শিক্ষার্থীরা বিদেশে শিক্ষকতা করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর সুযোগ রয়েছে। যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, স্কান্ডিনেভিয়ান দেশ ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইডেনসহ ইউরোপের দেশগুলোয় মাস্টার্স, পিএইচডি গ্রহণের পাশাপাশি চাকরিরও সুযোগ রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন