চোখে-মুখে কী উচ্ছ্বাস! দেশের ৬৪টি জেলা থেকে এসেছে তারা। আট বছরের স্কুল শিক্ষার্থী থেকে ১৮ বছরের কলেজপড়ুয়া। উপলক্ষ পঞ্চম বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড। গত ২৫-২৬ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে অংশ নেয় কয়েকশ খুদে রোবটিয়ান। রোবটকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে স্মার্ট সিটি গড়া যায় এমন বিভিন্ন রোবট তৈরি করেছে তারা। আগুন নেভানোর রোবট, সড়ক দুর্ঘটনা কমানো রোবট, রাস্তা পরিষ্কারকারী রোবট, রেস্টুরেন্টে সেবাদানকারী রোবট, বৃদ্ধ মানুষকে দেখাশোনা করার রোবট, ইমার্জেন্সি পরিবহন রোবট, হাসপাতালে সেবাদানকারী রোবটসহ বিভিন্ন ধরনের রোবট তৈরি করেছে স্কুলপড়ুয়া এসব শিক্ষার্থী।
‘রোবটিকসের এক কর্মশালায় লাইন ফলোয়ার রোবট তৈরি করেছিলাম। রোবটটির কাজ ছিল সাদা মেঝের ওপর কোড অনুযায়ী কালো লাইন অনুসরণ করে চলা। শুরুর দিকে মনে খটকা লাগত আমাদের নির্দেশনায় আসলেই কি রোবটটি চলবে! দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে আমরা যখন রোবটটি বানানো শেষ করে নির্দিষ্ট লাইন ফলো করার কোড আপলোড করে দিলাম, দেখলাম রোবটটি সত্যি সত্যিই সেই কোড অনুসরণ করে চলছে। আমরা যা বলছি কোনো একটি যন্ত্র তা মেনে চলছে। কী চমত্কার একটি ব্যাপার! সেই থেকে রোবটিকসের প্রতি ভালোবাসা শুরু।’
রোবটিকসে নিজের পথচলার গল্প বলছিলেন পঞ্চম বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারী রাজশাহী কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাদিয়া আনজুম পুষ্প।
অলিম্পিয়াডে দুটি গ্রুপে সারা দেশ থেকে অংশগ্রহণ করে মোট ১ হাজার ৬৪ জন প্রতিযোগী। ৭-১২ বছরের শিশুরা জুনিয়র গ্রুপে এবং ১৩ থেকে অনূর্ধ্ব-১৮ বছরের শিশুরা চ্যালেঞ্জ গ্রুপে। জুনিয়র ও চ্যালেঞ্জ দুটি গ্রুপে ফিজিক্যাল কম্পিউটিং, ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরি, রোবটিকস কুইজ, রোবট গ্যাদারিং এবং রোবট ইন মুভি মোট পাঁচটি ক্যাটাগরিতে জাতীয় পর্বে বিজয়ী হয়েছে ৩৭ জন শিক্ষার্থী। বিজয়ীদের মধ্য থেকে পরবর্তী সময়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ এবং ওয়ার্কশপের মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরাই ২০২৩ সালের ১২-১৬ জানুয়ারি থাইল্যান্ডের ফুকেট শহরে ২৪তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে।
স্মার্ট সিটি প্রতিপাদ্য সামনে রেখে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক যৌথভাবে আয়োজন করে এ পঞ্চম বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড। লক্ষ্য শিশু-কিশোরদের নতুন প্রযুক্তি তথা রোবটিকস ও প্রোগ্রামিংয়ে আগ্রহী করে তোলা। তাই জাতীয় পর্বের আগে আটটি বিভাগের ১০টি শেখ রাসেল স্কুল অব ফিউচার ল্যাবে দিনব্যাপী রোবটিকস প্রশিক্ষণের কর্মশালা আয়োজন করা হয় এবং ৩০০ শিক্ষার্থীকে হাতে-কলমে রোবটিকসের বিভিন্ন প্রজেক্ট তৈরি করা শেখানো হয়।
স্কুলের আট বছরের শিশুরাও পিছিয়ে নেই রোবট তৈরিতে। বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে তৈরি করছে চমত্কার রোবট। এবার অলিম্পিয়াডের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে নিজের স্বপ্ন পূরণের কথা জানালেন কথাসাহিত্যিক ও বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি বলেন, ৫০ বছর আগে আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম, তখন ভাবতাম যে রোবট কি আমরা কোনো দিন পাব, রোবট কি কোনো দিন দেখব? সেজন্য আমি বানিয়ে বানিয়ে রোবটের গল্প লিখতাম। আর এখন তোমরা (শিক্ষার্থীরা) নিজেরা রোবট তৈরি করছ। আমাদের দেশের এতগুলো ছেলেমেয়ে রোবট নিয়ে কাজ করেছে। খুব চমত্কার লাগে দেখতে! আমাদের দেশে পড়াশোনাটা এখনো ঠিক হয়নি। ঠিক করার চেষ্টা হচ্ছে।
বাংলাদেশ দল: ২৪তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াড ২০২২ এর জন্য ১৬ সদস্যের বাংলাদেশ দল গঠন করা হয়েছে। তারা থাইল্যান্ডের ফুকেটে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। বাংলাদেশ দলের সদস্যরা হলো— উইলিয়াম ক্যারি একাডেমীর শিক্ষার্থী জাইমা জাহিন ওয়ারা, ন্যাভি এংকোরেজ স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মাহরুজ মোহাম্মদ আয়মান, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী শবনম খান, জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী রাফিহাত সালেহ, সানবিমসের শিক্ষার্থী নাশীতাত যাইনাহ রহমান, চিটাগং গ্রামার স্কুল-ঢাকার শিক্ষার্থী কাজি মুস্তাহিদ লাবিব, সাউথ পয়েন্ট স্কুলের শিক্ষার্থী মারজিয়া আফিফা পৃথিবী, উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওমর করিম, মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের শিক্ষার্থী মাহির তাজওয়ার, ভিকারুন্নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া মেহনাজ ও মাইশা সোবহান, ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরেফিন আনোয়ার, ওয়াই ডব্লিউ সিএ হায়ার সেকেন্ডারি গার্লস স্কুলের শিক্ষার্থী নুসাইবা তাজরীন তানিশা, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থী আবরার শহীদ, রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী সাদিয়া আনজুম পুষ্প এবং ভাঙ্গুরা পাবলিক স্কুলের শিক্ষার্থী বিএম হামিম।
