পর্যটন খাতের ক্যারিয়ারে আগ্রহ বাড়ছে

আরিফুর রহমান দ্য প্যালেস লাক্সারি রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। দেশের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট খাতের সমস্যা সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন সাইফ সুজন

শুরুতে দেশের পর্যটন খাত বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ জানতে চাই।

অর্থনীতি বড় হওয়ার সঙ্গে একটি দেশের পর্যটন খাতেরও বিকাশ ঘটে। তেমনিভাবে গত এক দশকে বাংলাদেশেও খাতটির বেশ প্রসার ঘটেছে। মোটা দাগে বলতে গেলে দেশের পর্যটন খাত ঘিরে চ্যালেঞ্জ সম্ভাবনা দুটিই রয়েছে। একদিকে আমাদের সামনে অনুন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা, বৈদ্যুতিক গোলযোগ, নীতিগত অসামঞ্জস্য, দক্ষ জনবলের অভাবসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোয় ছুটির দিনের বাইরে অতিথি পাওয়া যায় না। এজন্য বছরের বড় একটি সময় অবকাঠামো জনবলের উপযোগিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। অন্যদিকে মানুষের মধ্যে ঘোরাঘুরির আগ্রহ বাড়ছে, নতুন নতুন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান উদ্যোগ চোখে পড়ছে। তবে সব মিলিয়ে খাত ঘিরে আশার অনেক দিক রয়েছে। এক্ষেত্রে আমি মনে করি, বিদেশী পর্যটকদের চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে বিশেষ কিছু উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। এর জন্য বিশেষ কোনো নীতিমালা তৈরির প্রয়োজন হলে সেটাও করতে হবে।

আপনি বলছিলেন সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পর্যটন খাতে বেশ বিকাশ ঘটেছে। এর ফলে দেখা যাচ্ছে পর্যটন খাতের কর্মসংস্থান ঘিরে -বিষয়ক বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে। পর্যটন খাতে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী ধরনের?

আমরা যখন মৌলভীবাজারে প্যালেস চালু করি, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে তখন ওখানে প্রয়োজনীয়সংখ্যক জনবল পাওয়াই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে এখন প্রচুরসংখ্যক গ্র্যাজুয়েট অন্যান্য ডিগ্রিধারী ছেলেমেয়ে পর্যটন খাতে ক্যারিয়ার গড়তে আসছেন। তবে সামাজিক মর্যাদাকেন্দ্রিক কিছু তারতম্যের কারণে অনেকে দেশে পড়ালেখা করে ক্যারিয়ার গড়তে বিদেশে চলে যাচ্ছেন। আরেকটি বিষয় বেশ লক্ষণীয়। সেটা হচ্ছে, আমাদের দেশের গ্র্যাজুয়েট গড়ে তোলার প্রক্রিয়াটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাত্ত্বিক মনে হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, ছেলেমেয়েরা প্রয়োজনীয় সব বিষয়ই জানেন, তবে কাজের ক্ষেত্রে সেটার প্রয়োগ ঘটাতে পারছেন না। এক্ষেত্রে আমার মনে হয়, ইন্টার্নশিপের পরিধি সময়সীমা আরো বাড়ানো যেতে পারে। একই সঙ্গে ইন্টার্নশিপ চলাকালীন শিক্ষার্থীরা যেন ন্যূনতম একটি আর্থিক প্রণোদনা পান, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। আরেকটা বিষয় আমি আলোকপাত করতে চাই। বিদেশে গেলে দেখা যায়, অনেক বাংলাদেশী বড় বড় প্রতিষ্ঠানে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। তাদের অনেকেই দেশে এসে কাজ করতে চান। তবে সেক্ষেত্রে শিক্ষাগত সনদ না থাকায় তাদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। চাকরির বিজ্ঞাপনে যখন শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত দেখেন, তখন তারা আবেদনই করেন না। তবে এক্ষেত্রে নীতিগত পদক্ষেপ নিয়ে তাদের দেশে নিয়ে আসার সুযোগ রয়েছে।

পর্যটন খাতে ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে অনাগ্রহের একটি কারণ হিসেবে দেখা হয়, নিম্নমানের বেতন কাঠামোকে। আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

আসলেই দুর্বল বেতন কাঠামোর কারণে মেধাবীদের খাতে আকৃষ্ট করতে পারছি না। এটা আমাদের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এমনকি অনেকে দেশের পর্যটন খাতে যুক্ত হওয়ার পর প্রত্যাশিত উপার্জন না পেয়ে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন। পর্যটন খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশকিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। নানা কারণে খাতের প্রতিষ্ঠান কখনই উচ্চ মুনাফায় যেতে পারে না। ফলে কর্মীদেরও প্রত্যাশা অনুযায়ী বেতন-ভাতা দেয়া সম্ভব হয় না। তবে বেতনের আকার কিছুটা কম হলেও আমরা প্যালেসের কর্মীদের বেশকিছু সুবিধা দিয়ে থাকি। তাদের তিনবেলা খাবার থাকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে করা হয়। এছাড়া সার্ভিস সার্জ বাবদ যে অর্থ আসে, তার পুরোটাই কর্মীদের মাঝে ভাগ করে দেয়া হয়। কর্মীদের বেতন কাঠামো বিষয়ে ভিন্ন একটি পর্যবেক্ষণও রয়েছে। দেশের বাইরে গেলে দেখা যায়, একেকজন কর্মী দিনে ২৫টি রুমেও সার্ভিস দেন। সেটা আমাদের দেশে ১৫টির বেশি দেখা যায় না। অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি, দেশের কর্মীদের উৎপাদনশীলতায়ও এক ধরনের ঘাটতি রয়েছে। এজন্য প্রতিষ্ঠানকে বেশি কর্মী নিয়োগ দিতে হচ্ছে। আর যখন বেশি কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই বেতনের আকার কমাতে হয়।

পর্যটন খাতে উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে বড় বিনিয়োগের প্রয়োজন পড়ে। এক্ষেত্রে কোনো গ্র্যাজুয়েট যদি খাতের উদ্যোক্তা হতে চান, তার আদৌ কোনো ধরনের সুযোগ রয়েছে কিনা?

আমার মতে এটা বেশ কঠিন। আপনি খেয়াল করবেন আমাদের দেশের ব্যাংকগুলোর পর্যটন খাতে বিনিয়োগের পরিমাণও অপেক্ষাকৃত অনেক কম। তবে কেউ যদি ভালো কোনো কনসেপ্ট নিয়ে আসে, সেক্ষেত্রে স্টার্টআপকে অর্থায়ন করেএমন অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। এছাড়া কয়েকজন মিলেও প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন