উন্মোচন হচ্ছে সম্ভাবনা, বাড়ছে পড়ার সুযোগও

শফিকুল ইসলাম

গত কয়েক দশকে দেশের টেলিযোগাযোগ খাত বিকশিত হয়েছে দ্রুতই। সেলফোন অপারেটরদের সেবার ব্যাপ্তি যেমন বেড়েছে, তেমনি ইন্টারনেট সেবাগ্রহীতার সংখ্যাও বেড়েছে। মহাকাশে নিজস্ব স্যাটেলাইট উেক্ষপণের আগে থেকেই চালু ছিল কয়েক ডজন স্যাটেলাইট চ্যানেল। দেশেই তৈরি হচ্ছে নেটওয়ার্কসংশ্লিষ্ট নানা হার্ডওয়্যার। টেলিযোগাযোগ খাতে নতুন নতুন ক্ষেত্র উন্মোচনের পাশাপাশি বাড়ছে টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার বা টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলীর চাহিদা।

দেশে সেলফোন সেবার বিকাশ পর্বের শুরুর দিকে টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী হিসেবে দেশে নিয়োগ দেয়া হয় ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (ইইই) স্নাতকদের। চাহিদা তৈরি হওয়ায় পরবর্তী সময়ে ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইটিই) বিভাগ চালু করে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) নামেও একই ধরনের স্নাতক ডিগ্রি দেয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আইনুল হক বলেন, ইইই ইটিই বিভাগের কারিকুলাম ৮০ শতাংশ প্রায় একই রকম। সেলফোন অপারেটরদের নেটওয়ার্কের বিস্তৃতির পাশাপাশি বেড়েছে গ্রাহকও। এতে টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদাও বাড়ছে। এজন্যই টেলিযোগাযোগের বিশেষায়িত নতুন বিভাগ চালু হয়।

টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কারিকুলামে ইইই সিএসইর সম্মিলিত কোর্সগুলো পড়ানো হয়। ফলে তথ্য-প্রযুক্তি খাতসংক্রান্ত অন্যান্য ক্ষেত্রেও ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়ার সুযোগ রয়েছে টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলীদের।

যোগাযোগের বিষয়টি এখন বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম টেলিযোগাযোগ ডাটানির্ভর যোগাযোগ সেবা। বিভিন্ন দেশে গড়ে ওঠা টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকটি এরই মধ্যে তাদের গণ্ডি ছাড়িয়ে হয়ে উঠেছে বৈশ্বিক, আঞ্চলিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে অন্যতম এটিঅ্যান্ডটি, ভেরাইজন, চায়না মোবাইল, অরেঞ্জ, ভোডাফোন, টেলিনর এয়ারটেলসহ বেশ কয়েকটি জায়ান্ট টেলিকম প্রতিষ্ঠান।

দেশেও দেশী-বিদেশী বিনিয়োগে চালু হওয়া চার অপারেটর এখন সেলফোন সেবা দিচ্ছে। এর মধ্যে একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত সেলফোন অপারেটর টেলিটক বাংলাদেশ। টেলিনরের বিনিয়োগে চালু রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় সেলফোন অপারেটর গ্রামীণফোন। রবি আজিয়াটায় বিনিয়োগ রয়েছে মালয়েশিয়াভিত্তিক আজিয়াটার। এটির সাব ব্র্যান্ড হিসেবে সেবা দিচ্ছে এয়ারটেল। এছাড়া ভিয়নের বিনিয়োগ রয়েছে দেশের অন্যতম সেলফোন অপারেটর বাংলালিংকে।

সেলফোন অপারেটরদের বাইরেও টেলিযোগাযোগ খাতের বেশকিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলোয় কাজের সুযোগ রয়েছে বিশেষায়িত প্রকৌশলীদের। গ্রাহকের কাছে টেলিযোগাযোগ সেবা পৌঁছে দিতে নেটওয়ার্ক টপোলজিতে আরো রয়েছে ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স), ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি), ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন অ্যান্ড ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলীদের চাহিদা রয়েছে।

তারবিহীন সম্প্রচারের ক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক তৈরি রক্ষণাবেক্ষণে মূল ভূমিকায় থাকেন টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলীরা। টেলিভিশন রেডিও সম্প্রচার ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নেটওয়ার্ক পরিচালনায় তাদের কাজের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া ডাটাভিত্তিক সেবাসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) সাবমেরিন কেবল নেটওয়ার্ক অপারেটর প্রতিষ্ঠানেও কাজ করতে পারেন টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলীরা।

টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলীদের কাজের ক্ষেত্র মূলত নেটওয়ার্ক ডিজাইন, টেলিকম যন্ত্রপাতির তদারকি রক্ষণাবেক্ষণ এবং নেটওয়ার্ক সচল রাখা। এছাড়া ইলেকট্রনিক সুইচিং সিস্টেম, অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্ক, আইপি নেটওয়ার্ক এবং মাইক্রোওয়েভ ট্রান্সমিশন ব্যবস্থাএসব ক্ষেত্রেও দক্ষতা অর্জন করতে পারেন তারা।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে সেলফোন সেবার সংযোগ সংখ্যা এখন ১৮ কোটিরও বেশি। একাধিক সংযোগের হিসাব এক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। একক গ্রাহক হিসাব করলে সংখ্যাটি ১০ কোটির কাছাকাছি দাঁড়াবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তবে সংখ্যাও বিশ্বের অনেক দেশের জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। এদিকে দেশে ইন্টারনেট সেবার আওতায় রয়েছে প্রায় ১৩ কোটি সংযোগ। এর মধ্যে সিংহভাগই সেলফোন অপারেটরদের ডাটাভিত্তিক সেবার গ্রাহক। বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের জন্য সেবার মান নিশ্চিতে অন্যতম ভূমিকা রাখছেন টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলীরা।

ঘরে ঘরে সেলফোন সেবা পৌঁছে যাওয়ায় তৈরি হয়েছে হ্যান্ডসেটের বড় বাজার। একসময় আমদানিনির্ভরই ছিল এটি। তবে সম্প্রতি চিত্র পাল্টেছে। দেশে এখন তৈরি হচ্ছে হ্যান্ডসেটের চাহিদার বড় অংশ। স্থানীয় ব্র্যান্ডের পাশাপাশি গ্লোবাল বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের হ্যান্ডসেট দেশেই তৈরি হচ্ছে। খাতেও চাহিদা রয়েছে বিশেষায়িত প্রকৌশলীর।

তথ্যপ্রযুক্তির যুগে টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলীদের বিস্তর কাজের ক্ষেত্র রয়েছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি সেবার অন্তর্ভুক্তি খাতের পরিধিও বাড়িয়ে তুলছে। প্রয়োজন পড়ছে দক্ষ টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলীর। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বখ্যাত সব প্রতিষ্ঠানেও রয়েছে তাদের কাজের সুযোগ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন