পর্যালোচনা

আমদানি নিয়ন্ত্রণের পর বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল হওয়ার পথে কি?

ড. জাইদী সাত্তার

বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটা পদক্ষেপ ছিল আমদানি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাড়তি চাহিদা হ্রাস করা। উদ্যোগ মনে হয় কাজ করছে, যখন রফতানি রেমিট্যান্স প্রবাহে চলতি বছর আপাতত একটা ইতিবাচক ধারা লক্ষ করা যাচ্ছে। 

২০২২ অর্থবছরের শেষের দিকে বৈশ্বিক প্রভাবে আমাদের অর্থনীতি তিনটি বড় অর্থনৈতিক অভিঘাতের মুখোমুখি হয়। প্রথম অভিঘাতটি আসে মহামারী-উত্তর সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়া থেকে। এতে পণ্য সরবরাহ বাধাগ্রস্ত  হয় এবং ব্যয় বেড়ে যায়। দ্বিতীয় অভিঘাত হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, যা তৃতীয় অভিঘাতের সৃষ্টি করে। অভিঘাতে খাদ্য তেলের দাম বেড়ে যায়, যা বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি উসকে দিয়েছে। এর ফলস্বরূপ বাংলাদেশেও বেড়ে যায় খাদ্য জ্বালানির দাম।

তিন অভিঘাতের সম্মিলিত প্রভাব চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির পর বৈশ্বিক অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিও এর প্রভাব থেকে রেহাই পায়নি। ২৫ বছরের বেশি সময়জুড়ে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় শক্তিশালী ভিত রচনা সত্ত্বেও বৈশ্বিক ঘটনাপ্রবাহের কারণে পুরো ব্যবস্থা নড়বড়ে হয়েছে, যার ওপর বাংলাদেশের কোনো হাত ছিল না। ২০২২ অর্থবছর বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটা ভালো বছর হয়ে উঠছিল। ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত রফতানিতে ৩৫ শতাংশ রেকর্ড প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল, কিন্তু আমদানিও বাড়ছিল প্রায় ৫০ শতাংশ হারে। জুনে শেষ হওয়া ২০২২ অর্থবছরে রফতানি ৩৫ শতাংশের ওপরে উন্নীত হয়েছিল এবং আমদানি নেমে এসেছিল ৩৬ শতাংশে। এটা মূলত কমেছে উচ্চ আমদানি মূল্য এবং শেষের মাসগুলোয় আমদানি নিয়ন্ত্রণ বৈদেশিক মুদ্রার যথাযথ ব্যবহারের কারণে। রফতানি আমদানির সম্মিলিত উল্লম্ফনের ঘটনা বাংলাদেশের বাণিজ্য ইতিহাসে অজানা নয়। এটি ১৯৯৫ সালেও ঘটেছিল (আমদানি ৪১ শতাংশ উল্লম্ফনের সঙ্গে রফতানিতে উল্লম্ফন হয়েছিল ৩০ শতাংশ) ২০১১ সালেও এটা ঘটেছিল। তখন রফতানি বেড়েছিল ৪২ শতাংশ এবং আমদানি বেড়েছিল ৫২ শতাংশ। অপতত্পরতা দায়ী বলে ঢালাও রায় না দিয়ে সমসাময়িকভাবে রফতানির তুলনায় আমদানি কেন বেড়েছে, সেটি গভীর গবেষণার বিষয়। কথা হলো, এর সঙ্গে এখন একই বছর কিংবা পরবর্তী বছরগুলোয় শিল্পোৎপাদন বেড়েছে!

আমাদের আমদানি ব্যয় সাধারণত রফতানির তুলনায় ১০-২০ বিলিয়ন ডলার বেশি থাকে। কারণ দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য আমদানির প্রয়োজনও বেড়ে চলছে। এতে প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতিও বাড়ছে। আমদানি পণ্যগুলোর ওপর পিআরআইয়ের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, মোট আমদানির মধ্যে ভোগ্যপণ্যের অংশ শুধু ১৮ শতাংশ, বাকি ৮২ শতাংশই হলো মৌলিক কাঁচামাল, মধ্যবর্তী মূলধনি পণ্য। এর সবই অর্থনীতির উৎপাদনশীল খাত, বিশেষ করে শিল্পে ব্যবহার হয়। লক্ষণীয়, বাংলাদেশ প্রাথমিকভাবে শিল্পপণ্যের রফতানিকারক (রফতানির ৯৫ শতাংশ), যেগুলোর জন্য প্রয়োজন আমদানীকৃত উপকরণ; বিপরীতে পাট, সুতা তেলের মতো গুটিকয়েক পণ্য কেবল দেশের মাটি থেকে আহরিত হয়। ফলে রফতানিতে উল্লম্ফন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আমদানিতে উল্লম্ফন ঘটায়। দেশে রফতানি বৃদ্ধির এমন কোনো ঘটনা নেই, যার সঙ্গে আমদানিতেও উল্লম্ফন ঘটেনি।আমদানিনির্ভরঅর্থনীতি বলাটা তাই দুর্ভাগ্যজনক হিসেবে বিবেচিত হবে না। কারণ শিল্পায়ন আমদানিনির্ভরতা বাড়ায়। এতে খারাপ কিছু নেই। বিশ্বে রফতানি পাওয়ারহাউজ এবং সর্ববৃহৎ আমদানিকারক (রফতানি তিন ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি) হিসেবে পরিচিত চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আমদানিকারকও (প্রায় ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি আমদানি)

আমদানি-রফতানির সঙ্গে যুক্ত উল্লম্ফনও বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ায়, যা অর্থায়ন করা প্রয়োজন। সৌভাগ্যজনকভাবে রফতানির পাশাপাশি আমদানির একটি রেডি সোর্সও আমাদের আছে। সেটি হলো অভিবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স। ২০০১ সাল থেকে বেশির ভাগ বছরেই বাণিজ্য ঘাটতির অনেকটা পুষিয়ে দিয়েছে বেড়ে চলা রেমিট্যান্স। ফলে গত পাঁচ বছরে চলতি হিসাবে সামান্য ঘাটতি বাদ দিলে ধারাবাহিকভাবে চলতি হিসাবে পরিমিত উদ্বৃত্ত থেকেছে। কারণে আমদানিতে ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি আমদানিকে ৮২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে। এর ফলে লেনদেন ভারসাম্যে এবং বিনিময় হারে বিপুল চাপ সৃষ্টি হয়েছে। কাজেই বাজারে ডলার বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার (পড়ুন ডলার) ৮৬ টাকায় রাখার বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি আর ধরে রাখা যায়নি। বরং তার পরিবর্তে বোতলের জিন বেরিয়ে এসেছে এবং ফটকাবাজির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সেটি এমন এক সময়ে ঘটেছে, যখন শ্রীলংকার অর্থনীতি বিপুল বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় দেউলিয়া হয়ে পড়েছিল।

বাংলাদেশ অবশ্য শ্রীলংকার নৌকার ধারেকাছেও নেই। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফের করা ঋণ স্থায়িত্বশীলতার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাংলাদেশের ঋণ পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক। বাংলাদেশ শিগগিরই শ্রীলংকার মতো হতে যাচ্ছে এমন মন্দ সংবাদের বিপরীতে আইএমএফ বিবৃতি পুনর্ব্যক্ত করে এগিয়ে এসেছে যে, বাংলাদেশের ঋণ পরিস্থিতি প্রকৃতপক্ষে ভালো এবং  আইএমএফের রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ট্রাস্ট (আরএসটি) তহবিলের সুবিধা নিতে প্রাক পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশ সংস্থাটির কাছ থেকে ঋণ নেয়ার জন্য আলোচনা করছে। এর উদ্দেশ্য অর্থনীতির আরো অবনতি এবং বাইরের অভিঘাত মোকাবেলা করা।  


সমস্যার উৎস: আমদানিতে উল্লম্ফন

আমদানিতে উল্লম্ফনই বিনিময় হার সমস্যার উৎস। আমদানি বৃদ্ধির বিষয়টি প্রাথমিকভাবে খাদ্য জ্বালানিতে বৈশ্বিক মূল্যের বৃদ্ধিসহ রফতানিতে উল্লম্ফনের সঙ্গে যুক্ত। সহজ ভাষায় বিনিময় হার হলো বৈদেশিক মুদ্রার (যেমন মার্কিন ডলার) দাম। এটা নির্ধারিত হয় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা সরবরাহের মাধ্যমে। চাহিদা আসে পণ্য সেবা আমদানি থেকে আর সরবরাহ আসে পণ্য সেবা রফতানি, দ্বিপক্ষীয় বহুপক্ষীয় সংস্থা থেকে প্রাপ্ত আনুষ্ঠানিক উন্নয়ন সহায়তা (ওডিএ) এবং এফডিআইয়ের অভ্যন্তরীণ প্রবাহ থেকে। আমদানি বৃদ্ধি বাড়তি চাহিদা তৈরিপূর্বক বিনিময় হার অবমূল্যায়নে চাপ সৃষ্টি করেছে। ফলে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে। ডলার আরো শক্তিশালী হয়েছে। যদিও বাংলাদেশ ২০০৩ সাল থেকেফ্লোটিং এক্সচেঞ্জ রেটচালু করেছিল, তবে বাস্তবিক চর্চা ছিলম্যানেজড ফ্লোট সম্ভবত খুব বেশি ম্যানেজড করাটা প্রায়ফিক্সড এক্সচেঞ্জ রেট সিস্টেমেরমতো দেখায়, সেজন্যই ব্যবস্থা। একটা উদাহরণ দেয়া যাক। যেমন ২০২২ সালের মে মাসের আগ পর্যন্ত প্রায় তিন বছর ডলারের বিনিময় হার ৮৫-৮৬ টাকায় রয়ে গিয়েছিল। রিজার্ভ থেকে বিলিয়ন ডলার বাজারে ছাড়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকার মান ৯৫ টাকায় না পৌঁছানো পর্যন্ত বিনিময় হার ভাসমান রেখেছিল। ইকুলিব্রিয়াম মার্কেট রেট বলাটা মুশকিল হওয়ায় কোথায় গিয়ে টাকার মান ঠেকবে তা অনেকটা অনিশ্চিত। একটি ইকুলিব্রিয়াম মার্কেট এক্সচেঞ্জ রেট হলো সেটা, যেখানে চাহিদা সরবরাহের ভারসাম্য সৃষ্টি হয়। দৈনিক ভিত্তিতে আমদানি-রফতানি হওয়া কোনো গতিশীল অর্থনীতিতে এমন কোনো টেক্সটবুক ফর্মুলা নেই, যা আমাদের বলতে পারে এটা আসলে কী। বাংলাদেশ ব্যাংকের জাজমেন্ট কল অনুযায়ী প্রতি ডলার ৯৫ টাকাতেই চাহিদা-সরবরাহ ভারসাম্যাবস্থার দিকে যেতে পারে। এটা সঠিক হতে পারে, যদি বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে বাড়তি চাহিদা কমানো যায়। এখন আমরা যেমনটা আমদানি চাহিদা হ্রাসে প্রশাসনিক ব্যবস্থা দেখছি। যদি বৈদেশিক মুদ্রার অভ্যন্তরীণ প্রবাহের চেয়ে বহির্মুখী বাড়তি চাহিদা বজায় থাকে, তাহলে টাকা আরো অবমূল্যায়িত হবে।

তবে চাহিদা-সরবরাহের ব্যবধান কমার কিছু ইতিবাচক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। খাদ্য, জ্বালানি এবং অন্য শিল্প পণ্যের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে বিনিময় হারে ১১ শতাংশ অবমূল্যায়ন আমদানি খরচও সমহারে বাড়িয়েছে। সাম্প্রতিক প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণসহ আমদানি মূল্যের প্রভাব সার্বিকভাবে স্বল্পমেয়াদে আমদানি কমাতে কার্যকর প্রমাণ হচ্ছে। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, জুনে এলসি খোলা ১৩ শতাংশ কমেছে এবং জুলাইয়ে আরো ২৩ শতাংশ কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, প্রবণতা এখনো বজায় আছে।  

বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে বিদ্যমান অস্থিতিশীলতার উৎস আমদানিসৃষ্ট বাড়তি চাহিদা হলেও আমদানি কমানোই সঠিক সমাধান হোক সেটা দাম বৃদ্ধি কিংবা প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে। রফতানি এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ সঠিক ধারায় আনার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ হলো আমদানি ৮০ বিলিয়ন ডলার বা তার নিচে সীমাবদ্ধ রাখা। যদি বিদ্যমান নীতি কার্যকর হয়, তাহলে চলতি অর্থবছরে এটা আমাদের আশা জাগায় যে বাড়তি চাহিদা হ্রাস পাবে এবং বৈদেশিক মুদ্রাবাজার দ্রুতই স্থিতিশীল হবে। আগামী তিন মাসের মধ্যেই এটা আমরা দেখতে পাব। একবার চাহিদা-সরবরাহ ব্যবধান নিঃশেষ হলে বিনিময় হারের অস্থিতিশীলতা অদৃশ্য হবে এবং সব ধরনের গুজব অনুমানেরও অবসান ঘটবে। 

১নং টেবিলে ২০২২ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা (বহিঃপ্রবাহ) সরবরাহ (আন্তঃপ্রবাহ) কী ঘটেছিল এবং বিনিময় হার অবমূল্যায়ন ভোগ্যপণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক ব্যবস্থার ফলে যা ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে (টেবিল ), তার একটা তুলনামূলক চিত্র হাজির করা হয়েছে। উল্লেখ করা দরকার, শিল্পের কাঁচামাল আমদানি, মধ্যবর্তী বা মূলধনি পণ্যকে আমদানি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপের বাইরে রাখা হয়েছে, যাতে রফতানি নৈপুণ্য (শিল্প কৃষির উৎপাদনসহ) স্থবির হয়ে না পড়ে। শীর্ষ উন্নয়ন অর্থনীতিবিদদের মতে, চীন প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলারের সমমূল্যের রফতানি সক্ষমতা হারাচ্ছে, যার কিছু বর্তমানে বাংলাদেশ এশিয়ার অন্য অর্থনীতিগুলোর দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। বেশি ডাইভারসন ঘটছে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যকার উত্তেজনা এবংফ্রেন্ড-শোরিংয়েরদিকে যাওয়ার কৌশলগত পদক্ষেপের কারণে। এটা আমাদের জন্য একটা অপূর্ব সুযোগ এবং বাংলাদেশের সেটা কোনোভাবে হাতছাড়া করা উচিত নয়। 

১নং টেবিল ২০২২ অর্থবছরে সমস্যার প্রকৃতি উন্মোচন করে। আর সেটি হলো, রেকর্ড ৮২ দশমিক বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি এমনকি ৩৫ শতাংশের রফতানি উল্লম্ফনকেও (৪৯ দশমিক বিলিয়ন) ছাড়িয়ে গেছে। তবে রফতানি রেমিট্যান্স থেকে প্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার মাসিক আন্তঃপ্রবাহ পণ্য সেবা আমদানি থেকে সৃষ্ট চাহিদার তুলনায় অনেক কম এসেছে। এটা বিনিময় হারে চাপ সৃষ্টি করে এবং অবশেষে টাকার অবমূল্যায়ন ঘটায়।

ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার মতো চাহিদা নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ (টাকার অবমূল্যায়ন) এখনো যথেষ্ট নয়। এর সঙ্গে আমদানি নিয়ন্ত্রণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানো এবং জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির মতো পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কয়েক মাস আগে।  

এখন পর্যন্ত ইঙ্গিত মিলছে, কৃচ্ছ্রতা সাধনের পদক্ষেপ এবং প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগগুলো কাজ করছে এবং আমদানি এখন নিম্নমুখী ধারায়। রফতানি ১২ শতাংশ বৃদ্ধির সঙ্গে টাকার অবমূল্যায়নের প্রতিক্রিয়ায় মাসে বিলিয়নেরও বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা বহির্গমনের ব্যবধান কমে আসছে। প্রবণতা বজায় থাকলে আমরা সার্বিক ব্যালান্স অব পেমেন্টে (বিওপি) তাত্পর্যজনক উদ্বৃত্তের একটা বছর দেখব এবং রিজার্ভে অন্তত -১০ বিলিয়ন ডলার যোগ হয়ে তা ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। সাত মাসের বেশি আমদানি দায় মেটাতে সমর্থ পরিমাণ রিজার্ভ আমাদের আবারো একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থানে নিয়ে যাবে। 

উল্লেখ্য, ইতিবাচক প্রবণতায় কোনো কারণে বিঘ্ন ঘটলে (যদি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পৃথিবী তোলপাড় করে তোলে) বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে আবার অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।

এখানে উপসংহার টানা ন্যায়সংগত হবে, গত কয়েক মাসে যে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে সেটা মূলত চাহিদা (আমদানি থেকে) সরবরাহের (রফতানি রেমিট্যান্স) ব্যবধানের কারণে। কর্তৃপক্ষ আমদানি উল্লম্ফনের সমস্যা সঠিকভাবে চিহ্নিত করেছে। আমাদের বিনিময় হার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে কৃচ্ছ্রতা সাধনের পদক্ষেপগুলোর কার্যকারিতাও দেখতে হবেযা পরিমিতভাবে বিনিময় হারকেফ্লোটকরতে দেয় এবং ধীরে ধীরেক্রলিং পেগসিস্টেমকে মনে করিয়ে দেয়। সৌভাগ্যের বিষয়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অধোগতি সত্ত্বেও চীন থেকে সোর্সিং রি-ডাইরেকশনের মাধ্যমে মৌলিক গার্মেন্ট পণ্য রফতানির সম্ভাবনা শক্তিশালী থেকেছে। কাজেই গত বছর রফতানিতে ৩৫ শতাংশ উল্লম্ফন সত্ত্বেও চলতি অর্থবছরে রফতানি প্রবৃদ্ধি ভালো দেখাচ্ছে, যা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশ এবং অন্য উদীয়মান উন্নয়নশীল অর্থনীতির (ইএমডিই) এটা এক চ্যালেঞ্জিং সময়। সময়ে কিছুটা কঠোরতা যথাযথ সমন্বয়ের অপরিহার্য শর্ত। স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার ক্ষতি হিসেবে এটা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কিছুটা ধীর করতে পারে। যতক্ষণ দরিদ্র বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে পর্যাপ্ত সহায়তা দেয়া হবে, ততক্ষণ দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা এবং টেকসই অর্থনৈতিক  প্রবৃদ্ধি মোমেন্টামের কৌশলের অংশ হিসেবে ধরনের সমন্বয়ের পদক্ষেপ নিতে হবে, যা বেশ কার্যকর বলে প্রমাণিত।

 

. জাইদী সাত্তার: অর্থনীতিবিদ; চেয়ারম্যান, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই)

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন