চীনের সঙ্গে টেক্কা

ভারতের ১.২ ট্রিলিয়ন ডলারের বৃহৎ অবকাঠামো পরিকল্পনা

বণিক বার্তা ডেস্ক

আন্তর্জাতিক মহল থেকে চীনের বিচ্ছিন্নতায় সুবিধা পাচ্ছে ভারত ছবি: এপি

আগামী চার-পাঁচ বছরের মধ্যে অন্তত ৮০টি বিমানবন্দর নির্মাণ করতে যাচ্ছে ভারত। এভিয়েশন তদারকি প্রতিষ্ঠানের বরাতে তথ্য নিশ্চিত হয়েছে। ভারতের বেসামরিক বিমান মন্ত্রণালয় জানায়, গত আট বছরে ভারতে বিমানবন্দরের সংখ্যা ৭৪ থেকে বেড়ে ১৪১-তে দাঁড়িয়েছে। পরবর্তী চার-পাঁচ বছরের মধ্যে বিমানবন্দরের সংখ্যা ২২০- দাঁড়াবে। জাতীয় আন্তর্জাতিক যোগাযোগ সহজতর করা এবং ভ্রমণ সময় কমিয়ে আনতে একের পর এক বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প হাতে নিচ্ছে ভারত।

সম্প্রতি পিএম গতি শক্তি নামে একটি প্রকল্পের আওতায় ১০০ ট্রিলিয়ন রুপি বা দশমিক ট্রিলিয়ন ডলারের মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকার। মূলত চীন থেকে যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে বা সংকুচিত করছে তাদের আকৃষ্ট করতে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে তারা। পিএম গতি শক্তি প্রকল্পের আওতায় ১৬টি মন্ত্রণালয়কে সমন্বিত করা হয়েছে। যেকোনো অবকাঠামো প্রকল্প যেন সহজে বাস্তবায়ন করা যায় এবং যেকোনো জটিলতা সহজেই নিষ্পত্তি করা যায় সেজন্য এভাবে সমন্বয় করা হয়েছে।

দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারলে ভারতের জন্য সুবিধা হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কিন্তু ভারতে অর্ধেকের মতো অবকাঠামো প্রকল্পই বিলম্বিত হচ্ছে। প্রতি চারটি প্রকল্পের একটিতেই প্রত্যাশিত বাজেটের চেয়ে বেশি ব্যয় হচ্ছে। এতে চীন থেকে যেসব কোম্পানি ব্যবসা কমিয়ে আনছে তাদের ঠিকভাবে আকৃষ্ট করতে পারছে না।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে চীনে বিদেশী কোম্পানির কারখানা কার্যক্রম চালানো একটু চ্যালেঞ্জিং ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। এতে ভারত, ভিয়েতনাম ব্রাজিলের মতো বিকল্প বাজারের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছে তারা। অনেকেই চায়না-প্লাস-ওয়ান পলিসি হাতে নিয়েছে। চীনে কার্যক্রম ধরে রেখে আরো একটি দেশে কার্যক্রম চালানোর পলিসি নিয়েছে ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিগুলো। এক্ষেত্রে ভারতে সুবিধা হলোএখানে সস্তায় যেমন শ্রমিক পাওয়া যায়, তেমনি ইংরেজি জানা অনেক মেধাবী কর্মী, প্রকৌশলী ব্যবস্থাপক পাওয়া যাচ্ছে।

সম্প্রতি ভারতে আইফোন ১৪ উৎপাদন শুরুর ঘোষণা দিয়েছে অ্যাপল। ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা মহামারী-সংক্রান্ত বিধিনিষেধের কারণে সরবরাহ চেইনে যে প্রভাব পড়েছে তা কাটিয়ে উঠতে ভারত ভিয়েতনামের মতো দেশে কারখানা কার্যক্রম সরাচ্ছে প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো। ভারতে আইফোন ১৪ উৎপাদন নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহের গুঞ্জনকে সত্য প্রমাণ করে অ্যাপল স্বীকার করে নিল, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন বাজারটি তাদের আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে। এর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার বাজারে তুলনামূলক কম দামে আইফোন তুলে দিতে পারবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত সপ্তাহে এক ঘোষণায় ক্যালিফোর্নিয়ার কুপারটিনোভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্টটি জানায়, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি উন্নততর নিরাপত্তা নিয়ে বাজারে এসেছে আইফোন ১৪। ভারতে ফোনটি উৎপাদন শুরুর ঘোষণা দিতে পেরে আমরা আনন্দিত।

অ্যাপলের উৎপাদন অংশীদার ফক্সকন আইফোনের নতুন সংস্করণটি উৎপাদন করবে চেন্নাইয়ের কাছাকাছি শ্রিপেরামবুদুর শহরের নিজস্ব কারখানায়। তবে আইফোন ১৪-এর প্রো সংস্করণটি সেখানে তৈরি করা হবে না। ২০১৭ সাল থেকে ভারতে আইফোন উৎপাদন করছে অ্যাপল। তবে এত দিন ভারতীয় কারখানায় আইফোনের পুরনো সংস্করণগুলো তৈরি করা হতো।

বাজার বিশ্লেষকদের অনুমান, ভারতকে ২০২৫ সাল নাগাদ একটি বৈশ্বিক আইফোন উৎপাদন হাবে পরিণত করবে অ্যাপল। মূলত চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নিচ্ছে কোম্পানি। এক দশকের বেশি সময় ধরে কোম্পানির সিংহভাগ ডিভাইস উৎপাদন হয়েছে চীনে।

গত সেপ্টেম্বরের শুরুতে দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে আইফোন উৎপাদন করবে টাটা গ্রুপ। তাইওয়ানভিত্তিক প্রযুক্তি কোম্পানি উইস্ট্রনের সঙ্গে ভারতে একটি যৌথ উদ্যোগ চালুর পথে এগোচ্ছে কনগ্লোমারেটটি। এদিকে চীন ভারতে এত দিন কাজ করত তাইওয়ানের দুটো টেক সংস্থা উইস্ট্রন ফক্সকন। এবার টাটা গ্রুপ প্রথম ভারতীয় সংস্থা হিসেবে আইফোন উৎপাদনের অনুমোদন পেতে যাচ্ছে বলে এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। সম্ভাব্য যৌথ উদ্যোগটি বাস্তবায়ন হলে ভারতে আইফোনের বাজার পাঁচ গুণ বাড়বে বলে জানা গিয়েছে।

কয়েক দশক ধরেই বিশ্বব্যাপী উৎপাদনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে চীন। টাটা গ্রুপ আইফোন উৎপাদনে গেলে প্রযুক্তি খাতে চীনকে কড়া টক্কর দিতে পারবে ভারত। কারণ অ্যাপলের মতো সংস্থা ভারতে আইফোন তৈরির সিদ্ধান্ত নিলে অন্যান্য বৃহৎ টেক সংস্থাও অনুপ্রাণিত হতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন