বেশ কিছুদিন ধরেই দেশের পুঁজিবাজারে সূচকের পাশাপাশি টাকার অংকে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। গতকাল বাদে এর আগের সাত কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে দৈনিক দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। গতকাল সূচক কমার পাশাপাশি দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের পরিমাণ দেড় হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে গিয়েছে। দেশের আরেক পুঁজিবাজার সিএসইতে গতকাল সূচক ও লেনদেন কমেছে।
বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, টানা উত্থানের কারণে সূচকের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ারের মূল্য বেড়েছে। ফলে গতকাল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতা দেখা গিয়েছে। এদিন লেনদেনের শুরুতেই শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়তে থাকে। মাঝে কিছুটা ক্রয়চাপ দেখা গেলেও সেটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপে ক্রমাগত পয়েন্ট হারাতে থাকে সূচক। সব খাতের শেয়ারেই গতকাল বিক্রয় চাপ ছিল লক্ষণীয়।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় লেনদেন শুরুর পর ৪ মিনিট পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী ছিল ডিএসইর সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স। শেয়ার বিক্রির চাপে এর পর থেকেই পয়েন্ট হারাতে থাকে সূচকটি। লেনদেনের ২০ মিনিট পর থেকে সূচক ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে এবং সকাল ১০টা ৫ মিনিটে দিনের সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছে। অবশ্য শেয়ার বিক্রির চাপে এরপর আবারো পয়েন্ট হারাতে থাকে সূচক, যা লেনদেন শেষ হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। গতকাল দিন শেষে আগের দিনের তুলনায় ৫৯ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৪৩১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে ডিএসইএক্স। আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৬ হাজার ৪৯০ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইর ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ গতকাল ১৮ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ২৮৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এর আগের দিন শেষে যা ছিল ২ হাজার ৩০৪ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল দিন শেষে ৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪০৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের দিন শেষে যা ছিল ১ হাজার ৪১০ পয়েন্টে। গতকাল সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি) ও ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ারের।
ডিএসইতে গতকাল ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের কার্যদিবসে লেনদেন ছিল ২ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। গতকাল এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ৩৬৯টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ৩৮টির, কমেছে ২৬৩টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৬৮টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।
খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে প্রকৌশল খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ দখলে নিয়েছে বিবিধ খাত। ১১ দশমিক ৮ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। মোট লেনদেনের ১১ দশমিক ৭ শতাংশের ভিত্তিতে চতুর্থ অবস্থানে ছিল বস্ত্র খাত। আর জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের দখলে ছিল লেনদেনের ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। গতকাল পুঁজিবাজারে জীবন বীমা খাতে সবচেয়ে বেশি দশমিক ৮ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক রিটার্ন ছিল সেবা ও আবাসন খাতে ৫ দশমিক ১ শতাংশ।
সিএসইর নির্বাচিত সূচক সিএসসিএক্স গতকাল ১০৬ পয়েন্ট কমে ১১ হাজার ৩৩০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের কার্যদিবসে যা ছিল ১১ হাজার ৪৩৭ পয়েন্টে। সিএসইর সব শেয়ারের সূচক সিএএসপিআই গতকাল ১৭৭ পয়েন্ট কমে ১৮ হাজার ৯০৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের কার্যদিবসে সূচকটির অবস্থান ছিল ১৯ হাজার ৮২ পয়েন্টে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ২৭৪টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৪৯টির, কমেছে ১৮৪টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৪১টির বাজারদর। গতকাল সিএসইতে ২২ কোটি ৭০ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৩৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা।