স্বর্ণযুগ হারিয়ে খুঁজছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

ক্রীড়া ডেস্ক

সত্তর-আশির দশকে গ্যারি সোবার্স, ভিভ রিচার্ডস, ক্লাইভ লয়েড, মাইকেল হোল্ডিং, জোয়েল গার্নারের মতো ক্রিকেটাররা খেলতেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে। এত প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল যে ম্যালকম মার্শালের মতো বোলারের নিয়মিত দলে জায়গা হতো না। ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বে ১৯৭৫ ১৯৭৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নব্বইয়ের দশকে কার্টলি অ্যামব্রোস, কোর্টনি ওয়ালশ ব্রায়ান লারারা এলেও আগের দুই দশকের প্রতিপত্তি হারিয়ে ফেলে দলটি।

তিন-চার দশক আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছিল টেস্ট ওয়ানডের পরাশক্তি। পরবর্তী সময়ে তারা হয় ওঠে টি২০ ক্রিকেটেরও পরাশক্তি। ড্যারেন স্যামির নেতৃতে ২০১২ ২০১৬ সালে দুটি টি২০ বিশ্বকাপও জিতে নেয় তারা। যার বদৌলতে বিশ্বের বিভিন্ন টি২০ লিগে ক্যারিবিয়ানদের নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে যায়। বোর্ড ক্রিকেটারের দ্বন্দ্ব আর সঙ্গে অর্থের মোহে পড়ে জাতীয় দলকেও হরহামেশা না বলে দেন তারকারা। পরিস্থিতি এখন এমনই দাঁড়িয়েছে যে সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকেই এখন টি২০ দল সাজাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে!

অথচ টি২০ বিশ্বকাপের বাকি দুই মাস। ভারতের কাছে সদ্যই - ব্যবধানে হোম সিরিজ হার এবং এখন ক্যারিবিয়ান কোচ ফিল সিমন্স স্কোয়াড গঠন নিয়েই হিমশিম খাচ্ছেন। তিনি বলেছেন, এটি বেদনাদায়ক। আমরা এখন কী করতে পারি? আমি মনে করি না, দেশের হয়ে খেলতে কারো দ্বারে গিয়ে তাকে অনুরোধ করা উচিত আমার। আপনি যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলতে চান, তবে আপনারই উচিত নিজেকে খালি রাখা।

আন্দ্রে রাসেল জাতীয় দলের জন্য অ্যাভেইলেবল নন, যদিও তিনি মুহূর্তে দ্য হানড্রেড খেলছেন। সুনীল নারিন রহস্যময় কারণে দলে নেই। তিনিও দ্য হানড্রেড খেলছেন। এভিন লুইস ওশান থমাস ফিটনেস টেস্টেই হাজির হননি। চোটের কারণে বাদ পড়েছেন শেলডন কটরেল রোস্টন চেজ। ফাবিয়ান অ্যালেন ব্যক্তিগত কারণে সরে দাঁড়িয়েছেন। দল তাই তারকাহীন, নখদন্তহীনও বটে। বাংলাদেশের কাছে ওয়ানডে হার, এরপর ভারতের কাছে টি২০ সিরিজ হার।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলোয়াড় যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বিশ্বকাপের আগে চলতি নিউজিল্যান্ড সিরিজই শেষ সুযোগ। কিন্তু সিরিজের জন্য রাসেল-নারিনরা খালি নেই। ইংল্যান্ডে লিগ খেলতে ব্যস্ত তারা। প্রধান নির্বাচক ডেসমন্ড হেইনস প্রধান কোচ ফিল সিমন্স কারণে গভীর হতাশ।

হেইনস আশা প্রকাশ করে বলেন, প্রত্যেকেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলবে, এমনটাই দেখতে চাই আমি। আমি চাই প্রত্যেকটি ছেলেই যেন জাতীয় দলের হয়ে খেলতে তৈরি রাখে নিজেদের। কিন্তু ছেলেরা যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজিকেই এগিয়ে রাখে, তবে আমাদের যেসব খেলোয়াড় আছে তাদের মধ্য থেকেই বাছাই করতে হবে। 

লয়েড, রিচার্ডসদের যুগ শেষ হতে না হতেই ক্যারিবীয় ক্রিকেটের দুঃসময় শুরু। টানা ১৫ বছর ২৯টি টেস্ট সিরিজে অজেয় ছিল দলটি। যদিও ১৯৯৫ সাল থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের আধিপত্য ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যেতে শুরু হয়।

২০০৪ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জেতার পর নতুন করে চাঙ্গা হওয়ার স্বপ্ন দেখছিল দলটি। কিন্তু দলটির ১৮ বছরের স্পন্সর কেবল অ্যান্ড ওয়্যারলেসকে (সিঅ্যান্ডডব্লিউ) সরিয়ে মোবাইল অপারেটর সংস্থা ডিজিসেলের সঙ্গে চুক্তি করে বোর্ড। শুরু হয় নতুন ঝামেলা। ডিজিসেলের চুক্তিপত্রে ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগতভাবে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের স্পন্সর হওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। এমন দাবি তুলে ক্রিকেটাররা কেন্দ্রীয় চুক্তিতে স্বাক্ষর করেননি। বোর্ড-ক্রিকেটার দীর্ঘ বিবাদ আজও চলমান। ক্রিকেটাররা বলেছেন, বোর্ড থেকে পর্যাপ্ত অর্থ পান না তারা। এর কারণেই তারা দেশী-বিদেশী লিগের পেছনে ছুটছেন। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এসব বিবাদের নিষ্পত্তি যতদিন না হবে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটে সংকটও ততদিন চলবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন