দফায় দফায় পাউবোর নোটিস

তিস্তা ব্যারাজের জমিতে বাস করা ২১৬ পরিবার উচ্ছেদ আতঙ্কে

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, লালমনিরহাট

তিস্তা ব্যারাজের উত্তর প্রান্তে ফ্লাড বাইপাসের জমিতে বসবাসকারীদের উচ্ছেদে নোটিস দিয়েছে পাউবো ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের উত্তর প্রান্তে ফ্লাড বাইপাসের পরিত্যক্ত জমিতে বাস করা ১৬১ ভূমিহীন দুই মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এবং ৫৫টি প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে উচ্ছেদ নোটিস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) গত বছরের সেপ্টেম্বরে দুই দফা অক্টোবরে আরেক দফায় নোটিস দেয়া হয়েছে। তবে চলতি বছরের ১৬ মার্চ   জুলাই জেলা প্রশাসক বরাবর নোটিস দেয়ায় উচ্ছেদ আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বসবাসকারীরা।

সরেজমিন জানা গেছে, তিস্তা ব্যারাজের উত্তর প্রান্তে ফ্লাড বাইপাসের পরিত্যক্ত জমিতে দুটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, ১৬১টি ভূমিহীন পরিবার বসবাসের পাশাপাশি দোয়ানী সাধুর বাজার নামক স্থানে ৩৫টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, বসবাসকারী পরিবার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আরো বেশি হবে।

তিস্তা ব্যারাজের উত্তরাংশে বসবাসকারী দোয়ানী পিত্তিফাটা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা কাচু মামুদ (৭০) ফজলুল হক (৫৫) বলেন, বাপ-দাদার ভিটেমাটি ১৯৯০ সালে অধিগ্রহণ করার সময় তত্কালীন জেলা প্রশাসক বলেছিলেন, যদি সরকারের প্রয়োজন না হয় তাহলে জমিতে আমরাই বসবাস করতে পারব। এখন আমরা শুনছি, পাউবো কোনো এক সোলার কোম্পানির কাছে মোটা অংকের টাকা নিয়ে এসব জমি তাদের দেয়ার চেষ্টা করছেন। এজন্য আমাদের উচ্ছেদ করতে নোটিস দিচ্ছে। বাপ-দাদার জমি ছেড়ে আমরা কোথাও যাব না।

স্থানীয় আব্দুল হামিদ (৮০) প্রশ্ন রেখে বলেন, তিস্তা ব্যারাজ হাতীবান্ধা উপজেলার গোড্ডিমারী ইউনিয়নে। বাপ-দাদার ভিটেমাটি দিয়ে আমরা কী সুফল পেয়েছি? ওই সময় আমি কোনো টাকা তুলিনি। জমিও ছাড়ব না।

ডালিয়া পাউবোর সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) আব্দুর রব জানান, ১৯৮০-৮১ সালে তিস্তা ব্যারাজের জন্য দুটি এলএ কেসের মাধ্যমে ৬৫০ দশমিক ২৮ একর ১৯৯০-৯৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ব্যারাজের উত্তরাংশে ফ্লাড বাইপাসের জন্য আটটি এলএ কেসের মাধ্যমে ৫৪৫ দশমিক ৪৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। দোয়ানী পিত্তিফাটা ছয়আনি পিত্তিফাটা দুই মৌজায় তিস্তা ব্যারাজের মূল অবকাঠামো এবং ফ্লাড বাইপাস আছে। এছাড়া ব্যারাজের দক্ষিণে প্রধান ক্যানেল, সিল্কট্রাপ সড়কের জন্য ১৯৮০-৯৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ১২টি এলএ কেসের মাধ্যমে ৯০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এসব জমির ওপর থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নোটিস প্রদান করা হয়েছে।

ডালিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা বলেন, তিস্তা ব্যারাজের উত্তরাংশে বসবাসকারী পরিবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মালিকদের দুদফায় উচ্ছেদ নোটিস দেয়া হয়েছে। আমরা কোনো একক প্রতিষ্ঠানকে উচ্ছেদ নোটিস দিইনি। ফ্লাড বাইপাসের উজানে ভাটিতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্থাপনাগুলো জরুরিভাবে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে গত জুলাই লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক বরাবর পত্র দেয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এখন পর্যন্ত হাইকোর্টের কোনো কাগজপত্র আমরা পাইনি। পেলে হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে তিস্তা ব্যারাজের দক্ষিণাংশে সোলার কোম্পানিকে পাউবোর জমি দেয়ার প্রস্তাব রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর পাউবোর চিঠি প্রসঙ্গে বলেন, যাদের উচ্ছেদ করার নোটিস দিয়েছে তাদের মধ্যে ১৬১টি ভূমিহীন পরিবার, দুটি বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার, ৩৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, একটি পাকা মসজিদ, একটি পুলিশ ফাঁড়ি একটি মাদ্রাসাসহ লিল্লাহ বোর্ডিং রয়েছে। অনেকে আছে সেখানে দীর্ঘদিন বসবাস করে আসছে বলে জেনেছি। এজন্য আমরা কেস সৃজন করে সবকিছুই খতিয়ে দেখছি। এরপর পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, মহামান্য হাইকোর্টের একটি নির্দেশনা আছে যেকোনো ভূমিহীনকে উচ্ছেদ করার আগে ওই ব্যক্তিকে পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য পাউবোর আবেদন যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন দিতে হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন আসার পর প্রয়োজন হলে বিধিমোতাবেক উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

লালমনিরহাট- আসনের (পাটগ্রাম-হাতীবান্ধা) সংসদ সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেন বলেন, ১৯৯০ জমি অধিগ্রহণের আগে থেকেই লোকগুলো সেখানে বসবাস করছে। জমি অধিগ্রহণের পরও তাদের সরিয়ে দেয়া হয়নি। তাহলে ৩২ বছর পর কেন পাউবো লোকজনকে সরাতে চাইছে। আমার নির্বাচনী এলাকা অথচ আমি কিছুই জানি না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন