আফ্রিকান খেলোয়াড় কিনবে না নাপোলি!

আফ্রিকান নেশনস কাপ টুর্নামেন্টে খেলবে না শর্তে রাজি না হলে আর কোনো আফ্রিকান খেলোয়াড় না কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইতালির ক্লাব নাপোলির মালিক অরেলিও ডি লরেন্তিস!

বছর জানুয়ারি ফেব্রুয়ারিতে ক্যামেরুনে আফ্রিকান নেশনস কাপ আসর বসে। ওই আসরে অংশগ্রহণ করার কারণে নাপোলির হয়ে ছয়টি ম্যাচ খেলা হয়নি সেনেগালিজ ডিফেন্ডার কালিদু কুলিবালি ক্যামেরুন মিডফিল্ডার আন্দ্রে-ফ্রাংক জাম্বো আনগুইসার। কুলিবালি পরবর্তী সময়ে নাপোলি থেকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব চেলসিতে নাম লিখিয়েছেন।

আফ্রিকান খেলোয়াড়দের নিয়ে বিরক্ত লরেন্তিস সম্প্রতি ওয়াল স্ট্রিট ইতালিয়া শোতে বলেন, যথেষ্ট হয়েছে। তাদের আফ্রিকান নেশনস কাপ পরিত্যাগ করতে হবে। নইলে আমি আর তাদের কিনব না।

কুলিবালি জাম্বোর অনুপস্থিতিতে জানুয়ারিতে জুভেন্টাসের সঙ্গে - গোলে ড্র করে নাপোলি, এরপর কোপা ইতালিয়ায় তারা পরাজিত হয় ফিওরেন্টিনার কাছে। যদিও এরপর তাদের ছাড়াই লিগে চারটি ম্যাচ জিতে যায় দিয়েগো ম্যারাডোনার স্মৃতিবিজড়িত ক্লাবটি।

এবারের আসরে ফাইনালে মিসরকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো আফ্রিকান চ্যাম্পিয়ন হয় কুলিবালি সাদিও মানেদের সেনেগাল, যা ডাকারে বুনো উত্সব নিয়ে আসে। আসরে স্বাগতিক ক্যামেরুন তৃতীয় স্থান পায়।

কুলিবালি আট বছর নাপোলিতে কাটিয়ে এবার চেলসিতে যোগ দেন। ডি লরেন্তিসের মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেছেন, প্রত্যেককে সম্মান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার কথায়, আফ্রিকার জাতীয় দলগুলোকে নিয়ে আপনি এভাবে বলতে পারেন না। আপনাকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে এবং সেনেগাল অধিনায়ক হিসেবে এভাবে কথা বলতেও আমি অস্বস্তি বোধ করছি। তিনি (লরেন্তিস) যদি মনে করে থাকেন যে আফ্রিকান খেলোয়াড় ছাড়াই তার দল খেলতে পারে, তবে এটা তার ব্যাপার। কিন্তু আমার মনে হয় না ক্লাবটির সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যরা তার মতো ভাবে। কারণ আমি ক্লাবের সমর্থকদের দেখেছি, তারা রকম ভাবে না।

আফ্রিকান নেশনস কাপের সূচি নিয়ে বরাবরই কথা হয়। এটি চিরাচরিতভাবে জানুয়ারি ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়, যা কিনা ইউরোপের ঘরোয়া ফুটবলের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। মৌসুমের মধ্যপথে বলে ক্লাবগুলো অনেকটা বাধ্য হয়েই খেলোয়াড়দের নেশনস কাপের জন্য ছেড়ে দেয়।

নাপোলি মাত্র দুটি ইতালিয়ান লিগ শিরোপা জিতেছে। ১৯৮৭ ১৯৯০ সালে ম্যারাডোনার সৌরভে শিরোপা জয় করা নাপোলি এরপর আর উত্সব করতে পারেনি। নাপোলিতে আবারো শিরোপা ফিরিয়ে আনতে মরিয়া লরেন্তিস খেলোয়াড়দের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা লিগ চ্যাম্পিয়নশিপের যেকোনো সময় খেলার জন্যই তাদের বেতন দিই। তারা আফকন কিংবা কোপা আমেরিকা পরিত্যাগ করুক, আমি তাদের সেখানে খেলতে দিতে পারি না।

ফিফার বর্তমান নিয়মে বলা আছে, ইউরোপের মধ্য মৌসুমে হলেও নেশনস কাপ চলাকালে ক্লাবগুলো আফ্রিকান খেলোয়াড়দের ছেড়ে দিতে বাধ্য থাকবে।

পরের নেশনস কাপ অনুষ্ঠিত হবে ২০২৪ সালের জানুয়ারি ফেব্রুয়ারিতে আইভরি কোস্টে। আসরটি ২০২৩ সালের জুন-জুলাই মাসে হওয়ার কথা থাকলেও আবহাওয়ার কারণে তা জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে নেয়া হয়। ২০২১ সালের জুন-জুলাই মাসে নেশনস কাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও পরে একই কারণে তা সরিয়ে নেয়া হয় ২০২২ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে।

কুলিবালি প্রিমিয়ার লিগে চলে গেলেও নাপোলিতে এখনো আফ্রিকার তিনজন ফুটবলার রয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম জাম্বো, যাকে গত মে মাসে ইংলিশ ক্লাব ফুলহাম থেকে স্থায়ী চুক্তিতে আনা হয় ইতালিতে। নাপোলিতে থাকা মুহূর্তে আফ্রিকার বড় তারকা নাইজেরিয়ার ভিক্টর ওসিমহেন, যিনি চোটের কারণে নেশনস কাপ খেলতে পারেননি। ২৩ বছর বয়সী খেলোয়াড়কে কিনতে আগ্রহ দেখায় প্রিমিয়ার লিগের একাধিক ক্লাব। যদিও এই সুপার ঈগল তারকা জানিয়ে দেন, দক্ষিণ ইতালির ক্লাবের প্রতিই ভালোবাসার বন্ধন তার। এমনকি প্রাক-মৌসুম অনুশীলনে কোচ লুসিয়ানো স্পালেত্তির সঙ্গে বচসা হলেও তাকে গুরুতর কিছু নয় বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।

আলজেরিয়া জাতীয় দলের খেলোয়াড় অ্যাডাম ওনাসের সঙ্গে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত চুক্তি রয়েছে নাপোলির। ইনজুরির কারণে গত মৌসুমে তিনি মাত্র ২১ ম্যাচ খেলতে পেরেছেন, যাতে গোল পান দুটি।

এদিকে খেলোয়াড় বেচাকেনায় মধ্যস্থতাকারী এজেন্টদের নিয়েও বিরক্ত লরেন্তিস। খেলোয়াড়রা প্রত্যেকেই বিভিন্ন এজেন্টের অধীনে চুক্তিবদ্ধ। এজেন্টরাই তাদের দলবদলের বিষয়টি দেখভাল করেন। এর মধ্যে হোর্হে মেন্দেসের মতো সুপারএজেন্টও রয়েছেন, যারা একঝাঁক বড় খেলোয়াড়ের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। এজেন্টদের নিয়েও আপত্তি লরেন্তিসের। সিনেমা পরিচালক একসময় বলছিলেন, ফুটবল এজেন্টরা খেলাটির জন্য ক্যান্সার এবং খেলোয়াড়দের মূলত এজেন্টকে প্রয়োজন নেই।

ইতালিতে চতুর্থ বৃহত্তম দর্শক সমর্থকগোষ্ঠী নাপোলির। আর ইতালিতে পঞ্চম সর্বোচ্চ আয়কারী ক্লাব তারা। ২০১৮ সালে ফোর্বসের এক সমীক্ষা বলছিল, ক্লাবটির বাজারমূল্য ৩৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। যদিও এখন তা নিশ্চিতভাবেই আরো বেড়েছে। বিবিসি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন