![](https://bonikbarta.net/uploads/news_image/news_301595_1.jpg?t=1722051021)
যথাযথ কমপ্লায়েন্সের অভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে দেশীয় চামড়াজাত পণ্যের দাম কমছে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। পাশাপাশি স্থানীয় বাজারেও চামড়াজাত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এসব সংকট সমাধানে ও সঠিক কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতে শিল্প মন্ত্রণালয়, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং শ্রম মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এ খাতের উন্নয়নে গঠন করতে হবে চামড়া খাত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এসব নিশ্চিত করতে পারলে ২০৩০ সালের মধ্যে চামড়া খাত থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় অর্জন করা সম্ভব।
গতকাল দি এশিয়া ফাউন্ডেশন, অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘ট্যানারি শিল্পে করোনার প্রভাব মূল্যায়ন’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এমন মতামত দিয়েছেন। ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা। ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ। এতে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভী।
শিল্প সচিব বলেন, চামড়া খাত অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। সঠিক পরিচর্যা ও মনিটরিংয়ের মাধ্যমে মান নিশ্চিত করতে পারলে এ খাত থেকে ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় সম্ভব। কিন্তু এ খাতে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা। কোরবানির সময় চামড়ার দর নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু প্রান্তিক পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা সে দাম পান না। এ সময় রাজশাহীতে চামড়া খাতের জন্য সিইটিপি প্লান্ট বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের এমডি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে সারা বিশ্বে সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এ রকম সময়ে চামড়া পণ্যের বাজারে নিজেদের অংশ বাড়ানোর সুযোগ ছিল। কিন্তু নিজস্ব কাঁচামাল থাকা সত্ত্বেও কমপ্লায়েন্সের অভাবে সে সুযোগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না। স্বাধীনতার পর থেকে কাঁচা চামড়ার রফতানি কমেছে ৭৯ শতাংশ। আর ফিনিশড চামড়ার রফতানি বেড়েছে ৮০ ভাগ। এর অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ নিজেদের চামড়া ব্যবহার করতে পারছে না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে এ খাতে যেসব নীতিমালা নেয়া হয়েছে, সেগুলো ঠিকমতো বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি হাজারীবাগ থেকে রেড জোনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, একা শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষে চামড়া খাত এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। শ্রম ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে সমন্বিত পদক্ষেপ দরকার।
গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপনায় ঢাবি অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ বলেন, চামড়া খাতে ভালো না করার একমাত্র কারণ হচ্ছে কমপ্লায়েন্সের অভাব। পরিবেশগত, সামাজিক ও মানের দিকে জোর দিতে হবে। কমপ্লায়েন্স না হওয়ার কারণে বাংলাদেশ পণ্যমূল্য ৩০-৪০ শতাংশ কম পাচ্ছে। চামড়া খাতের সমস্যা সমাধানে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, উন্মুক্ত জায়গায় ময়লা ব্যবস্থাপনায় কার্যকর ও দক্ষ উদ্যোগ দরকার। চামড়া খাতে মূল্য সংযোজন অনেক বেশি। উদ্যোক্তারা আর্থিক সহায়তার চেয়ে নীতি সহায়তা বেশি চান। হাজারীবাগ থেকে সাভারে চামড়া শিল্প স্থানান্তর হওয়ায় সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি।
এ গবেষক বলেন, করোনার প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে এ খাত আশানুরূপ সুবিধা পায়নি। চামড়া খাতে ৮ হাজার কোটি টাকার ব্যাংকঋণ আছে। এ ঋণের বিপরীতে বছরে ৮০০ কোটি টাকা সুদ দিতে হয়। অনেক কারখানাই সময়মতো ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে পারেনি। ফলে ওইসব কারখানা প্রণোদনা সুবিধা পায়নি। একটা কার্যকর পরিকল্পনা করা গেলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৮-১০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় করা সম্ভব। কর্মপরিকল্পনা যথাযথভাবে সময়মতো বাস্তবায়ন করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে লেদার ডেভেলপমেন্ট অথরিটি গঠনের প্রস্তাব করেন তিনি।
বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক একেএম আশরাফ উদ্দিন বলেন, চামড়া খাতের শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় শ্রম আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য এ খাতকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা উচিত। সামষ্টিককভাবে কর্মী ব্যবস্থাপনা ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে। এটা দূর করার উদ্যোগ দরকার।