পণ্য খালাসীকরণে ড্যামারেজ ফি মওকুফে দীর্ঘসূত্রতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

কারফিউর কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে আটকা পড়েছে পণ্যভর্তি শত শত কনটেইনার ছবি: আজীম অনন

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট ও পরিবহন ব্যবস্থা কার্যত বন্ধ থাকায় দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছিল। এ সময় বন্দরে আটকে থাকা পণ্য খালাস করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। টানা পাঁচদিনের অচলাবস্থার পর গত বুধবার থেকে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে বন্দর ড্যামারেজ ফি-সংক্রান্ত জটিলতায় আবারো দীর্ঘ হচ্ছে পণ্য খালাসীকরণ প্রক্রিয়া।

সরকারের পক্ষ থেকে ড্যামারেজ ফি মওকুফের ইঙ্গিত দেয়া হলেও কোনো ধরনের গণবিজ্ঞপ্তি বা আদেশ জারি করা হয়নি। ব্যবসায়ীদের প্রতিটি চালানের জন্য পৃথক আবেদন করতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। এতে একদিকে যেমন মাশুল মওকুফের জটিলতা বাড়ছে, অন্যদিকে নতুন করে কনটেইনার ড্যামারেজ ফি আরোপের শঙ্কায়ও রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সাধারণত জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানোর চারদিনের মধ্যে পণ্য খালাস করতে হয় আমদানিকারকদের। এ সময়ের মধ্যে পণ্য খালাস করতে না পারলে অতিরিক্ত ভাড়া (ড্যামারেজ ফি) গুনতে হয় তাদের। প্রথম সাতদিনের জন্য প্রতিদিন ৬ ডলার, এরপর ১১ দিনের জন্য প্রতিদিন ১২ ডলার এবং পরবর্তী সময়ের জন্য প্রতিদিন ২৪ ডলার করে ড্যামারেজ ফি দিতে হয় বন্দর কর্তৃপক্ষকে।

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বেশ কয়েকদিন পণ্য খালাস করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। ফলে আমদানীকৃত পণ্যের ওপর ড্যামারেজ ফি আরোপ হতে শুরু করে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মাশুল ছাড়ে বিবেচনার ইঙ্গিত দেয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে।

গত বৃহস্পতিবার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের বন্দরের ড্যামারেজ ফি মওকুফের ইঙ্গিত দিয়ে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘অনেক আমদানিকারক চলমান পরিস্থিতির কারণে পণ্য খালাস করতে পারেননি। তারা অনেকেই একটা চার্জের মুখোমুখি চলে এসেছেন। করোনার সময়ও চট্টগ্রাম বন্দর ৫০০ কোটি টাকার ওপরে ওয়েভার (মওকুফ) দিয়েছিল। কারণ শুধু ব্যবসা করার জন্য নয়, দেশের অর্থনীতিকে সেবা করার জন্য এ বন্দর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। সঠিক তথ্যপ্রমাণসহ এলে আমরা পাশে দাঁড়াব।’

তবে সরকারের পক্ষ থেকে মাশুল ছাড়ের আশ্বাস দেয়া হলেও এ-সংক্রান্ত কোনো বিজ্ঞপ্তি বা পরিপত্র জারি করা হয়নি। ফলে ব্যবসায়ীদের ফি মওকুফের জন্য আলাদা আবেদন করতে হচ্ছে। এতে জটিলতা আরো বাড়ছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

নিট পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘ওনারা (সরকার) এখন বসে আছেন আমাদের আবেদনের জন্য। ওনারা সে আবেদন বিবেচনা করে অনুমোদন করবেন। তার মানে হলো পণ্য খালাসে আরো কয়দিন সময় লাগবে। আমাদের প্রতিটি কেস টু কেস (চালান) আবেদন দিতে গেলে তো অনেক সময় লেগে যাবে। ততক্ষণে আমাদের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমার আট কনটেইনার পণ্য আটকে আছে। সিঅ্যান্ডএফ থেকে আমাকে বলা হয়েছে, আজকে যদি পণ্য খালাস না করি, কাল থেকে আবার কনটেইনার ড্যামারেজ চার্জ গুনতে হবে। কনটেইনারের ড্যামারেজ ফি তো মন্ত্রণালয় বা বন্দর মওকুফ করতে পারবে না। ওটা তো জাহাজ কোম্পানির।’

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রশ্ন রেখে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি বলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনায় এ সময়ে পোর্ট ড্যামারেজ ফি গণ্য করা হবে না মর্মে সরকার কেন একটি আদেশ বা প্রজ্ঞাপন জারি করেনি।’

মাশুল মওকুফের বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক জানান, এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত আসেনি। ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কোনো নির্দেশনা দিলে তা সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন