অর্থঋণ আদালত

খেলাপি গ্রাহকের সম্পত্তিতে নিরপেক্ষ রিসিভার নিয়োগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ব্যুরো

দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করেনি গ্রাহক। খেলাপি গ্রাহকের মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকার অঢেল সম্পত্তি ভোগ করলেও পিতার ব্যাংকঋণের টাকা পরিশোধ করেনি তারা। ব্যাংকের মামলা দায়েরের পর আদালত মর্টগেজ দেয়া সম্পত্তিতে রিসিভার নিয়োগ দিয়েছে। গতকাল চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক (যুগ্ম জেলা জজ) মুজাহিদুর রহমান আদেশ দেন।

আদালতের তথ্যমতে, বিবাদীরা ব্যাংককে পাশ কাটিয়ে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে চুক্তি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করছে। যদিও বন্ধকী সম্পত্তি বিক্রয় বা ভাড়া আদায়ের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যাংক। বন্ধকী সম্পত্তি বাদী ব্যাংকের আমমোক্তারনামা বলবৎ থাকা সত্ত্বেও বিবাদীরা ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া ভাড়া চুক্তি করেছে, যা আইনত গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করছেন আদালত। এরই মধ্যে বিবাদীরা বন্ধকী সম্পত্তি থেকে কোটি ৭৮ লাখ টাকা আয় করেও ব্যাংককে কোনো টাকা দেয়নি। যার কারণে ব্যাংক আদালতে ঋণ আদায়ে বন্ধকী সম্পত্তিতে রিসিভার নিয়োগের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। অর্থঋণ আদালত, চট্টগ্রামের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আদালতের নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, চট্টগ্রামের মেসার্স শাহ আরজু ফ্লাওয়ার মিলের মালিক মোহাম্মদ শাহ আলমের ব্যাংক এশিয়ার শেখ মুজিব রোড শাখার কাছে ৮৯ কোটি ৭১ লাখ ৫৩ হাজার ৫২৮ টাকা খেলাপি ছিল। কিন্তু ২০১১ সালের ১০ জুলাই শাহ আলম মারা যান। তবে বন্ধকী সম্পত্তি নিলাম বিক্রয়ের জন্য আইনের ১২() ধারায় ব্যাংক নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রচার করলে শাহ আলমের উত্তরাধিকাররা নিলাম বিক্রয়ের বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্ট ডিভিশনে রিট পিটিশন (নং-৭৯০৭/২০১৫) দায়ের করেন। হাইকোর্ট ডিভিশন বিষয়টি আমলে নিয়ে তিন মাসের মধ্যে বাদীরা ব্যাংকে কোটি টাকা পরিশোধের শর্তে নিলাম স্থগিত করে। পাশাপাশি অবশিষ্ট পাওনা পরিশোধে ১৮ মাসের মধ্যে পরিশোধের জন্য বিবাদীকে নির্দেশ দেয়। কিন্তু শাহ আলমের উত্তরাধিকাররা টাকা পরিশোধ না করায় ২০১৫ সালের নভেম্বর হাইকোর্ট আগের রুলটি খারিজ করে দেন।

এরপর উত্তরাধিকাররা ব্যাংকের টাকা পরিশোধ না করায় ২০১৬ সালের ১১ আগস্ট মামলা (৪৭৪/১৬) দায়ের করে ব্যাংক। ২০১৮ সালের ২১ আগস্ট শাহ আলমের সন্তান ( নং বিবাদী) তার পিতা শাহ আলম ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে সম্পত্তি বন্ধক রাখেন বলে আদালতের কাছে স্বীকারোক্তি দেয়। আদালতে অত্যধিক মামলাজটের কারণে মামলাটির অগ্রগতি হয়নি। যার কারণে শাহ আলমের মৃত্যুর ১০ বছর পরও কোনো টাকা পায়নি ডিক্রিদার ব্যাংক। এজন্য ২০১৯ সালের ১৯ মে বিআরপিডি সার্কুলার- অনুযায়ী শতাংশ ডাউন পেমেন্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা দেয়া হলেও শাহ আলমের উত্তরাধিকাররা গ্রহণ করেনি। যার কারণে ব্যাংক আর্থিকভাবে দুর্বল হলেও বিবাদীরা বন্ধকী সম্পত্তি থেকে বিপুল অর্থ আয় করছে। এছাড়াও পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তি ভোগ-বিলাসের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে বসবাস করছে। যার কারণে ব্যাংকের কোনো টাকা পরিশোধে কোনো সদিচ্ছা নেই বলে মনে করছেন আদালত।

আদালত আদেশে জানান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বায়েজিদ থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রিসিভার নিয়োগ দেয়া হয়। রিসিভার মাসিক একটি নির্দিষ্ট সম্মানীর ভিত্তিতে জানুয়ারি-২০২২ থেকে প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে ভাড়া সংগ্রহ করে আয়-ব্যয়ের হিসাব আদালতে দাখিল করবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন