আজ আমাদের
সবার অত্যন্ত
প্রিয় মো.
সাইদুজ্জামান ৮৯-তে
পা রাখলেন।
শুভ জন্মতিথিতে
আমাদের প্রাণঢালা
শুভেচ্ছা ও
অভিনন্দন তার
জন্য।
সাধারণত এ
বয়সে মানুষ
হয় অশীতিপর,
কাজকর্ম থেকে
থাকেন অনেক
দূরে কিন্তু
তিনি তারুণ্যের
তাকত অন্তরে
বয়ে বেড়ান।
খুব অমায়িক,
মৃদুভাষী, স্মিতহাস্য
ও প্রচারবিমুখ
মানুষ একজন।
মো. সাইদুজ্জামান
১৯৩৩ সালের
২৭ অক্টোবর
কিশোরগঞ্জের এক
বনেদি পরিবারে
জন্মগ্রহণ করেন।
তার উচ্চতর
শিক্ষার শুরু
হয় ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের
একজন মেধাবী
ছাত্র হিসেবে।
পরবর্তীকালে উন্নয়ন
অর্থনীতির ওপর
অমেরিকা ও
ইংল্যান্ডে পড়াশোনা
করেন। তত্কালীন
সমগ্র পাকিস্তান
সিভিল সার্ভিসের লিখিত
পরীক্ষায় প্রথম
হওয়া (লিখিত
ও মৌখিক
পরীক্ষায় সপ্তম)
প্রমাণ করে
পুরো ছাত্রজীবনে
তিনি কত
মেধাবী ছিলেন,
যা
অব্যাহত ছিল
পেশা তথা
কর্মজীবনেও ।
পেশাজীবনে তিনি
ছিলেন একজন
সৎ, দক্ষ
ও ‘দেশসেবক আমলা’;
বাংলাদেশের অর্থ
সচিব এবং
একসময় অর্থমন্ত্রীর
পদ অলংকৃত
করেছিলেন স্বল্পভাষী
বিনম্র এ
মানুষটি। একই
ব্যাচের যে
পাঁচজন বাংলাদেশের
অর্থমন্ত্রীর পদে
আসীন হয়েছিলেন
বলে একদিন
লিখেছিলাম ঠিক
এ কলামে,
তিনি সেই
পাঁচ তারকার
এক তারকা।
বঙ্গবন্ধুর সরকারের
পরিকল্পনা সচিব
থাকাকালে প্রথম
পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা
প্রণয়নে বিশেষ
ভূমিকা রাখেন;
বহিঃসহ সম্পদ
সচিব হিসেবে
বৈদেশিক সাহায্য
আহরণে সচেষ্ট
হন। তাছাড়া
বিশ্বব্যাংকে অল্টারনেট
ডাইরেক্টর, ব্যাংক
এশিয়ার চেয়ারম্যান,
সিপিডি, বিআইডিএস,
বারি, বিরি
ইত্যাদি জাতীয়
ও আন্তর্জাতিক
সংগঠনের পরিচালনা
পর্ষদে থেকে
প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে
অবদান রাখেন
তিনি।
আর্থসামাজিক
গবেষণা তার
হূদয়ের গভীরে
গ্রোথিত যেন।
এখনো এবং
এ বয়সে
অজানাকে জানার
তীব্র তৃষ্ণায়
তাড়িত হয়ে
তিনি ধোপদুরস্ত
উপস্থিত থাকেন
সেমিনারে কিংবা
কনফারেন্সে এবং
পুরো প্রস্তুতি
নিয়ে প্রথম
সারিতে বসে
নিবিষ্টমনে নোট
নেন করোটিতে।
মো. সাইদুজ্জামানের
জীবনে কিছু
অভাবনীয় ঘটনা
আছে, যা
হয়তো অনেকের
অজানা। এক.
পাকিস্তান আমলে
শুধু বাঙালি
প্রীতির কারণে
তার শিক্ষা
কার্যক্রম শেষ
করতে এক
বছর বেশি
সময় লেগেছিল
কেন সে
প্রশ্নের উত্তর
শোনা যাক
তার মুখে—‘আমি
তখন এসএম
হলে থাকি।
প্রথম থেকে
আমি সিঙ্গেল
রুমে ছিলাম।
১৯৫৪ সালের
পূর্ব বাংলার
আইনসভার নির্বাচনের
ফলাফল জানতে
পলাশী ব্যারাকে
এক চায়ের
স্টলে রেডিও
শুনতে যাই।
যেই শুনলাম
আওয়ামী লীগ
ও কৃষক-শ্রমিক
পার্টির নেতৃত্বে
যুক্তফ্রন্টের জয়
আর মুসলিম
লীগের ভরাডুবি
হতে চলেছে,
তখন এমন
জোরে দৌড়
দিলাম, মনে
হলো যেন
আমি অলিম্পিকে
অংশগ্রহণ করছি।
হাঁপাতে হাঁপাতে
হলে এসেই
অসুস্থ হয়ে
বিছানায় পড়লাম।
এদিকে পরের
দিন ছিল
পরীক্ষা। ডাক্তার
এসে চেকআপ
করে বললেন,
কার্ডিয়াক সমস্যা,
পুরো বিশ্রাম
প্রয়োজন, আপাতত
পরীক্ষা দেয়া
যাবে না।
দুই,
তার শাশুড়ি
এবং অন্য
দুই খালা
শাশুড়ির নাম
শান্তি, দেবী
ও মুক্তি;
রেখেছিলেন বিশ্বকবি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
স্বয়ং। কবিগুরুর
সঙ্গে প্রগাঢ়
সখ্য ছিল
তার নানা
শ্বশুর খান
বাহাদুর মোয়াজ্জেম
হোসেনের। করতোয়া
নদীর পাশ
দিয়ে হাঁটতেন
দুজনে এবং
প্রায়ই কবি
তার
বাড়িতে আমন্ত্রণ
জানাতেন মোয়াজ্জেম
হোসেনকে। তার
শ্বশুর-শাশুড়িরা
এবং স্ত্রী
রবীন্দ্রনাথের কুটিরে
গেলে কবি
খুব খুশিমনে
গ্রহণ করতেন;
আলাপ করতেন
ইজি চেয়ার
কিংবা পালঙ্কে
বসে। সুতরাং
বুঝতে বাকি
থাকে না মো.
সাইদুজ্জামানের শ্বশুরকুলের
প্রতিভাসিত সাংস্কৃতিক
পরিমণ্ডলের প্রারম্ভ
কোথায়।
এবং স্মরণীয়
ঘটনা এও
যে মো.
সাইদুজ্জামান পাকিস্তান
আমলে মেধা
ও দক্ষতার
স্বীকৃতিস্বরূপ বেশ
কয়েকজনকে ডিঙিয়ে
প্রমোশন পেয়েছিলেন।
কিন্তু চোখ
ধাঁধানো এ
সাফল্য চোখের
বালি হিসেবে
ধরা দিল
কারো কাছে।
প্রশ্ন ছিল,
এতই যদি
বাঙালি প্রীতি
তো পাকিস্তানিরা
কেন তাকে
প্রমোশন দেবে?
কথাটা একসময়
বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানের
কানেও গেল।
তাই প্রথম
সাক্ষাতেই বঙ্গবন্ধু
জানতে চাইলেন,
‘এত
প্রমোশন কেন?’
স্বভাবসুলভ স্মিতহাস্যে
সাইদুজ্জামান জবাব
দিলেন, ‘স্যার
আমার প্রমোশনের
জন্য ৫০
শতাংশ আমার
মেধা ও
দক্ষতা দায়ী
আর বাকি
৫০ শতাংশ
আপনার অবদান।’
বিস্মিত বঙ্গবন্ধু
বললেন, ‘কীভাবে?’
জামান সাহেব
জানালেন, ‘স্যার,
আপনার ছয়
দফাকেন্দ্রিক গণ-আন্দোলনের
ফলে পশ্চিম
পাকিস্তানিরা বোঝাতে
চেয়েছিল যে
তারা প্রমোশনে
পক্ষপাতিত্ব করে
না।’ বঙ্গবন্ধু
হেসে উঠে
বললেন, ‘বাহ,
বেশ তো
কথা শিখেছ
দেখছি। এখন
যাও, আপাতত
পরিকল্পনা ও
বহিঃসম্পদ সম্পর্ক
বিভাগ দেখভাল
করো। খুব
ভালো করে
কাজ করো।
তোমার উপর
আমার আস্থা
অনেক।’
কিশোরগঞ্জের বিখ্যাত
বিতর্কিত লেখক
নীরদ চন্দ্র
চৌধুরী ১০১
বছর বেঁচেছিলেন
এবং ৯০
বছর বয়সে
লিখেছিলেন আত্মজীবনীর
শেষ পর্ব—Thy
Hand, Great Anarch (1987)। আশা
করি মো.
সাইদুজ্জামান তার
আত্মজীবনী আমাদের
উপহার দেবেন।
তিনি অনেক
কালের নীরব
সাক্ষী আর
তাই নিরপেক্ষ
দৃষ্টিকোণ থেকে
একজন আলোকিত
মানুষ হিসেবে
এখনো অনেক
কিছু দেয়ার
বাকি আছে
প্রাণাপেক্ষা প্রিয়
এ দেশকে।
আপনার দীর্ঘ
জীবন কামনা
করি মো.
সাইদুজ্জামান সাহেব।
আব্দুল বায়েস: সাবেক উপাচার্য ও অর্থনীতির অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; বর্তমানে খণ্ডকালীন শিক্ষক, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি