বৈশ্বিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধার নিয়ে আইএমএফের হুঁশিয়ারি

বণিক বার্তা অনলাইন

করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে অনেক দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম দুর্বল হওয়ার আশংকা করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি এ বছর অনেক দেশের প্রবৃদ্ধি ০.১ থেকে ৫.৯ শতাংশ পর্যন্ত কম হতে পারে বলে সতর্ক করেছে। তবে আগামী বছরের পূর্বাভাস ৪.৯% অপরিবর্তিত থাকবে বলে মনে করে আইএমএফ। মঙ্গলবার আইএমএফ বিশ্ব অর্থনীতির উন্নতি নিয়ে চলতি বছরের অক্টোবরের পর্যবেক্ষনে এসব তথ্য জানায়।

আইএমএফের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের কারণে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বহাল থাকবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মত ধনি দেশগুলোতেও।তাই দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সতর্ক থাকতে হবে।

করোনার প্রভাবের কথা মাথায় রেখে জাপান, জার্মানি এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো অনেক দেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে এনেছে। তবে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, দরিদ্র দেশগুলো পরবর্তীতে এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সক্ষম নাও হতে পারে। এসব দেশের বিষয়ে পিছিয়ে পড়া এবং উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক ব্যবধান বাড়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

গতবছর করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বিভিন্ন দেশে লকডাউন ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রার উপর নানা বিধি নিষেধ জারি করা হয়। তখন বিশ্ব অর্থনীতি উদ্বেগজনক হারে সংকুচিত হয়ে পড়ে। কিন্তু এ বছরের শুরুর দিকে যখন সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা শুরু হয় , তখন দ্রুতই অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসতে থাকে। 

তবে, আইএমএফ-এর প্রধান অর্থনীতিবিদ গীতা গোপিনাথ বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য ৩ দশমিক ২ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ হারে মূল্যস্ফীতি বিদ্যমান রয়েছে। এটি আংশিকভাবে ‘চাহিদা এবং যোগানের’ মধ্যে বড় রকমের ব্যবধান তৈরি করেছে। যেটি ব্রিটেনে গ্যাসের দাম, চাহিদা আর উৎপাদনের দিকে তাকালেই বোঝা যায়।

ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবার গীতা গোপিনাথ বলেন, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই এই উচ্চ মূল্যস্ফীতি আগামী বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত থাকবে। তবে যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতি ২০২৩ সালের আগে কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। অর্থনৈতিক এসব উত্থান পতনের দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। 

গীতা বলেন, চলমান স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং পণ্য সরবরাহে বিঘ্নতা অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। আইএমএফের হিসাবে, বিশ্ব অর্থনীতি ২০২১ সালে 

৫.৯ % উন্নতি করবে। তবে কয়েকটি উন্নত দেশ এই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলেও ধারণা দেয়া হয়। সংস্থাটি বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে এবার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ৬ শতাংশ যা গত জুলাইয়েও বলা হয়েছিল ৭ শতাংশ।

সংস্থাটি জানায়, জাপান ২.৮ থেকে কমে ২ দশমিক ৪ এবং জার্মানি ৩ দশমিক ৬ থেকে কমে ৩ দশমিক ১ এ অবস্থান করবে। যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি আগের দেয়া পূর্বাভাস ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হবে বলা হয়। তবে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল প্রত্যাশা করে আগামী বছর থেকে উন্নত দেশগুলোর পণ্য সরবরাহ ও উৎপাদন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসবে। ফলে অর্থনৈতিক উন্নতি আরো দ্রুত এবং টেকসই করা সম্ভব হবে।

মুদ্রা তহবিলের হিসাবে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য খুব একটা সুখকর হবে না মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক উন্নতি। চীন ব্যতিত অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আগামী ২০২৪ সাল নাগাদ ৫ দশমিক ৫ শতাংশের নীচে থাকবে বলে সতর্ক করা হয়েছে। এটি ভ্যাকসিন রাজনীতির কুফল বলে মন্তব্য করেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রধান এই অর্থনীতিবিদ।

গীতা গোপিনাথ বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোর ৬০ শতাশের বেশি জনগণের কভিড ভ্যাকসিন নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ কভিড থেকে সুরক্ষা পেতে বিশেষ ডোজ ‘বুস্টার শট’ নিচ্ছেন। কিন্তু গরিব বা উন্নয়নশীল দেশের অন্তত ৯৬ শতাংশ মানুষ নিম্ন আয়ের। তাদের বেশিরভাগ এখনো প্রথম ডোজ ভ্যাকিসনই নিতে পারেননি। এসব নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন মানের উপর সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে করোনা। এটি সামনে আরো বেশি হবে।’

অনেক দেশ মহামারির খরচ মেটাতে গিয়ে রেকর্ড পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করতে হয়েছে। দেশগুলোতে কর্মসংস্থানের পরিমাণ উদ্বেগজনক হারে কমে গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন