চীন-ভারত যুদ্ধ ও সোভিয়েত পার্টির সঙ্গে বিরোধের বিস্তার

আনু মুহাম্মদ

১৯৫০ সালে তিব্বত দখলে নেয় চীনের গণমুক্তি বাহিনী। ১৯৫৬-৫৭ সালে আকসাই চীন নামক সীমান্তবর্তী অঞ্চলে একটি সড়ক নির্মাণ করে সীমান্ত চৌকি স্থাপন করে চীন। এ সড়ক নিয়েই চীন-ভারত বিরোধের সূত্রপাত

পিপলস রিপাবলিক অব চায়না। জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম রাষ্ট্র। ইরান, ভারত, ইনকা, মায়ার মতো প্রাচীন চীনের সভ্যতা। ১৯৪৯ সালে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে বিপ্লবের পর এক নতুন চীনের যাত্রা হয়। নানা রকম সংস্কার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমান বিশ্বে চীন অন্যতম এক পরাশক্তি। জিডিপির হিসাবে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ফসল নয়া চীন এখন পুঁজিবাদী বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্র। ঐতিহাসিক বৈশ্বিক প্রেক্ষিতে চীনের শক্তি-দুর্বলতা, সাফল্য-ব্যর্থতা ধারাবাহিক পরিবর্তনগুলো নিয়ে লিখেছেন আনু মুহাম্মদ 

বিরাট উল্লম্ফনের ওঠানামা, সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিতর্ককালেই চীনের সঙ্গে সোভিয়েত পার্টির বিরোধ বিতর্ক শুরু হয়। ঠিক একই সময়ে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ থেকে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয় ১৯৬২ সালে। বিরোধের সূত্রপাত এর আগেই। ১৯৫০ সালে চীনের গণমুক্তি বাহিনী তিব্বত দখলে নেয়। ১৯৫৬-৫৭ সালে ওই অঞ্চলে একটি সড়ক নির্মাণ করে আকসাই চীন নামক স্থানে সীমান্ত চৌকি স্থাপন করে। সড়ক চৌকি নিয়েই বিরোধের সূত্রপাত।

এর মধ্যে ১৯৫৪ সালে চীন ভারত শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য পাঁচটি নীতিতে একমত হয়, যা পরে পঞ্চশীলা নীতি নামে পরিচিতি পায়। পাঁচটি নীতি হলো: () পারস্পরিক ভৌগোলিক অখণ্ডতা সার্বভৌমত্ব বিষয়ে পরস্পরের শ্রদ্ধা; () পারস্পরিক অনাক্রমণ নীতি; () পরস্পরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা; () পারস্পরিক স্বার্থে সমতা সহযোগিতা এবং () শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। নীতিমালার সঙ্গে পরে আরো বহু দেশ ক্রমান্বয়ে যুক্ত হয়। নীতি সম্প্রসারণ করে ১৯৫৫ সালে ইন্দোনেশিয়ার বানদুংয়ে এশিয়া আফ্রিকা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা হতে থাকে সদ্য স্বাধীন দেশগুলোর মধ্যে, নয়া ঔপনিবেশিক থাবা থেকে কীভাবে বাঁচা যায় তার পথ অনুসন্ধান চলতে থাকে। প্রক্রিয়ায় উপরোক্ত নীতিমালার ওপর ভিত্তি করেই কয়েক বছরের মধ্যে ১৯৬১ সালে জন্ম নেয় জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন। এর নেতৃত্বে ছিলেন চীনের চৌ এন লাই, ভারতের জওহরলাল নেহরু, ইন্দোনেশিয়ার সুকর্ণ এবং যুগোস্লাভিয়ার টিটো। সুকর্ণ অবশ্য ধরনের নীতিমালার প্রস্তাব করেছিলেন আরো আগে, ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামকালেই।

ভারত চীনের বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আলোচনা ভালোই অগ্রসর হচ্ছিল। তখন হিন্দি-চীনি ভাই ভাই’— স্লোগানও বেশ জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ভারত চীনের শান্তিপূর্ণ আলোচনা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পথে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াল তিব্বত প্রশ্ন। ১৯৫৯ সালে তিব্বতের ধর্মীয় নেতা ১৪তম দালাই লামা চীনবিরোধী বিদ্রোহে পরাজিত হয়ে লাসা থেকে পালিয়ে ভারতে এলেন। নেহরু সরকার তাঁকে আশ্রয় দেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করায় দুদেশের মধ্যে সম্পর্কের দ্রুত অবনতি ঘটে এবং একপর্যায়ে যুদ্ধের মুখোমুখি হয় বিশ্বের দুটি বৃহৎ দেশ। অর্থাৎ হিমালয় সীমান্তে হাজার ২২৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে বিরোধ যুদ্ধের প্রধান কারণ হিসেবে সামনে থাকলেও তিব্বত প্রশ্নটি এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। চীন ১৯৬২ সালের ২০ অক্টোবর লাদাখ ম্যাকমোহন লাইন বরাবর অগ্রসর হলে যুদ্ধ শুরু হয়। চীন বেশকিছু অঞ্চল নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। ঠিক এক মাস পর নিজেরাই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ওইসব অঞ্চল থেকে সরে এলে যুদ্ধ শেষ হয়। সময়কালে যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন উভয়েরই অবস্থান ছিল কম-বেশি প্রত্যক্ষ এবং প্রচ্ছন্নভাবে ভারতেরই পক্ষে। এর পর থেকে চীনের সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের আরো দূরত্ব বাড়তে থাকে, অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে সোভিয়েত ইউনিয়নের।

১৯৬৩ সালের ৩০ মার্চ সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি নিজেদের অবস্থান জানিয়ে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে একটি পত্র দেয়, চীনা পার্টিও নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে দীর্ঘ জবাব দেয়। ১৯৫৭ ১৯৬০ সালে মস্কোতে অনুষ্ঠিত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত ঘোষণা বিবৃতিকেই চীনা পার্টি নিজেদের অবস্থানের ভিত্তি হিসেবে বর্ণনা করে। লক্ষণীয় যে, বিতর্কের প্রথমদিকে ভাষা ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ। চিঠির এক পর্যায়ে সোভিয়েত পার্টিকে উদ্দেশ করেই বলা হয়:

বর্তমান বিশ্বের মূল দ্বন্দ্বগুলো সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণাগুলোর অবসান হওয়া উচিত: () যে ধারণা সমাজতান্ত্রিক শিবির সাম্রাজ্যবাদী শিবিরের মধ্যকার দ্বন্দ্বের শ্রেণীগত মর্মবস্তু অস্বীকার করে এবং দ্বন্দ্ব যে আসলে সর্বহারা শ্রেণীর একনায়কত্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে একচেটিয়া পুঁজিপতিদের একনায়কত্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর বিরোধ, তা বুঝতে ব্যর্থ হয়; () যে ধারণা একমাত্র সমাজতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদী শিবিরের মধ্যকার দ্বন্দ্বকেই স্বীকৃতি দেয় এবং যে ধারণা পুঁজিবাদী দুনিয়ার সর্বহারা শ্রেণী পুঁজিপতি শ্রেণীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব, নিপীড়িত জাতিগুলো সাম্রাজ্যবাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব, সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর মধ্যকার দ্বন্দ্ব, বিভিন্ন একচেটিয়া পুঁজিপতি গোষ্ঠীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব এবং এসব দ্বন্দ্বের ফলে যেসব সংগ্রাম দেখা দেয়, সেগুলোকে অবহেলা করে কিংবা যথোচিত গুরুত্ব দিতে অস্বীকার করে; () যে ধারণা অনুসারে, দেশে দেশে সর্বহারা শ্রেণীর বিপ্লব ছাড়াই, পুঁজিবাদী দুনিয়ার, সর্বহারা শ্রেণী পুঁজিপতি শ্রেণীর মধ্যকার দ্বন্দ্বগুলোর সমাধান হতে পারে এবং নিপীড়িত জাতিগুলোর বিপ্লব ছাড়াই নিপীড়িত জাতি সাম্রাজ্যবাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব সমাধান হতে পারে; () যে ধারণা কথা অস্বীকার করে যে বর্তমান পুঁজিবাদী দুনিয়ার অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্বগুলোর ফলে নিশ্চিতভাবেই এমন এক অবস্থার সৃষ্টি হয়, যখন সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো নিজেরাই তীব্র দ্বন্দ্বে জড়িত হয়ে পড়ে এবং যে ধারণা দাবি করে যে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর মধ্যকার দ্বন্দ্বগুলোর মীমাংসা, এমনকি অবসানও, বৃহৎ একচেটিয়া পুঁজিপতি গোষ্ঠীগুলোর আন্তর্জাতিক চুক্তি দ্বারা সম্ভব এবং () যে ধারণা অনুসারে, সমাজতান্ত্রিক পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থা দুটির মধ্যকার দ্বন্দ্বগুলো অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা মাধ্যমে নিজে থেকেই লোপ পাবে এবং ব্যবস্থা দুটির মধ্যকার দ্বন্দ্বগুলোর অবসানের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের অন্য মৌলিক দ্বন্দ্বগুলোও নিজে থেকে লোপ পাবে, আর তখন দেখা দেবে এক যুদ্ধহীন দুনিয়া, সে দুনিয়ায় থাকবে শুধু সর্বাঙ্গীণ সহযোগিতা

মস্কোপন্থী পিকিংপন্থী রাজনীতিতে বিভক্ত বিশ্ব

সোভিয়েত পার্টির সঙ্গে বিতর্কের এক পর্যায়ে কী কী ধরন থাকলে কোনো বিপ্লবী পার্টি আর বিপ্লবী পার্টি থাকতে পারে না তার বিষয়ে চীনা পার্টির প্রকাশনায় বিশদ বলা হয়েছিল। সেগুলো যদি তালিকা হিসেবে উপস্থিত করি, তাহলে তা হবে সংক্ষেপে রকম : () সর্বহারা বিপ্লবী পার্টি না হয়ে কোনো পার্টি যদি বুর্জোয়া সংস্কারবাদী পার্টি হয়, () মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী পার্টি না হয়ে কোনো পার্টি যদি সংশোধনবাদী পার্টি হয়, () সর্বহারা শ্রেণীর অগ্রগামী বাহিনী না হয়ে কোনো পার্টি যদি বুর্জোয়া শ্রেণীর লেজুড়ে পরিণত হয়, () সর্বহারা শ্রেণী শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থের পরিবর্তে কোনো পার্টি যদি শ্রমিক অভিজাতদের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে, () আন্তর্জাতিকতাবাদী না হয়ে যদি কোনো পার্টি জাতীয়তাবাদী হয়, () কোনো পার্টি যদি নিজের চিন্তা নিজে করতে না পারে, গভীর অনুসন্ধান গবেষণা দ্বারা নিজের দেশের বিভিন্ন শ্রেণীর প্রবণতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা অর্জনে সক্ষম না হয়, () মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের বিশ্বজনীন সত্যকে কীভাবে প্রয়োগ করতে নিজ দেশের বাস্তব অনুশীলনের সঙ্গে সমন্বিত করতে হয় তা না জানে এবং তার পরিবর্তে কেবল অন্যের কথা কপচায়, () কোনো রকম বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়াই বিদেশী অভিজ্ঞতার অনুসরণ করে, () বাইরের কিছু ব্যক্তির ছড়ি ঘোরানোর সঙ্গে সঙ্গে এদিক-ওদিক দৌড়াদৌড়ি করতে থাকে এবং মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ ছাড়া সংশোধনবাদ, গোঁড়ামিবাদ ইত্যাদি সবকিছুরই জগাখিচুড়িতে পর্যবসিত হয়তবে রকম পার্টি বিপ্লবী সংগ্রামে সর্বহারা শ্রেণী জনগণকে নেতৃত্ব দানে পুরোপুরি অক্ষম হবে, বিপ্লবের বিজয় অর্জনে অক্ষম হবে এবং সর্বহারা শ্রেণীর মহান ঐতিহাসিক লক্ষ্য সাধনে সম্পূর্ণ অক্ষম হবে।

তালিকার থেকে পর্যন্ত বিষয়গুলো বলা হয়েছে সোভিয়েত পার্টির উদ্দেশে। আর থেকে পর্যন্ত বিষয়গুলো বলা হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সেসব পার্টির উদ্দেশে, যারা মস্কোকে অন্ধভাবে অনুসরণ করছিল। উল্লেখ্য, চীনা পার্টি সোভিয়েত পার্টি সম্পর্কে যেসব অভিযোগ করেছিল কয়েক বছরের মধ্যে তার অনেক অভিযোগ চীনা পার্টির বিরুদ্ধে উত্থাপন করে আলবেনিয়া পার্টি।

এর মধ্যে বিপ্লবী আন্দোলনের দুটো কেন্দ্র সৃষ্টি হয়ে যায়: মস্কো পিকিং। পুরো বিশ্বের বিপ্লবী আন্দোলন বিভক্ত হয়ে যায় দুই পরস্পরবিদ্বেষী শিবিরে, পিকিংপন্থী মস্কোপন্থী। পরের বছরগুলোতে আমরা লক্ষ্য করি তালিকার থেকে পর্যন্ত অভিযোগগুলোর অনেকটাই ক্রমে চীনা পার্টির জন্য প্রযোজ্য হচ্ছে। আর থেকে পর্যন্ত উত্থাপিত ধরনগুলো মস্কোপন্থী পার্টিগুলোর সঙ্গে সঙ্গে পিকিংপন্থী পার্টিগুলোর মধ্যেও একইভাবে দেখা যাচ্ছে।

৬০ দশকের মাঝামাঝি মস্কো-পিকিং বিরোধের উত্তেজনা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তানে কমিউনিস্ট পার্টি তখন ছিল গোপন, সেজন্য এসব ভাঙনের বিষয় পার্টির কর্মীদের কাছেও পৌঁছেছে অনেক পরে। ৬০ দশকের শেষভাগে এসে অন্যান্য দেশের মতো পাকিস্তান/বাংলাদেশ/ভারতেও মস্কো-পিকিং বিভাজন প্রকাশ্য হয়ে পড়ে। ছাত্র, শ্রমিক, কৃষকসহ শ্রেণী গণসংগঠনগুলো প্রথমে বিভক্ত হয়। পরে পার্টিও মস্কো পিকিংপন্থী রকম ভিন্ন পরিচয়ে পরিচিত হতে থাকে। খোদ কেন্দ্রের ভূমিকার পার্থক্যের কারণে, পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ার ক্ষেত্রে, দুই পন্থী পার্টিগুলোর মধ্যে একটি বড় পার্থক্য তৈরি হয়।

বিশ্বজুড়ে মস্কো তার অনুসারী পার্টিগুলোর প্রতি দায়িত্ব পালনে বরাবরই সচেষ্ট ছিল। বস্তুগত সমর্থন তাত্ত্বিক দিশাদানে মস্কোর কোনো ঘাটতি দেখা যায়নি, আন্তর্জাতিক সংহতির প্রকাশ হিসেবে বিভিন্ন সাংগঠনিক প্রক্রিয়াও সক্রিয় ছিল। কিন্তু সম্পদের অভাব কিংবা আন্তর্জাতিক প্রভাববলয় তৈরিতে অনাগ্রহযে কারণেই হোক পিকিংয়ের পক্ষ থেকে পিকিংপন্থী পার্টিগুলোকে রকম সমর্থন দিতে খুব কমই দেখা গেছে। কেন্দ্রীয় তদারকি পৃষ্ঠপোষকতার কারণে মস্কোপন্থী পার্টিগুলোতে ভাঙন দেখা যায়নি, কিন্তু পিকিংপন্থী পার্টিগুলো একের পর এক ভাঙনের শিকার হয়েছে। তারা একদিকে মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের বিশ্বজনীন সত্যকে কীভাবে প্রয়োগ করতে নিজ দেশের বাস্তব অনুশীলনের সঙ্গে সমন্বিত করতে হয় তা না জেনে পরিবর্তে কেবল পিকিংয়ের কথা কপচিয়েছে, উপরন্তু কোনো রকম বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়াই বিদেশী অভিজ্ঞতার অনুসরণ করেছে এবং বাইরের কিছু ব্যক্তির ছড়ি ঘোরানোর সঙ্গে সঙ্গে এদিক-ওদিক দৌড়াদৌড়ি করেছে অন্যদিকে বিষয়ে কোনো কেন্দ্রীয় সমর্থন বা দিকনির্দেশনা পায়নি। চীনা পার্টি আগে বৈশিষ্ট্যগুলো মস্কোর অন্ধ অনুসারীদের বেলায় উল্লেখ করেছিল। কর্তা খোঁজা লোকজনের কর্তার অভাবে তাই পিকিংপন্থীরা এক থেকে দুই, দুই থেকে চার এভাবে ভাঙতে থাকে। বিপ্লবের নামে নানা লাইনের জন্ম হতে থাকে।

আন্তর্জাতিক মতাদর্শিক বিতর্ককালে চীনে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের মধ্যকার বিরোধ কমেনি, বরং ভেতরে ভেতরে আরো দানা বাঁধছিল। উল্লম্ফনের অভিজ্ঞতার পর মাও সে তুং যখন কিছুটা কোণঠাসা, তার সমালোচক বিরোধী অংশই তখন কেন্দ্রীয় কমিটিতে শক্তিশালী। পরিপ্রেক্ষিতেই এল সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ডাক। মাও সে তুংয়ের আহ্বানে সারা দেশে, বিশেষত তরুণদের মধ্যে, দেখা গেল নতুন জাগরণ (চলবে)

 

আনু মুহাম্মদ: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন