পৃথিবীর জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে —প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

জলবায়ু পরিবর্তন, পৃথিবীর জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় বিশ্বনেতাদের দ্রুত সাহসী অধিক শক্তিশালী পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সময় সংকট উত্তরণে বিশ্বনেতাদের সামনে ছয়টি প্রস্তাবও পেশ করেছেন তিনি। গতকাল জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে বিভিন্ন রাষ্ট্র সরকারপ্রধানদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বৈঠক আহ্বান করেন।

ছয়টি প্রস্তাব পেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে বলেন, পৃথিবীর জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় আমাদের জরুরিভাবে সাহসী অধিকতর শক্তিশালী ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রথম প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি দশমিক ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে প্যারিস চুক্তি কঠোর বাস্তবায়নের কথা বলেন।

দ্বিতীয় প্রস্তাবে উন্নত দেশগুলো থেকে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার তহবিল আদায় করার কথা বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, টাকার ৫০ শতাংশ অভিযোজন স্থিতিস্থাপকতার জন্য খরচ করা উচিত, বিশেষ করে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য। তৃতীয় প্রস্তাবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে নতুন আর্থিক মেকানিজম এবং পরিবেশবান্ধব সবুজ প্রযুক্তি হস্তান্তর করার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

চতুর্থ প্রস্তাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি ধ্বংস এবং এর কারণে বড় পরিসরে জনগণের বাস্তুচ্যুত হওয়ার সংকট মোকাবেলা করতে বলেন শেখ হাসিনা। পঞ্চম প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহামারী এবং দুর্যোগ দুই বিপদ মোকাবেলায় বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ বৃদ্ধির সঙ্গে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) দেশগুলোর সক্ষমতা তৈরিতে সহায়তা প্রয়োজন।

সবশেষ প্রস্তাবে আগামী প্রজন্মের জন্য টেকসই ভবিষ্যৎ রেখে যেতে সবাইকে বৈশ্বিক মনোভাব নিয়ে কাজ করার কথা বলেন শেখ হাসিনা।

বৈশ্বিক গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, বৈশ্বিক গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণে সবচেয়ে কম ভূমিকা রাখছে জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

সাম্প্রতিক আইপিসিসি রিপোর্টে জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয়ানক চিত্র তুলে ধরার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা যদি দশমিক ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো স্থায়ী ক্ষতির মুখে পড়বে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্বের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অভিযোজন ক্ষতি প্রশমনে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে সহায়তা করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিশেষ দায়িত্ব। সম্পদের সীমাবদ্ধতার সঙ্গে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হওয়া সত্ত্বেও অভিযোজন স্থিতিস্থাপকতায় বাংলাদেশ বিশ্বে পথপ্রদর্শক বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

সবুজ প্রবৃদ্ধি, অবকাঠামোগত স্থিতিস্থাপকতা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে গুরুত্ব দিয়ে মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা গ্রহণ করার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা জলবায়ু ভালনারেবিলিটি থেকে জলবায়ু রেজিলেন্স, জলবায়ু রেজিলেন্স থেকে জলবায়ু সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) ভি২০ চেয়ার শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য ক্লাইমেট ভালনারেবল দেশগুলোর স্বার্থ অগ্রাধিকার দেয়া। আমরা আমাদের প্র্যাকটিস এবং অভিযোজন জ্ঞান অভিজ্ঞতা একে অন্যের সঙ্গে বিনিময় করেছি।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে যোগ দিতে গতকাল স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৫টায় নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী উপপ্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার বণিক বার্তাকে জানান, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ভিভিআইপি চার্টার্ড ফ্লাইট স্থানীয় সময় রোববার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে প্রধানমন্ত্রী এবং তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সময় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতেমা প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান। বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রীকে সুসজ্জিত মোটর শোভাযাত্রা সহকারে লোটে নিউইয়র্ক প্যালেসে নিয়ে যাওয়া হয়।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টা ২৩ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভিভিআইপি ফ্লাইটে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দেয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী। ওইদিন ফিনল্যান্ডের স্থানীয় সময় বেলা ৩টা ৩৭ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটটি হেলসিংকির ভানতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। দুই দিন ফিনল্যান্ডের হেলসিংকিতে যাত্রাবিরতি শেষে ১৯ সেপ্টেম্বর বিকালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের পথে যাত্রা করেন তিনি। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিদায় জানাতে আসেন ফিনল্যান্ডে অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত নাজমুল ইসলাম।

সফরসূচি অনুযায়ী, ২৫ সেপ্টেম্বর সকালে নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটনের উদ্দেশে যাত্রা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি সেখানে অবস্থান করবেন। যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী ৩০ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টায় ওয়াশিংটন থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন। হেলসিংকিতে যাত্রাবিরতির পর আগামী অক্টোবর তিনি দেশে পৌঁছবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন