১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে ফ্রান্সের প্যারিসের আর্লি বিমানবন্দরে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের (পিআইএ) একটি বিমান হাইজ্যাক করেন ফরাসি এক তরুণ। নাম জ্যাঁ কুয়ে। না, তিনি কোনো দুর্বৃত্ত নন। নিজের কোনো বৈষয়িক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য এ কাজ করেননি তিনি। বরং প্যারিসের মাটিতে সেদিন পাকিস্তানের সেই বিমান ছিনতাই করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক বন্ধুতে পরিণত হন জ্যাঁ। বিমানটি ছিনতাই করার একটাই উদ্দেশ্য ছিল তার, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের জন্য ২০ টন ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী ওই বিমানে তুলে দিতে হবে এবং তাহলেই কেবল মুক্তি পাবে বিমানের সব যাত্রী। শেষমেশ ওষুধ বিমানে তোলার সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাকে গ্রেফতার করে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে এভাবেই জড়িয়ে গেছে সেই ফরাসি তরুণের নাম।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সহায়তা করতে ফরাসি তরুণের এ সত্যি ঘটনা অবলম্বন করে বাংলাদেশে নির্মিত হচ্ছে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। ছবির নাম জেকে ১৯৭১। এটি নির্মাণ করছেন ভুবন মাঝি ও গণ্ডির নির্মাতা ফাখরুল আরেফীন খান।
১৮ সেপ্টেম্বর থেকে পশ্চিমবঙ্গের পৈলান স্টুডিওতে সেট ফেলে ছবির দৃশ্যধারণ শুরু হয়েছে। ছবির প্রথম দিনের দৃশ্য ধারণে অংশ নেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিনেতা ফ্রান্সিসকো রেমন্ড এবং রাশিয়ান অভিনেত্রী ডেরিয়া গভ্রুসেনকো ও অভিনেতা নিকোলাই নভোমিনাস্কি। নির্মাতা সূত্রে জানা গেছে, এখানেই টানা ১৫ দিন ছবিটির চিত্রায়ণ হবে। জ্যাঁ কুয়ে ১৯৭১ ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন পশ্চিমবঙ্গের সৌরভ শুভ্র দাশ। এছাড়া অভিনয় করছেন সব্যসাচী চক্রবর্তী, ইন্দ্রানীলসহ আরো প্রায় ৩৬ জন অভিনয় শিল্পী।
আরো জানা গেছে, ছবির দৃশ্যধারণ শুরুর আগে বেশ কয়েক দিন টানা মহড়ায় অংশ নেন ছবির কলাকুশলীরা। কলকাতা থেকে মুঠোফোনে ফাখরুল আরেফীন খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘১৯৭১
সালের ১৩ ডিসেম্বর প্যারিসের আর্লি বিমানবন্দরে বাংলাদেশের জন্য জ্যাঁ কুয়ে পাকিস্তানের পিআইএ-৭১১ বিমানটি যাত্রীসহ ছিনতাই করেছিলেন। সেদিন কুয়ে কেমন করে কোন ভাবনা থেকে বিমানটি ছিনতাই করলেন। কী ঘটেছিল বিমানের ভেতরে। পুরো বিষয়টি আমরা পর্দায় তুলে আনতে চাই। আর সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজটি শুরু করেছি।’
ফাখরুল আরেফীন খান আরো বলেন, ‘এটা
আমাদের গড়াই ফিল্মসের প্রথম আন্তর্জাতিক কাজ। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বিপদে পড়া মানুষদের সাহায্য করার জন্যই জ্যাঁ কুয়ে বিমান ছিনতাই করেছিলেন। যদিও অফিসারদের চালাকির কারণে তিনি আটকা পড়েছিলেন সেদিন। কিন্তু ঠিকই তার শর্ত ধরে ২০ টন ওষুধ বাংলাদেশে এসেছিল। আশা করছি বাংলাদেশের এই পরম বন্ধুকে নিয়ে নির্মিত সিনেমার কাজ ভালোভাবেই শেষ করতে পারব।’
উল্লেখ্য, এ বছর ৯ মার্চ ফাখরুল আরেফীন খান ঢাকার একটি হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে ছবিটি সম্পর্কে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন। পরিচালক ফাখরুল আরেফীন খানের সর্বশেষ পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি ছিল গণ্ডি। ছবিটি মুক্তি পায় ২০২০ সালে। এর আগে ২০১৭ সালে নির্মাণ করেন ভুবন মাঝি।