বিদেশগামী কর্মী পরিবহন

পাঁচ দেশের বিশেষ ফ্লাইট চালু শনিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক

কভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে গত বুধবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য বাতিল করা হয় সব দেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। যার প্রভাব সরাসরি গিয়ে পড়েছে বিদেশগামী প্রায় ২৫ হাজার কর্মীর ওপর। অবস্থায় শনিবার থেকে প্রবাসী কর্মী অধ্যুষিত পাঁচ দেশে বিশেষ ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, আটকে পড়া বিদেশীগামী কর্মীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গতকাল দুপুরে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল বৈঠকে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার সিঙ্গাপুরে বিশেষ ফ্লাইট চালুর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। চাহিদাসাপেক্ষে ওই পাঁচটি দেশে ১০০ থেকে ১২০টি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল সভায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কর্মকর্তা, প্রবাসীকল্যাণ বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব . আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, বেসামরিক বিমান পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।

এদিকে বিশেষ ফ্লাইটগুলো কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পন্থা নির্ধারণে গতকাল রাত ৮টায় সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আরো একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে প্রবাসী কর্মীরা যাতে নিজ কর্মস্থলে যেতে না পেরে ভোগান্তির শিকার না হন, সেজন্য আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো চালু রাখার দাবি জানিয়ে ১৩ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে ট্রাভেল এজেন্সি মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) জনশক্তি রফতানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা) সেখানে বলা হয়, ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ আন্তর্জাতিক ভ্রমণ পথে সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এমন অবস্থায় যেসব প্রবাসী ছুটি নিয়ে জরুরি প্রয়োজনে বর্তমানে দেশে অবস্থান করছেন তাদের অনেকের ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হতে চলেছে। এছাড়া অনেক নতুন কর্মীও ভিসা পেয়ে কর্মস্থলে যাওয়ার অপেক্ষা করছেন। সময়মতো কর্মস্থলে না যেতে পারলে এসব কর্মীর অনেকের ভিসা বাতিল হয়ে যাবে।

পরবর্তী সময়ে ১৪ এপ্রিল বুধবার সমস্যা নিরসনে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সৌদি আরব, ইউএই, ওমান, কাতার সিঙ্গাপুরের জন্য স্পেশাল ফ্লাইট চালু করা হবে। বিষয়ে বিস্তারিত কর্মপন্থা ঠিক করবে বেবিচক। এছাড়া বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা নেগেটিভ সনদসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এয়ারপোর্টে আনার দায়িত্ব রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর। আর প্রবাসী কর্মীরা কেবল জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ মিশনের ছাড়পত্র গ্রহণ করে দেশে প্রযোজ্য কোয়ারেন্টিন শর্ত মেনে কভিড নেগেটিভ সনদ নিয়ে দেশে আসতে পারবেন।

প্রসঙ্গত, কভিড পরিস্থিতিতে এক সপ্তাহ ফ্লাইট বাতিলের কারণে বিদেশগামী প্রায় ২৫ হাজার কর্মী সংকটে পড়েছেন। প্রত্যেকটি কর্মীই উচ্চমূল্যে টিকিট ক্রয়ের পাশাপাশি কোয়ারেন্টিনের জন্য হোটেল বুকিং দিয়েছেন। হঠাৎ ফ্লাইট বন্ধ হওয়ায় আটকে পড়া কর্মীরা টিকিটের মূল্য কিংবা হোটেল বুকিংয়ের টাকা ফেরত নিয়েও রয়েছেন শঙ্কায়।

জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, হঠাৎ ফ্লাইট বন্ধ হওয়ায় নতুন কর্মীরা যেমন শঙ্কায় পড়েছেন, তেমনি বিপদে পড়েছেন ছুটিতে আসা কর্মীরাও। কারণ যারা ছুটিতে এসেছিলেন তাদের ভিসা, আকামার মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। ঠিক সময়ে ফিরতে না পারলে আকামার মেয়াদ নবায়ন করা নিয়েও সমস্যায় পড়বেন তারা। কারণ এক সপ্তাহ পর যদি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুও হয়, সেক্ষেত্রে নতুন করে টিকিট পাওয়াটাও সহজ নয়। কারণ করোনায় ফ্লাইট কম থাকায় আগে থেকেই টিকিটের সংকট রয়েছে। আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে বাতিল হওয়া প্রায় ২৫ হাজার বিদেশগামী কর্মীর টিকিট জোগাড় করা প্রায়ই কঠিন। আর যারা টিকিট পাবেন তাদেরও কিনতে হবে উচ্চমূল্যে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন