এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, সিলেট

সিলেট মুরারীচাঁদ (এমসি) কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর ঘটনার দুই মাসের অধিক সময় পর গতকাল সকালে সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আবুল কাশেমের আদালতে আটজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট প্রদান করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য।

অভিযুক্তরা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে ছয়জন ধর্ষণে সরাসরি অংশ নেন এবং তাদের সহযোগিতা করেন বাকি দুজন।

অভিযোগপত্রে সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্কর, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল মিসবাউল ইসলাম রাজন মিয়াকে সরাসরি ধর্ষণে সম্পৃক্ত এবং রবিউল ইসলাম মাহফুজুর রহমান মাসুমকে ধর্ষণের সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আটজনই বর্তমানে জেলহাজতে।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণের শিকার হন ওই নারী (২৫) সে রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে ছাত্রাবাসের একটি কক্ষ থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র উদ্ধার করে। পরদিন পুলিশ বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে মামলা করে। গতকাল অস্ত্র মামলারও অভিযোগপত্র দাখিল করে। এতে সাইফুর রহমান শাহ মাহবুবুর রহমান রনিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ওই রাতেই নির্যাতিতা তার স্বামীকে মারধর করে টাকা ছিনিয়ে নেয়ার আরেকটি মামলায় জেলহাজতে থাকা আটজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

সকালে অভিযোগপত্র প্রদানের পর দুপুরে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সিলেট মহানগর পুলিশ। সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনারের (দক্ষিণ) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) সুহেল রেজা তিন মামলায় পৃথক চার্জশিট প্রদানের কথা জানান।

এমসি কলেজের অবস্থান সিলেটের টিলাগড় এলাকায়। আর কলেজ ছাত্রাবাস বালুচর এলাকায়। ধর্ষণ কাণ্ডের আগেও টিলাগড় বালুচর এলাকায় নানা অপকর্ম চলে আসছিল। এর মধ্যে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে অগ্নিসংযোগ এবং ক্যাম্পাসের ভেতরে খাদিজা আক্তার নামে এক ছাত্রীকে কোপানোর ঘটনা দেশজুড়ে আলোচনা সমালোচনার জন্ম দেয়। এছাড়া এলাকায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি খুনোখুনি প্রায়ই লেগে থাকে। স্থানীয় দুই আওয়ামী লীগ নেতা ছাত্রলীগের এসব অপকর্মে মদদ দিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে ধর্ষণের ঘটনার পর অভিযুক্তদের মদদদাতা তাদের প্রশ্রয়দাতাদের খুঁজে বের করার দাবি ওঠে।

তবে তদন্তে রকম কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) সুহেল রেজা বলেন, আমরা ধর্ষণের ঘটনার তদন্ত করেছি। এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করেছি। এতে অন্য কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।

এর আগে গত ৩০ নভেম্বর ধর্ষণের ঘটনার ডিএনএ প্রতিবেদন আদালতের মাধ্যমে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে এসে পৌঁছে। অভিযোগপত্রে যে ছয়জন সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়েছে, তাদের ছয়জনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ ডিএনএ প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরান থানার পরিদর্শক ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য।

গত অক্টোবর দুদিনে গ্রেফতার আটজনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহের পর পাঠানো হয় ঢাকার ল্যাবে।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের বালুচর এলাকার এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন ওই তরুণী (২৫) করোনার কারণে বন্ধ থাকা ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন